মঙ্গলবার ● ২৪ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি সময়ের ন্যায্য দাবি
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি সময়ের ন্যায্য দাবি
অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান :: (১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.১০মিঃ) শিক্ষা ব্যবস্থার নীতিগত এবং পদ্ধতিগত দুটো দিকই গুরুত্বপূর্ণ৷ একটি জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে তুলতে হলে শিক্ষার বিষয়বস্তু, সিলেবাস যেমন বিজ্ঞানসম্মত হওয়া প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন দক্ষ ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন শিক্ষক৷ কারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ দরিদ্র ছাত্র, দুর্দশাগ্রস্ত শিক্ষক আর দুর্বল অবকাঠামোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর যাই হোক মানসম্মত শিক্ষা সম্ভব নয়৷ এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে কাজের সাথে মজুরী সম্পর্কের নিশ্চয়তার বিধান রাখা হয়েছে৷ সংবিধানের সেই ১৫(খ) ধারাটি হল-কর্মের অধিকার অর্থাত্ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসংগত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার৷ অথচ এই ধারাটির প্রয়োগ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ঘটছে না৷
আমাদের দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার (নিম্ন মাধ্যমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসা) ৯৮ শতাংশ বেসরকারি ব্যবস্থাপনা নির্ভর৷ মাধ্যমিকস্তরে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৮ হাজারের অধিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছে৷ যা এই স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক-চতুর্থাংশ৷ এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী ২০ লক্ষের অধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত৷ পরিতাপের বিষয়, দীর্ঘ ১০-১৫ বছর বিনা বেতনে এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন৷ এমতাবস্থায় তাঁরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে কোন না কোন পেশায় নিয়োজিত হতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষাদান কঠিন হয়ে পড়েছে৷ অবিলম্বে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা না হলে একে একে এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে৷ তেমনটি ঘটলে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে৷
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই নিয়ম নীতিতে পরিচালিত হয়৷ একই কারিকুলাম, সিলেবাস ও প্রশ্নপদ্ধতি অনুসরণ করে৷ শিক্ষার্থীরা বোর্ড থেকে একই মানের সার্টিফিকেট অর্জন করে৷ যে কারণে স্বীকৃতির সময় থেকে শিক্ষক কর্মচারীরা বেতন পাওয়ার কথা৷ অথচ নির্মম পরিহাস হল, তাদের কোন বেতন নেই৷ কবে যে বেতন হবে তাও অজানা৷ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত তাদের তাড়িয়ে ফিরছে৷ দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে ২১ লাখ চাকুরিজীবীর বেতন বেড়েছে৷ প্রতি গ্রেডে বেতন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ সেই সাথে যোগ হয়েছে বৈশাখী ভাতা৷ বেতন বৃদ্ধির এই প্রেক্ষাপট স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের দুঃখ-বঞ্চনা আরো বাড়িয়েছে৷
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে নানাবিধ শর্ত পূরণ করতে হয়৷ এর ভেতর প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ নিজস্ব জমির ব্যবস্থা, চারিদিকে নির্দিষ্ট দূরত্ব অবধি সমজাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি না থাকা, সনি্নহিত এলাকার জনসংখ্যার হিসাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য৷ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ব্যাংকে সংরক্ষিত তহবিলের হিসাব খুলে সেখানে বড় অংকের টাকা গচ্ছিত রাখতে হয়৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণের পর শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর পর প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর শিক্ষাবোর্ড ও সংশ্লিষ্ট দফতরে পরিদর্শনের জন্য আবেদন করা হয়৷ সে পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শক নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন৷ অধিকাংশ শর্ত পূরণ হলে পাঠদানের অনুমতি মিলে৷ সাধারণত এই অনুমতিকাল তিন বছর৷ অনুমতিপত্রে কতিপয় শর্ত পূরণের তাগিদ থাকতে পারে৷ যেমন-কোন শিক্ষকের বিএড না থাকলে সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে বলা হয়৷ পাঠদানের অনুমতিকালে সরকারী বেতন-ভাতা না চাওয়ার অঙ্গীকার করা লাগে৷ প্রাথমিক অনুমতিকাল সফলভাবে অতিবাহিত হলে আবারও পরিদর্শনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি মিলে৷ আর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এমপিওভুক্ত হবে সেটাই রীতি৷ নতুন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানকালে শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রাথমিক অনুমোদনকালের তিনটি বছর বেতন-ভাতা না পাওয়ার মানসিকতা নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন৷ আর আশায় থাকেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি পেলে এমপিও মিলবে৷ তখন পেশাগত জীবনের অনিশ্চয়তা দূর হবে৷ চলতি সংকটের আগে স্বীকৃতির সময় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও হয়ে এসেছে৷ আর যদিবা স্বীকৃতির কয়েক মাস পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে সেক্ষেত্রে এরিয়ার সহ বেতন পাওয়া গেছে৷
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর পার করলেও বিগত এক দশকের অধিককাল যাবত্ আর এমপিওভুক্ত হচ্ছে না৷ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এ সব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নিয়ে ঘোরতর সংশয় দেখা দিয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে যেন কোন মাথাব্যথা নেই৷ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শেষ মেয়াদে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তি আশা করেছিল; কিন্তু সেটা ঘটেনি৷ এর পর তারা দুই বছর মেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ এ সরকারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে ফুসরত পায়নি৷ বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রতিবছর এমপিও দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল৷ কিন্তু ২০১০ সালে সংকীর্ণ কোটারি দৃষ্টিকোণ থেকে মাত্র একবার ১ হাজার ৬২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে৷ এর পর আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি খাতে বাজেট রাখা হয়নি৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাত্সরিক রুটিন ওয়ার্ক হওয়ার কথা৷ সংসদ সদস্যগণও নিয়মিত সংসদ অধিবেশনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তাগিদ দেন৷ গত বছর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বৈঠকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছিলেন৷ অথচ অর্থ না থাকার কথিত অজুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে৷ শিক্ষা খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ না রাখলে অর্থ সংকট দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক৷ বিগত বছরগুলোতে আমরা শিক্ষা খাতে ক্রমহ্রাসমান বরাদ্দ দেখতে পাই৷ এটা স্পষ্ট, বাজেটের তুলনায় শিক্ষায় বরাদ্দ ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে৷
অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার শিক্ষক-কর্মচারীরা অগত্যা অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন৷ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের ব্যানারে ২০১২ সালে ছয় মাস ধরে চলা আন্দোলনের সময় শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গ শিক্ষক নেতাদের ৫ বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ সর্বশেষ বৈঠকে এমপিওভু্িতর বিষয়ে শিক্ষা সচিবের সুখবর জানানোর কথা ছিল৷ কিন্তু তিনি কোন কিছু করতে না পারায় শিক্ষক-কর্মচারীরা আবারও ওই বছর ১ অক্টোবর থেকে লাগাতার আন্দোলনে নামেন৷ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে এটাই নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল দাবি৷ এ দাবির পরিপূরক হিসেবে অবিলম্বে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ইনডেক্স নম্বর প্রদান, স্বীকৃতির সময় থেকে চাকরির বয়স গণনা, এমপিও প্রদানের যাবতীয় অনিয়ম, পক্ষপাত-ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ; এসব দাবি উঠে এসেছে৷ সর্বশেষ ওই আন্দোলনের চতুর্থ দিনে অতি উত্সাহী পুলিশ শিক্ষক-কর্মচারীদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে৷ এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষক কর্মচারী মত আমিও আহত হয়েছিলাম৷ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দুই-এক দিনের ভেতর বৈঠকের প্রস্তাব এলে কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়৷ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে এমপিওভুক্তির সুরাহা হবে৷ দুঃখের বিষয়, এরপর আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়নি৷ শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করলে শিক্ষা খাতে ঘাটতি বাজেটের কথা বলে আমাদের এমপিওভুক্তির অধিকার পাস কাটানোর প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়৷ আমাদের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দ কম হলে কম বেতন নেয়ারও প্রস্তাব দেয়া হয়৷ এমনটিও জানানো হয়, এ বছর ৫০% বেতন দিন৷ পরবর্তী বছর বেতন ১০০% এ উন্নীত করুন৷ কিন্তু সরকারের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া চালু হয়নি৷ যার ফলে অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে বাধ্য হতে হচ্ছে৷ সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর শুরু হয়ে দীর্ঘ ২৮ দিন দিন রাত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করে আমাদের সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি৷
উদ্বেগের বিষয় হল, অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ করতে জনসংখ্যার নিরিখে বাড়তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবলিক পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করা কিংবা স্বল্পসংখ্যক শিক্ষাথর্ী রয়েছে এমন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ টানা হয়৷ প্রকারান্তরে তাদের ধারণা, এমপিও প্রত্যাশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্নমানের৷ এক্ষেত্রে বলা দরকার, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি মেয়াদ থাকে ২-৩ বছর৷ এরপর প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মান মূল্যায়ন করে তবেই আবার স্বীকৃতি নবায়ন করা হয়৷ এখন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল যদি একাদিক্রমে খারাপ হতে থাকে কিংবা শিক্ষকের সংখ্যা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছাপিয়ে যায় তবে ওই ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি আটকে দেবার ভিতর দিয়েই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব৷ কোন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার মতো বাস্তবতা না থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পার্শবর্তী বড় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে/প্রতিষ্ঠানসমূহে অঙ্গীভূত করলে তাতে কেউ আপত্তি করবে না৷ বিনা বেতনে অতিকষ্টে বছরের পর বছর সফলতার সঙ্গে হাল ধরে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষার মান যে আরো বাড়বে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
সরকারের নির্বাচনী একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রতিটি পরিবারে অন্ততঃ একজন সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করবে৷ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা নিজ যোগ্যতা বলে কর্ম সৃজন করে নিয়েছেন৷ ইতোমধ্যে তারা নানা ধরণের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন৷ এখন সরকারের উচিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে চাকরি কার্যকর করা৷
বিষ্ময়ের ব্যাপার হল, এমপিওভুক্তি খাতে অর্থের অভাবের কথা বলা হলেও শিক্ষার নানান ক্ষেত্রে বড় ধরণের বরাদ্দ থেমে নেই৷ সরকার ২৬ হাজার রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছে৷ ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ স্নাতক স্তর পর্যন্ত উপবৃত্তি এবং অবৈতনিক শিক্ষা কার্যক্রম চলছে৷ অথচ যারা বিনা বেতনে ১ যুগের অধিককাল চাকরি করছেন, তাদের ব্যাপারে সরকারের কোন দৃশ্যমান ভাবনা নেই৷ একদিকে বিনা বেতন, অন্যদিকে অসম্মানের দুঃসহ এক জীবন৷ পরিবারে করুণার পাত্র, সমাজে উপেক্ষিত, জীবন চলার পথে পদে পদে বিড়ম্বিত; এরকম দুর্দশা দেখে আমাদের সন্তানেরা আর যাই হোক জীবনে শিক্ষক হতে চাইবে না৷ অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে দ্বিধাদ্বন্দের এই অনিশ্চিত জীবন ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছেন৷ কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার দায়বদ্ধতা, ম্যানেজিং কমিটি এবং অভিভাবকদের আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে বের হয়েও আসতে পারছেন না৷ স্থানীয় জনগণও অচিরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হবে এই সান্তনা দিয়ে থাকেন৷
২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক পরিপত্র জারি করা হয়৷ পরিপত্র বলা হয়-উল্লেখিত তারিখের পর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/নতুন শ্রেণি শাখা/বিভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা খোলার অনুমতি/পাঠদানের অনুমতি/একাডেমিক স্বীকৃতি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন দিন শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দাবি করতে পারবে না৷ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে মর্মে-প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা পরিষদ কর্তুক ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিটপূর্বক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মুচলেকা জমা দিয়ে এসব শর্তে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে৷ এই পরিপত্র জারি প্রকারান্তরে উল্লেখিত তারিখের পূর্বের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির দাবি প্রতিষ্ঠিত করে৷
মাধ্যমিক স্তরের মুমুর্ষপ্রায় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব রক্ষা এবং অধিকারবঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিতকরণ ও ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য আসন্ন বাজেটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নিমিত্তে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দাবি করছি৷
লেখক : বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় সংগঠন ‘নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন’ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক৷ তারিখ : ২৪ মে ২০১৬৷ ফোন : ০১৭১৩-৬৪১৪৩৭৷