মঙ্গলবার ● ২৪ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » জনকল্যাণে শব্দদূষণ, নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার প্রয়োজন
জনকল্যাণে শব্দদূষণ, নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার প্রয়োজন
পলাশ বড়ুয়া :: (১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১০মি) অতিরিক্ত শব্দ মানব স্বাস্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর৷ কিন্তু দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ যেন লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে৷ শব্দদূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নেই তেমন কোন উদ্যোগ৷ দেশের সব শহর, জেলা সহ এমনকি বাদ যাচ্ছে না উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট স্টেশন গুলোতেও৷ বিভিন্ন ভাবে শব্দ দূষনের মাত্রা বাড়ছেই৷ সাধারণত একজন সুস্থ্য মানুষের শব্দের সহনীয় মাত্রা ৫০ ডেসিবল৷ এর অতিরিক্ত শব্দ মানব স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর৷ মানব স্বাস্থ্যের জন্য শব্দ দূষণ যেমন ঘাতক তেমনি ভাবে মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণে পরিবেশের ভারসাম্যেও বিঘ্ন ঘটছে৷
উখিয়ায় উপজেলায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দিনের বেলায় পুরো ওয়ার্ড কিংবা ইউনিয়নে মাইকিং কিংবা প্রচারণা চালালেও সান্ধ্যকালীন জনব্যসত্মতম স্টেশন উখিয়া সদর, কোটবাজার, মরিচ্যা, সোনারপাড়া, পালংখালী, বালুখালী, ভালুকিয়াপালং সহ প্রতিটি স্টেশনে একযোগে গাড়ী বহরে শতাধিক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার মাইকিংয়ের মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ৷ এছাড়াও বিভিন্ন ট্রাফিক পয়েন্ট, শিল্প এলাকা, বাণিজ্যিক, আবাসিক এলাকায় মাত্রা ছাড়িয়ে শব্দ দূষণ হচ্ছে৷ উদাহরণ স্বরূপ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশ্ববর্তী এলাকার জন্য সহনশীল মাত্রা ৫০ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হলেও সেখানে শব্দদূষণের মাত্রা ৭০ ডেসিবল৷ শহরে শব্দ দূষণের প্রধান উত্স যানবাহনের হর্ণের অতিরিক্ত শব্দ৷ এছাড়া যানবাহনে ব্যবহৃত হাইড্রোলিক হর্ণ অতিরিক্ত শব্দদূষণ করে৷ শুধু যানবাহনের হর্ণ নয়, বিভিন্ন কারখানা, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি, রাস্তার পাশে দোকান গুলোতে উচ্চস্বরে চালানো অডিও-ভিডিও, ইট ভাঙ্গার মেশিন, নির্বাচনী প্রচার মাইকিং, অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত লাউড স্পিকার সহ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের আওয়াজ ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিত্যদিন শব্দ দূষণের মাত্রা ছড়াচ্ছে৷ শব্দদূষণের সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করায় এর শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ গুলো৷ নিয়মিত শব্দদূষণের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি ক্ষয় ও কাজের আগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি অসহিষ্ণুতা বাড়ে৷ এছাড়াও মাথা ব্যাথা, ঘুমের ব্যাঘাত মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কাজে মনোসংযোগের ব্যাঘাত ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়৷ যা মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর মারত্মক প্রভাব ফেলে৷ সেই সাথে শব্দদূষণের কারণে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা কমে যায়৷ হঠাত্ উচ্চ শব্দের কারণে হৃদরোগীদের তাত্ক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৬০ ডেসিবলের শব্দ মানুষের সাময়িক বধিরতা তৈরী করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবল শব্দের মধ্যে আধাঘন্টা থাকতে পুরোপুরি বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়৷
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ৷ এর জন্য অতিরিক্ত শব্দ মানব স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিকর দিকগুলো প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে জনসাধারণকে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করা৷ এর পাশাপাশি শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে৷ বিধিমালা অনুযায়ী শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোন উন্নতি কিংবা সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ৷
সর্বোপরি শব্দ দূষণ বন্ধে শব্দ সচেতনতা সৃষ্টি করতে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে জন সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং শব্দ দূষণ বিধিমালার বাসত্মবায়ন করতে হবে৷
লেখক : সম্পাদক, সিএসবি২৪ ডটকম,