সোমবার ● ৩০ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » বিবিধ » আমরা অনুমোদন দিই, অনুমোদন নিই না : রাঙামাটি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার
আমরা অনুমোদন দিই, অনুমোদন নিই না : রাঙামাটি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.২০মিঃ) পাহাড়ের মালিক কি আপনি ? আমরা সরকারী লোক, আমরা কোথাকার পাহাড় কাটবো না কাটবো, সেটা কাউকে জানিয়ে করবোনা ৷ আপনি জানার কে ? কথাগুলো বলছিলেন রাঙামাটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল এস এম আনিছুর রহমান পিএসসি ৷
রাঙামাটি রেডিও ষ্টেশন এলাকায় পুলিশ বক্স সংলগ্ন বিশাল পাহাড় ভল্ডোজার দিয়ে উজার করে ১৯ ইসিবি’র ২টি ট্রাকসহ ৯টি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিজিবি’র জায়গা ভরাট করার লক্ষে ৷ ট্রাকগুলোতে ঠিকমত লাগানো হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ষ্টিকারও ৷ পরিবেশের ক্ষতি করে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়ার অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার পোয়া কালামের কেরানী রাঙামাটি জেলা বিএনপি’র নেতা হাত কাটা আজিম উদ্দিন ভুট্টো দম্ভের সুরে বলেন, আপনি বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডারের কাছে জিজ্ঞেস করেন ৷ ট্রাক সিটি কর্পোরেশনের কিনা জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের ষ্টিকার লাগানো ট্রাকের ড্রাইভার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ট্রাক গুলি একটিও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নয় ৷ এগুলো মালিক মগাইছড়ি এলাকার,ভাড়ায় চালিত ট্রাক ৷ আপনি বিজিবি’তে কথা বলেন ৷
জানা গেছে উলেস্নখিত পাহাড়টির মালিক রাঙামাটি পৌর সভার অবসর প্রাপ্ত প্রধান সহকারী অনুরুদ্ধ চাকমা ৷
উল্লেখিত পাহাড় কেটে মাটি নেওয়ার যথাযত কতৃপক্ষের অনুমোদনের বিষয়ে রাঙামাটি বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল এস এম আনিছুর রহমান পিএসসি’র মুঠোফোন ০১৭৬৯৬০১২০০-তে ফোন করে জানতে চাইলে সেক্টর কমান্ডার সেই পাকিস্থানী আর্মি স্টাইলে ধমক দিয়ে বলেন, পাহাড়ের মালিক কি আপনি ? আমরা সরকারী লোক, আমরা কোথাকার পাহাড় কাটবো না কাটবো, সেটা কাউকে জানিয়ে করবোনা ৷ আপনি জানার কে ? বলেন কেন জানতে চাচ্ছেন ? প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করলে, প্রতিবেদক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পাহাড় কাটা দেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ তাই…তিনি প্রতিবেদকের কথা না শুনে রাগান্বিত সুরে বলেন , এখানকার কোন কিছু করার অনুমোদন আমরা দিই, আমরা কেন অনুমোদন নেবো ? আমরা অনুমোদন দিই, অনুমোদন নিই না, আপনি চুপ করেন, বেশী কথা বলবেন না বলে মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ৷
রাঙামাটি রেডিও ষ্টেশনের পাহাড় কাটার রাঙামাটি বিজিবি’র অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন বলেন, রেডিও ষ্টেশন এলাকাটি আমার সদর উপজেলাধীন এর আগেও একবার পাহাড়টির মালিক অনুরুদ্ধ চাকমা পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রয়ের চেষ্টা করেছিল, আমি খবর পেয়ে সাথে সাথে এই কাজটি বন্ধ করে দিয়েছিলাম ৷ কিন্তু পাহাড় কাটার ব্যাপারে বিজিবি’র মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়া আইনগত কোন অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই, প্রচলিত আইনে কেউ পাহাড় কাটার আবেদন করলেও সেটা সাথে সাথে খারিজ হয়ে যাবে ৷ পরিবেশের ক্ষতি সাধন বা পাহাড় কাটার কোন আইনগত সুযোগ নেই ৷
রাঙামাটি বিজিবি’র পাহাড় কাটার বিষয়টি জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সাথে পাহাড় কাটা নিয়ে কেউ কথা বলেন নাই, কোন আবেদন পত্রও জমা নাই,আমি এ ব্যাপারে কিছইু জানিনা, আমাদের কাছে পাহাড় কাটার কোন অনুমোদন নেননি ৷
রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটার ফলে ধংস হয়ে গেছে পাহাড়ের প্রকৃতিক ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য। পরিবেশের ভারসাম্যর প্রভাবের কারণে আইনগত ও সরকারীভাবেই পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ, এটা প্রত্যেক সাধারন নাগরিক জানেন ৷ আর সচেতন শিক্ষিত, সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানেন তো বটেই ৷ কিন্তু রাঙামাটি বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডারের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভুমিকায় আর অসৌজন্য ও রাগান্বিত আচরণ পরিষ্কার করে দেয় এখানকার সাধারন মানুষের সাথে তিনি কি ধরনের ব্যবহার করেন, আর দেশের ভৌগলিক পরিবেশ রক্ষার্থে কতটুকু সচেতন তিনি ! কতটুকুই বা সম্মান রয়েছে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি ৷