মঙ্গলবার ● ৩১ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটিতে নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল
রাঙামাটিতে নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৩০মিঃ) তৃতীয় ধাপের নির্বাচন ২৩শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বড় দলগুলোর দাবির মুখে পিছিয়ে যায় রাঙামাটি জেলার ১০ উপজেলার নির্বাচন। এইসব ইউপি’তে নির্বচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সর্বশেষ ৬ষ্ঠ ধাপে আগামী ৪ জুন। রাঙামাটি জেলার ৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনী মাঠে আতংকে ভূগছে বড় দুটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা। শেষ মুহুর্তে যে কোন সময় হয়তো নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারে এমনটাই শোনা যাচ্ছে । তাই নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একদফা ভোট পেছানোর পরেও বড় ২টি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সবগুলো ইউপি’তে প্রার্থী দিতে পারেনি। এছাড়া যে সব কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে সেই সব কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রের প্রার্থীরা নিজেদের ইউনিয়ন ছেড়ে রাঙামাটি শহরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। আবার যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের অভিযোগ, ভয় ভীতির কারণে তারা এলাকায় যেতে পারছেন না। অপরদিকে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের না পেয়ে তাদের পরিবার পরিজনকে নানাভাবে হুমকী ও অস্ত্রের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এর ভিতর কয়েকজন প্রার্থীকে গুম করে তাদের পরিবার পরিজনদের ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতেও বাধ্য করার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দ্রুতই নির্বাচন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে বারবার তাগিদ দিলেও কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন এমনই অভিযোগ রয়েছে।শেষ মুহুর্তে হয়তো নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারেন প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল।
অন্যদিকে পাহাড়ের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিএনপি চাপে আছে দুমুখী। এক দিকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে নির্বাচনে সব কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি। আর যে সকল কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছেন সে সকল কেন্দ্রের আওয়ামীলীগ ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পিসিজেএসএস,ইউপিডিএফ ও সংস্কারপন্থী পিসিজেএসএস এর চাপে পিষ্ট হয়ে রয়েছে।
এবারও আতঙ্কমুক্ত হয়নি নির্বাচনের মাঠ। তৈরী হয়নি লেভেল প্লালিং ফিল্ড। এরইমধ্যে নানিয়ারচর, বাঘাইছড়িসহ কয়েকটি ইউনিয়নে সন্ত্রাসী ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্ককিত রয়েছে।
রাঙামাটি জেলার ৪৯টি ইউনিয়নের সবগুলোতে কেবল আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল কয়েকটি স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছে। এরইমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৪৪টি, বিএনপি ২২টি এবং জাতীয় পার্টি ৪টিতে প্রার্থী দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। বড় ২টি দলের একই অভিযোগ, ভয়-ভীতির কারণে তাদের প্রার্থীরা এলাকায় যেতে পারছেন না। তার মধ্যে মামলার কারণে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থাগিত করে দিয়েছে আদালত।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জায়গাতে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়ে গেছে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন,পিসিজেএসএস, ইউপিডিএফ ও সংস্কার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা আওয়ামীলীগের দলীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য প্রার্থীদের প্রাণ নাশের হুমকী দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের হুমকীর কারণে সকল নির্বাচনী ইউনিয়ন প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে। যে সকল ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ৯৮ জন মহিলা ও পুরুষ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গেছে। এতে প্রমানিত হয় যে বর্তমান পরিস্থিতে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়। ইতিপূর্বে স্থানীয় জাতীয় রাজনৈতিক দল যা অশংকা প্রকাশ করে ছিলো তাই ৮০% সত্য প্রমানিত হয়েছে। একটি সূত্র জানায় আগামী ১ জুনের মধ্যে যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হবে। ঘোষনা দিতে পারে ইউপি নির্বাচন বয়কটের।
সুত্র জানায় রাঙামাটি জেলা বিএনপি’র একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, আইনের শাসন না থাকাতে বিএনপি’র প্রার্থীদেরকে হুমকি দেয়ার ফলে তারা প্রতিদন্দ্বিতা করতে পারছেনা। দীর্ঘ দিন ধরে ইউপি নির্বাচনের আগে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারে অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে আসছিলো স্থানীয় জাতীয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের অভিযোগ এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপই নেয়নি। তাই তাদের দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হতাশ।
এ ব্যাপারে আঞ্চলিক দলগুলোর বক্তব্য তাদের পক্ষ থেকে এধরনের চাপ বা হুমকি আজ পর্যন্ত কাউকে দেয়া হয়নি।
রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান গণমাধ্যমে বলেছেন, নির্বাচনে কেউ যাতে কোন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে না পারে, কোন রকমের অবৈধ কার্যক্রম করতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
এদিকে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে ইউপি নির্বাচনী উপজেলা গুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠাতে শুরু করেছে।
একদিকে স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং জেলার অভিজ্ঞ মহলের ধারনা শেষ পর্যন্ত জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দীতার থাকবে কি না।
এখন কেবল সে বিষয়টি দেখার পালা।