সোমবার ● ৬ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » ঝিনাইদহের ৪৩ জন নারীর মাছ চাষ যুদ্ধ
ঝিনাইদহের ৪৩ জন নারীর মাছ চাষ যুদ্ধ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২৩ জ্যৈণ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.৫৫মিঃ) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলাকান্দর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে শিরিষকাঠ খাল ৷ এ খালে বছরে পানি থাকে ৬ মাস ৷ গ্রামটি দিয়ে অতিক্রম করার সময় চোখে পড়বে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য ৷ গ্রামের ৪৩ জন নারী মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে ৷
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের ৪৩ জন নারী নিজেরাই লেগে পড়েছেন মাছ চাষে ৷ স্বপ্ন দেখেন তারা নিজেরা মাছ চাষ করে খাবেন এবং অতিরিক্ত মাছ বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ করবেন ৷ গত ৪ বছর ধরে শিরিষকাঠ খালে এভাবে মাছ চাষ করেন৷ নিজেরাই মাছের খাবার দেওয়া, দেখা শোনা এমনকি মাছ ধরার কাজটি নিজেরাই করেন ৷ ইতিমধ্যে তাদের গড়ে তোলা দোয়েল ও কোয়েল সমবায় সমিতিতে মাছ বিক্রির কয়েক লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেছেন ৷
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার নিয়ামতপুর ইউণিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে শিরিষকাঠ খাল৷ খালটির সঙ্গে মলি্লকপুর, কামালহাট, দৌলতপুর, বলরামপুর, মহেশ্বরচাদা, হরিগোবিন্দপুর গ্রামের মাঝখানের বিস্তার মাঠ ও টায়াখালী বিলের সাঙ্গে রয়েছে খালের সংযোগ৷ আর বলাকান্দর গ্রামের মধ্যে দিয়ে যে অংশ গিয়েছে তার নাম শিরিষকাঠ খাল ৷
আরও জানা যায়, বলাকান্দর গ্রামের ২টি নারী সমিতি আছে ৷ একটির নাম দোয়েল মহিলা সমবায় সমিতি অপরটি কোয়েল মহিলা সমবায় সমিতি ৷ দুটি সমিতির প্রায় ৪৩জন সদস্য রয়েছে ৷ তারা প্রতি সপ্তাহে চাদা জমা দিয়ে থাকেন ৷ তারা একদিন উদ্যোগ হন কিভাবে শিরিষকাঠ খালে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায় ৷ উভয় সমিতির সদস্যরা একদিন মিটিংয়ে বসেন ৷ তার পর কোন পুরুষের সহযোগিতা ছাড়াই তারা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালের দুপাড় পরিস্কার পরিচ্ছন করেন ৷
এর পর তার প্রাথমিক অবস্থায় বেশ কিছু মাছের পোনা ছাড়েন পরীক্ষামুলক ভাবে ৷ সেটা ২০১৩ সালের কথা ৷ সে বার তারা যে টাকার মাছ ছেড়েছিল তার চেয়ে প্রায় ৩ গুন টাকার মাছ আহরন করে ৷ এর পর তারা আর থেমে থাকেনি ৷ প্রতিবছর গ্রামের খালে তারা রুই, কাতল, সিলভারকাপ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ শুরু করে ৷ গত ২০১৫ সালে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন ৷ এবার ২০১৬ সালেও লক্ষাধিক টাকার মাছ বিক্রি করেছেন ৷
দোয়ের মহিলা সমিতির সভানেত্রী হাজেরা খাতুন জানান, তারা প্রায় ৪ বছর ধরে এই খালে মাছ চাষ করছেন ৷ তিনি জানান, প্রথমে একটি সমস্যা হচ্ছিল মেয়েরা খালে নেমে মাছ চাষ করবে ? পরে যখন সকল সদস্যই চাষকৃত মাছ হাতে পেলো এবং বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় হলো তখন থেকে উদ্যোম আরো বেড়ে গেছে ৷
কোয়েল মহিলা সমিতির সভানেত্রী আজিজা বেগম জানান, তাদের খুব ভাল লাগছে ৷ গ্রামের মধ্যে প্রবাহিত পরিত্যক্ত খালকে তারা পরিস্কার করে মাছ চাষ করছে ৷ আর যারা মাছ চাষ করছে তারা সকলেই নারী ৷ বাড়ির অন্য কাজ শেষ করে এই খালে মাছের পেছনে তারা সময় দিচ্ছে ৷
তিনি আরো জানান, শিরিষকাঠ খালে বছরে ৬ মাস পানি থাকে ৷ যদি সরকার এটিকে খনন করে সংস্কার করে ১২মাস পানি থাকার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে তারা এখানে ১২মাস মাছ চাষ করতে পারতো ৷
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দ: শরিফা আক্তার জানান, তিনি নিজে গ্রামে মাঝে মাঝে যান এবং খালে যে সব নারীরা মাছ চাষ করেন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে ৷
তিনি আরো জানান, এবার মত্স অধিদপ্তরের সহযোগিতায় শিরিষকাঠ খালে বেশ কিছু মাছের পোনা দেওয়া হয়৷ যার মালিক পরবর্তীতে দুটি সমিতির মহিলা সদস্যরাই পান৷ মাছ আহরনের দিন তিনি তাদের সাথেই ছিলেন ৷