শুক্রবার ● ১০ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে খড়ের পালায় আগুন মারপিটে আহত ৩
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে খড়ের পালায় আগুন মারপিটে আহত ৩
নাজিম হাসান, রাজশাহী :: রাজশাহীর তানোরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বিএনপি নেতা মোজাম ও তার বাহিনী নিজের খড়ের পালায় আগুন ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারপিট করে ৩ জনকে আহত করেছে ৷ আহতরা হলেন, তানোর পৌর এলাকার হরিদেবপুর গ্রামের মৃত আসির মন্ডলের পুত্র নাছির আলী(৫৫) ও তার পুত্র আশরাফুল এবং নিজ লোকের দ্বারা আহত হয়েছেন মোজাম গং ৷ তারা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সাধীন রয়েছে৷ তানোর পৌর এলাকার হরিদেবপুর গ্রামে বুধবার রাতে এ’শার নামাজের দিকে খড়ের পালায় আগুন এবং পরদিন বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টার দিকে এ মারপিটের ঘটনাটি ঘটে ৷ সাড়ে ১২টার দিকে আহত নাছির আলী ও তার পুত্র আশরাফুলকে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে মেডিকেলে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন ৷ এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে ৷ সেখান গিয়ে জানা যায়, বুধবার এ’শার নামাজের সময় পৌর এলাকার হরিদেবপুর গ্রামের মোজামের খড়ের পালায় প্রতিপক্ষ নাছির জলিলকে ফাঁসাতে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দেয় ৷ আগুন নিভাতে গেলে মোজাম বাহিনীর হরিদেবপুর গ্রামের ইসমাইলের পুত্র মিলন ও তোফাজ্জলের পুত্র রাজ, সোহাগ আশরাফুলকে হাসুয়া দিয়ে ডান হাতে কোপ দেয় ৷ জীবন বাঁচাতে আশরাফুল দৌড়ে বাড়িতে আসেন ৷ চলে উত্তেজনা ৷ এ রেসেই বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে মোজাম বাড়ির খৈলানে মটর সাইকেল রেখে নাছিরের বাড়িতে তার লোকজন নিয়ে হামলা চালায় এবং লাঠি, হাসুয়া দিয়ে এলোপাথারি ভাবে নাছির ও তার ছেলেকে আঘাত করে ৷ এ আঘাতেই নাছিরের দুটি দাঁত, হাত এবং মাথা ব্যাপক গর্ত হয়ে পড়ে ৷ তার ছেলেরও মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে এবং ডান হাত হাসুয়ার আঘাতে কেটে যায়৷ চিকিত্সার জন্যে বাইরে বের হতে দেননি মোজাম, তার ভাই তোফাজ্জুল, হরিদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেখা বেগম সহ তার লোক জনেরা পুরো বাড়ি ঘিরে রাখে ৷ পরে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে৷ ঘটনাস্থলেই থানার ডাইভার হাফিজুর রহমান মোজামের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে উল্টো নাছিরের পরিবারকে গালমন্দ করেন ৷ মোজাম বাহিনী নাছিরের ৯০ বছরের বৃদ্ধা মা সোনাভানকেও লাঠি দিয়ে পায়ে আঘাত করেন ৷ হাও মাও করে কেঁদে বৃদ্ধা সোনাভান বলেন, আমি একজন বয়স্ক মানুষ রাস্তা দিয়ে আসার পথে মোজাম সিরাজের স্ত্রী ও রেখা আমাকেও মারধর করেন ৷ এ বিচার আমি কাকে দেব ৷ এর আগেও তারা আমাকে মারধর করেছেন৷ একই গ্রামের জোনাব আলী জানান, সাড়ে ১১টার দিকে মোজাম গাড়ি রেখে তার ভাই ভাতিজা-ভাতিজীদের নিয়ে নাছিরের বাড়িতে হামলা চালায় ৷ এমনকি দরজার খিল ভেঙ্গে বাড়িতে ঢুকে এলোপাথারি মারপিট শুরু করে ৷ একজন কলেজ শিক্ষক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিভাবে রোজার দিনে এমন নেককার জনক কাজ করতে পারে ৷ নাছিরের বোন লতা বেগম ৷ বিয়ে হয়েছে গোকুল গ্রামে ৷ কিস্তির টাকা ধার নেবার জন্যে মায়ের বাড়িতে আসে ৷ তাকেও মারপিট ও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে ৷ সেখানে থাকা অবস্থায় ইসমাইলের পুত্র মিলন পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে নাছিরের পরিবারের মেয়েদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করেন৷ এলাকাবাসী জানাই, তাদের শত্রুতা ৯০ দশক থেকে চলে আসছে ৷ এমনকি মোজামরা ধণাঢ্য হওয়ায় একাধিক মামলা করে জেল পর্যন্তও খাটিয়েছেন নাছির ও জলিলের পরিবারকে ৷ মারপিটের এক পর্যায়ে রেখা নাছিরের পরিবারের মেয়েদেরকে মারতে গিয়ে লাঠির বাড়ি মোজামের মাথায় এসে লাগে ৷ এতেই মোজাম আহত হন৷ মোজাম ওই এলাকার বিএনপির দাপুটে নেতা ৷ তাদের পরিবারের কাছে সবাই এক প্রকার জিম্মি ৷ তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না ৷ নাছিরের ভাই ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি জলিল জানান, আমি কাজের জন্যে নারায়নপুর এসেছি ৷ কিন্তু এমন ভাবে আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে বাড়িতে গেলেই মেরে ফেলবে ৷ এ ভয়ে বাড়িতে যেতে পারছি না ৷ মোজাম এক সময়ের অত্যন্ত দাপুটে বিএনপি তানোর পৌর সভাপতি মৃত খলিলের ভাই ৷ দীর্ঘ কয়েক বছর আগে মারা গেলেও তার নামে রয়েছে একটি গভীর নলকূপ ৷ মিলন জানান, নাছিরের পুত্র আশরাফুলকে না মেরে ফেলা পর্যন্ত আমরা স্বস্থিতে থাকব না ৷ যেভাবেই হোক তাদেরকে শেষ করা হবে ৷ গ্রামবাসী আরো জানাই, আমরা কখনো নাছিরকে কারো সঙ্গে মারামারি করতে দেখি নি ৷ তার মতো নিরহ লোকই হয় না৷ তাকে মারা অত্যন্ত অন্যায় ৷ একজন রোজাদার ব্যক্তিকে কিভাবে এত আঘাত করল এটা কোন মানবিক কাজ না ৷ এ নিয়ে মোজাম জানান, তারা আমাদের খড়ের পালায় আগুন লাগিয়েছে ৷ এ জন্যে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে ৷ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তানোর থানার এস.আই সিহাব উদ্দীন ৷ তিনি জানান, যেহেতু নাছির ও তার ছেলের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ৷ আগে চিকিত্সা হোক পরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ৷ ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, এমন ঘটনা শোনার পরেই পুলিশ পাঠিয়ে আহতদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে ৷ রোগীর সম্পর্কে জানার জন্যে মেডিকেলের ইমার্জেন্সি ০১৭৩০-৩২৪৭০৮ নম্বরে ফোন দেয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায় ৷