শুক্রবার ● ১০ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » তাড়াশে কৃষক কার্ডে ধান দিচ্ছে আওয়ামীলীগ নেতারা
তাড়াশে কৃষক কার্ডে ধান দিচ্ছে আওয়ামীলীগ নেতারা
সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: (২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৫০মিঃ) সিরাজগঞ্জের তাড়াশের খাদ্য গুদামে হাট-বাজার থেকে ধান কিনে কৃষকদের সামান্য টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাদের কার্ডের মাধ্যমে ধান সরবরাহ করছেন আওয়ামীলীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা৷ সব কিছু ওপেন সিক্রেট হলেও কর্মকর্তা নিশ্চুপ রয়েছে৷ আর এ জন্য খাদ্য গোডাউনের কর্মকর্তাদের টন প্রতি ৮শ’ টাকা দিতে হচ্ছে৷ এনিয়ে সাধারন কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে৷
সুত্র জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলা সরকারীভাবী ৩হাজার ১শত ৬৮ মে.টন ধান সংগ্রহ নির্ধারণ করা হয়৷ ৩০মে থেকে খাদ্য গোডাউনে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে৷ সংগ্রহের আগেই উপজেলা পরিষদে রেজুলেশন করে স্থানীয় এমপি. উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষক বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়৷ এঅবস্থায় স্থানীয় এমপি প্রতি ইউনিয়নের পুরাতন ও নতুন চেয়ারম্যানদের অনুকুলে ৫০থেকে ১শটন, প্রতি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারন সম্পাদককে ১০টন করে সরবরাহ করার জন্য বরাদ্দ দেন৷ উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামীলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ ৫০টন করে সরবরাহ করতে বলেন৷ স্থানীয় এমপির জামাতা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী সূর্য এগুলো তাদারকী করেছেন৷ এবং নিজেও প্রায় ৩শ মে.টন ধান বিভিন্ন কৃষি কার্ডের মাধ্যমে ধান সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তবে ধানগুলো তাড়াশের কৃষকদের কৃষি কার্ডের মাধ্যমে সরবরাহের করার শর্ত দেন৷ এ অবস্থায় ওই সকল নেতারা অন্যান্য উপজেলার হাট বাজার থেকে কমমুল্যে ধান কিনে ট্রাকযোগে খাদ্য গুদামে নিয়ে আসছেন৷ আর নিকত্মাতীয় অথবা গরীব কৃষককে এক থেকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে কৃষি কার্ড কিনে নিয়ে খাদ্য গুদামে সরকার নির্ধারিত মুল্যে ধান সরবরাহ করছেন৷ ফলে কৃষকরা সরকারের দেয়া ভুর্তুকির টাকা বঞ্চিত হলে লাভজান হচ্ছেন আওয়ামীলীগ নেতারা৷
উপজেলার এক ই্উনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক জানান, এমপি মহোদয় এবার কাউকে বঞ্চিত করে নাই৷ প্রত্যেক ইউপির প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের ১০টন করে ধান সরবরাহের অনুমতি দিয়েছেন৷ তিনি আরো জানান, প্রতি টন ধানের জন্য খাদ্য গোডাউনে ৮শ করে টাকা দিতে হয়৷ না হলে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দাইকোনার ধান ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় আওয়ামীলীগের ১০/১২জনের একটি গ্রুপ তার কাছ থেকে ধান কিনে তাড়াশ গুদামে নিয়ে যাচ্ছেন৷
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাদ্য গুদামে প্রায় ধান বোঝাই পাঁচটি ট্রাক রয়েছে৷ ট্রাকের চালক-হেলপারদের ধানগুলো কোথা থেকে আনা হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তারা বললেন, ধানগুলো পাশ্ববর্তী রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে৷ কিন্তু ধান সরবরাহকারী প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা আজগর আলী গোডাইনের কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া তার ভাইসহ কয়েকজনের কৃষি কার্ড দেখিয়ে বলেন, এগুলোর মাধ্যমেই তিনি ধান সরবরাহ করছেন৷
এ বিষয়ে তাড়াশ খাদ্য গোডাউনের কর্মকর্তা ছানোয়ার টাকা নেয়ার বিষয়টি হোসেন জানান, ৭দিনে প্রায় ৪শ মে.টন ধান কেনা হয়েছে৷ কে, কোথা থেকে ধান নিয়ে আসলো এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়৷ কৃষি কার্ডে ধান নেয়া হচ্ছে এটাই বড় কথা৷ তাছাড়া কারা সরবরাহ করবে-এটা কৃষি অফিসই ঠিক করে দিচ্ছেন৷
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ৩৫ হাজার কৃষক রয়েছে৷ প্রত্যেকের নামের তালিকা খাদ্য গোডাউনে দেয়া হয়েছে৷ কোন কৃষকের ধান নিবে কি নিবে না সেটি তাদের বিষয়৷
ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ৩৫ হাজার কৃষক একবারে ধান দিতে আসলে হুলস্থল কারবার হবে৷ এ জন্যে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে৷ রেজুলেশন করে তাদেরকেই কৃষক বাছাই করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ এ অবস্থায় তারা যাদেরকে বাছাই করছেন তারাই ধান সরবরাহ করছেন৷ কেউ যদি অন্য উপজেলা থেকে ধান নিয়ে আসে তবে সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়৷
এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি গাজী ম.ম. আমজাদ হোসেন মিলন বন্টনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, কৃষি কার্ডের মাধ্যমেই ধান সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা আপনারা সেটিই দেখেন৷ ধান কোথা থেকে আসলে সেটি দেখার বিষয় নয়৷ এক পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ধানের গায়ে লেখা নেই এটি ঢাকার নাকি তাড়াশের ধান৷