সোমবার ● ১৩ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নয় : গেজেটে নাম ওঠা দেখে মরতে চান
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নয় : গেজেটে নাম ওঠা দেখে মরতে চান
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: জীবনকে তুচ্ছ করে রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন আব্দুল জলিল ৷ সংসার আর জীবনের প্রতি তার কোন মায়া ছিল না ৷ বরুদের গন্ধ তাকে পাক বাহিনীকে পরাস্ত করতে যুদ্ধের মাঠে নিয়ে যেত ৷ সেই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের মনে আজ অব্যক্ত যন্ত্রনা ৷ জীবন সায়াহ্নে এসে রনাঙ্গনের এই অকুতোভয় সৈনিক হেরে গেছে আমলাতন্ত্রের কাছে ৷
মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সনদপত্রসহ সব প্রমান তার রয়েছে, কিন্তু গেজেটে তার নাম নেই বলে সরকারী ভাতা পাচ্ছেন না ৷ ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়েছেন নাম সরকারী গেজেটে ওঠানোর জন্য, কিন্তু কোন কাজই হয়নি ৷ শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি ৷ আব্দুল জলিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মৃত ছানারুদ্দীনের ছেলে ৷ তিনি ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহন করেন ৷ বর্তমান তিনি সাধুহাটী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে বড় ছেলে ফারুক হোসেন ও ছোঠ ছেলে জিয়ার কাছে বসবাস করেন ৷ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল জানান, ১৯৭১ সালে তার বয়স যখন ১৯ বছর তখন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ৷ তার কমান্ডার ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সলুয়া গ্রামের ওয়াজেদ আলী ৷ তার নেতৃত্বে তিনি কোটচাঁদপুরের ধোপাবিলা, চুয়াডাঙ্গার খেজুরতলা, গড়াইটুপি, বংকিরা, গোবিন্দপুর ও রাঙ্গিয়ারপোতা এলাকায় সক্রিয় ছিলেন ৷
সে সময় তার সহযোদ্ধা ছিলেন, গড়াইটুপির মরহুম সাবদার হোসেন, মোহাম্মদপুর গ্রামের মরহুম এড আইয়ূব হোসেন, খেজুরতলার মরহুম ফুটান, ধোপাবিলা গ্রামের আনসার, আবু তৈয়ব, আব্দুল প্রমুখ ৷ এক সঙ্গে যুদ্ধ করে সহকর্মীদের গেজেটে নাম উঠলেও আব্দুল জলিল বঞ্চিত হয়েছেন ৷ কাগজপত্র নিয়ে তিনি অফিসে অফিসে ঘুরেছেন, কিন্তু কেও কথা রাখেনি ৷ হবে হচ্ছে আশ্বাস দিয়ে সবাই তাড়িয়ে দিয়েছেন৷ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশের দুরাবস্থার এমন চিত্র হবে আগে জানলে যুদ্ধ করনতাম না ৷ আব্দুল জলিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রমানাদি দেখিয়ে বলেন, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধূরী সাক্ষরিত সনদ তার রয়েছে (যার নং ৫৪১৪২)৷
মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটি থেকেও তার সনদ প্রদান করা হয়েছে যার নং ৫৮৩৭৷ তিনি ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাধিক নেতার কাছে দারাস্থ হয়েছেন বলে জানান ৷ কিন্তু কেও তাকে পাত্তা দেয়নি ৷ সবাই তার কাছে টাকা চেয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন ৷ কিন্তু বর্তমান পৰাঘাতগ্রস্থ আব্দুল জলিল এখন কোথায় টাকা পাবেন ?
এ বিষয়ে মালয়েশিয়া প্রবাসি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের ছেলে ফারুক হোসেন জানান, তার বাবা গেজেটে নাম ওঠানোর জন্য ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর কাছে দরখাস্ত করেন ৷ ২০১১ সালের ৯ মার্চ প্রতিমন্ত্রী ১২৮৯ নং স্মারকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সচিবকে নোট দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু ৫ বছর পার হলেও কোন সাড়া নেই৷ বাবার নাম গেজেটে ওঠেনি ৷ মৃত্যুর আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নয়, গেজেটে নাম ওঠা দেখে মরতে চান ৷ তবেই তিনি মনে করবেন দেশের কল্যানে তার যুদ্ধ স্বার্থক ছিল বলেন গ্রামের বাড়িতে থাকা ছোট ছেলে জিয়ারুল ৷