সোমবার ● ১৩ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহের পুরোহিত হত্যায় দেশে বিদেশে তোলপাড়
ঝিনাইদহের পুরোহিত হত্যায় দেশে বিদেশে তোলপাড়
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪১মিঃ) ঝিনাইদহে পুরোহিত হত্যার পর দেশে বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে৷ জেলার ৩৬৫টি পূজা মন্দিরে পুলিশের বিশেষ নজরদারী চলছে৷ পুরোহিতদের চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ মন্দির, গীর্জা ও উপাসনালয়ের পুরোহিতদের নিরাপত্তার দিকে কড়া নজর রাখছে পুলিশ৷
এ সব তথ্য জানিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ৷ তিনি আরো জানান, পুরোহিতদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ পালাক্রমে ডিউটি করছে৷ মন্দিরের কর্মকর্তাদের কাছে পুলিশের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যে কোন সময় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে বিশ্ব মিডিয়ায় ঝিনাইদহের পুরোহিত হত্যার খবর ফলাও করে প্রচার হওয়ার পর সরকার ও বিরোধীদলের প্রভাবশালী নেতা এবং মন্ত্রীরা আসছেন অজপাড়া গাঁ খ্যাত কোরাতিপাড়া গ্রামে৷ পুলিশ পুরোহিত হত্যার মামলা নিয়ে টেনশনে আছে৷ হিমশিম খাচ্ছেন খুনিদের গ্রেফতার ও মামলাটি তদন্ত নিয়ে৷ ঘটনার পরদিন গত বুধবার (৮ জুন) ভারতীয় দুতাবাসের দুই কর্মকর্তা ফাস্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) রাজেশ উকাইয়া ও কনসুলার রমাকান্ত গুপ্ত ঘুরে গেছেন কোরতিপাড়া গ্রাম৷ তারা এসে সমবেদনা জানিয়ে পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন৷
সরকারের মত্স্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ গত শুক্রবার পুরোহিতের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে মহিষের ভাগাড় রাস্তাটি পাকা করে আনন্দ গোপালের নামে নাম করণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন৷
এদিন হিন্দু বৈদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঝিনাইদহ জেলা নেতারা পুরোহিতের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে হত্যার বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুসিয়ারী দেন৷ এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধূরী শনিবার পুরোহিতের বাড়িতে আসেন সমবেদনা জানাতে৷
তিনি এ সময় বলেন,
রাজনৈতিক ভাবে দোষারোপ না করে ঝিনাইদহের পুরোহিত হত্যার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে শাসত্মির ব্যবস্থা করুন৷ তা না হলে দেশে একের পর এক হিন্দু সমপ্রদায়ের মানুষ খুন হতে থাকলে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিঘ্নিত হবে৷
এ ছাড়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, কেন্দ্রীয় পুজা উদযাপন পরিষদের নেতা কনক কান্তি দাস, ঝিনাইদহ জেলা হিন্দু বৈদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক সুবীর কুমার সমাদ্দারসহ সরকারী কর্মকর্তা ও বিভিনি্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগন সর্বক্ষন নিহত পুরোহিতের পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছেন৷
সর্বশেষ পুলিশের পক্ষ থেকে পুরোহিত হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধারের দাবী করা হলেও নিহতর পরিবার এ নিয়ে সন্তষ্ট নয়৷ তারা দৃশ্যমান ফলাফল দেখতে চান৷ নিহত আনন্দ গোপালের স্ত্রী শেফালী গাঙ্গুলী, ছেলে অরুন গাঙ্গুলী, সিন্ধু গাঙ্গুলী, মেয়ে রিনা গাঙ্গুলী, মিনা গাঙ্গুলী ও আর্চনা গাঙ্গুলীসহ পরিবারের সদস্যরা সোমবার জানান,
খুনিদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তারা শান্তি পাচ্ছেন না৷ স্ত্রী শেফালী গাঙ্গুলী কান্না ভেজা কন্ঠে জানান, সরকারী সহায়তা আর মন্ত্রী এমপিদের আশ্বাস দিয়ে আমাদের কি হবে ? যদি স্বামী হত্যার খুনিরা গ্রেফতার না হয়৷
উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের মহিষারভাগাড় বিলে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ওরফে নন্দকে (৭০) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা৷ আনন্দ গোপাল সদর উপজেলার কোরতিপাড়া গ্রামের মৃত সত্য গোপালের ছেলে৷ এ হত্যাকান্ডের পর আইএস এর নামে দায় স্বীকার করা হয়৷