মঙ্গলবার ● ১৪ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » শৈলকুপা থানার বকশির বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ
শৈলকুপা থানার বকশির বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি (৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.০৮মিঃ) ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার বকশি আব্দুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ টাকার বিনিময়ে থানার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস ও সকল মামলা রেকর্ডেই ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ সে ওসির নাম ভাঙ্গিয়েও দীর্ঘদিন যাবত্ ঘুষ গ্রহণ করে আসছে৷ তাকে ঘুষ না দিলে নিজের শারিরিক অসুস্থ্যতা, ব্যস্ততা ও এজাহারের কপিতে ত্রুটিসহ নানা অযুহাত দেখিয়ে বাদি পক্ষকে হয়রানি করেন তিনি৷
বকশি আব্দুল হকের বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ) ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন সচেতন মহল ও ভুক্তভোগিদের৷
সাংবাদিক জাহিদুর রহমান তারিকের তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার বাসিন্দা তিনি৷ তার কনস্টেবল নম্বর-৬১৪৷ গত ২ বছর পূর্বে সে শৈলকুপা থানায় যোগদান করেন৷ এরপর থেকেই তিনি বকশির দায়িত্ব গ্রহন করেন৷
এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বকশি হক প্রত্যেক মামলায় ১ হাজার ও ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি ও গ্রহণ করে আসছেন৷ দীর্ঘদিন ধরে নিরীহ ও পয়সাওয়ালাদের কাছ থেকে আরও বেশি ঘুষ গ্রহণ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷
এছাড়াও যে কোন ব্যক্তি মামলা দায়ের বা অভিযোগের কপি নিয়ে থানায় এলেই কপির নাম দেখে আসামি পক্ষের লোকজনের মোবাইল নাম্বার দালালদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বিষয়টি তাদের জানিয়ে দেয়৷ এ বাবদ আসামী পক্ষের কাছ থেকে সে টাকা হাতিয়ে নেয়৷
বিকাশে বা লোকমারফত ঘুষ গ্রহণ করে মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য আসামী পক্ষকে জানিয়ে দেন তিনি৷ এছাড়াও পুলিশ আসামী ধরতে যাওয়ার আগ মুহুর্তে মোবাইলের মাধ্যমে তিনি আসামী পক্ষকে সতর্ক করে দেন৷ এতে করে পুলিশ অনেক দাগী আসামীকে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে৷
যে কোন মামলার ফাইল মামলা রুজু হওয়ার আগে নিয়মানুযায়ী বকশি প্রস্তুত করে ওসির কাছে নিয়ে থাকে৷ কিন্তুু এ সুযোগে বকশি হক নিজে ১ হাজার ও ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করে আসছে৷ বাদি পক্ষের সকল তথ্য আসামি পক্ষের কাছে বিক্রির জন্য এজাহারের একাধিক কপি করে রাখেন এবং সেই কপি ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করে থাকেন৷
এদিকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর জন্য ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবী করেন, সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকার কমে তিনি গ্রহণ করেন না৷
অনেকের অভিযোগ বা জিডি থানায় লিপিবদ্ধ হওয়ার আগেই সেসব তথ্য প্রতিপক্ষের কাছে বকশি ফাঁস করে দেয়৷ যে কারনে আইনী সহায়তা নিতে আসা অনেক সাধারণ মানুষ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷ এছাড়াও প্রতিনিয়তই থানায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের কোর্টে চালানের জন্য গাড়ী ভাড়া বাবদ আসামী প্রতি ১ হাজার টাকা করে দাবী করেন তিনি৷ টাকা কম দিলে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে আসামীদেরকে কোর্টে পাঠান৷ এমন অভিযোগ আসামী পক্ষের স্বনজদের৷
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, থানায় জব্দকৃত বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য ও ঢাল, ফালা, রামদা এবং দেশীয় তৈরী অস্ত্র-শস্ত্র তিনি গোপনে বিক্রয় করেন৷ অনেক মাদক ব্যবসায়ীর সাথে তার সখ্যতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ বেশ কিছুদিন আগে থানায় জব্দকৃত সরকারী গাছের গুড়িও তিনি রাতের আধারে বিক্রি করে দেন৷ এ নিয়ে থানা চত্বরে হই-হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়৷
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ঈদ ও বিশেষ দিনকে সামনে রেখে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেন বকশি হক৷ এবারও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মোটা অংকের চাঁদাবাজীর মিশন হাতে নিয়েছেন তিনি৷
সচেতন মহলের দাবী পুলিশ কনস্টেবল ১ বছরের বেশি একটি থানায় থাকার নিয়ম না থাকলেও বকশি হক অত্যান্ত সু-কৌশলে ডিও বাড়িয়ে এই থানায় ৩ বছর রয়েছেন৷ তিনি কি মধু পেয়েছেন শৈলকুপা থানায় ? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে৷
শৈলকুপার এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধমনে বলেছেন তার এসকল অপকর্ম ও লাগামহীন দূর্নীতির কারনে পুলিশ প্রশাসনের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে৷
এদিকে অভিযুক্ত শৈলকুপা থানার বকশি আব্দুল হক সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন আমি এগুলো করিনি, ওসি স্যারের নিকট শুনে দেখেন৷ তাছাড়া আমি সরকারি চাকরি করি এখান থেকে বদলি করলে আরেক থানায় যাব ,তাই আমার তেমন কিছুই হবেনা৷
শৈলকুপা থানার বকশি দূর্নীতিবাজ আব্দুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগিরা৷