রবিবার ● ১৯ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » খেলা » সিমান্তের রিও অলিম্পিক আসরে খেলা অনিশ্চিত
সিমান্তের রিও অলিম্পিক আসরে খেলা অনিশ্চিত
ক্রীড়া প্রতিবেদক :: (৫আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.১৫মিঃ) বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সব চেয়ে ক্ষমতাধর সরকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। সরকারী বন্ধের দিনে গত ১১ জুন শনিবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আবারও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৯৭৪ সালের ক্রীড়া পরিষদ আইনের ২০-এর এ (বি) ধারার ক্ষমতা বলে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি ভেঙে দেয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাদের ক্ষমতাবলে রাতারাতি গঠন করা বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের এডহক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্বুদ্ধিতার কারণে ওয়াইলড কার্ড (আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশন এর বিশেষ অনুমতি) পাওয়ার মাধ্যমে আসন্ন রিও অলিম্পিকে খেলা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে মাবিয়া আক্তার সিমান্তর।
গত ফেব্রয়ারী মাসে ভারতের গুয়াহাটি শিলংয়ে অনুষ্ঠিত ১২তম এসএ গেমসে বাংলাদেশের পক্ষে ভারোত্তোলনে প্রথম স্বর্ণ পদক জয় করে দেশের মানুষকে খুশিতে কাঁদিয়ে ছিলেন মাবিয়া আক্তার সিমান্ত।
স্বর্ণ জয়ের পর ভারতে ১২তম এসএ গেমসে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া বাংলাদেশী সংবাদকর্মিদের সাথে স্বাক্ষাতকার দেয়ার সময় সিমান্ত বলেছিলেন, দেশের জন্য এসএ গেমসে স্বর্ণ জিততে পেরিছে বলে আমি খুব খুশি। এখন আপনার লক্ষ্য কি ? এই প্রশ্নের জবাবে, সিমান্ত বলেছিলেন, আমার খেলোয়াড়ী জীবনে এখন একমাত্র স্বপ্ন ও ইচ্ছা সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর অলিম্পিকে খেলা। যে স্বপ্ন সকল ক্রীড়াবিদই দেখে।
কিন্তু বর্তমান ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সদস্যদের যেসকল কর্মকান্ডের কারণে রিও অলিম্পিকে সিমান্তর খেলা অনিশ্চিতার মুখে পরেছে।
চলতি জুন মাসের ৯ তারিখে জাতীয় ক্রীড়া পরিষধ (এনএনসি) ভারোত্তোলন ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে নতুন এডহক কমিটি গঠন করে সমালোচনার মুখে পরে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশন এবং ভারোত্তোলন খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ ।
বিদায়ী সফল সাধারণ সম্পাদক উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ (অব.)কে কোন কিছু না জানিয়ে গত শনিবার ১১জুন সরকারী ছুটির দিনে ফেডারেশনে প্রবেশ করেন বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি মঞ্জুর কাদের কৌরাইশী ও সাধারণ সম্পাদক লে: কর্নেল মো. শহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য সদস্যরা। সেদিনই তারা অফিসের তালা পাল্টে ফেলেন কোন অনুমতি না নিয়ে। বিদ্যুৎ কুমার রায়ের ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক প্রাপ্ত খেলোয়াড়দের নিউজ পেপার কাটিং, সনদপত্র ও অন্যান্য জিনিস পত্র তচনছ করেন।
নিয়ম অনুসারে পূর্বের কমিটির সাধারন সম্পাদক ক্ষমতা হস্তান্তর করার সুযোগ না রেখে, এনএসসি’র আদেশ উপক্ষা করে, ফেডারেশনের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগেই ক্ষমতালোভী বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লে: কর্নেল শহিদুল ইসলাম তড়িঘড়ি করে আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সভাপতিকে নিম্ন লিখিত ইমেলে জানান যে, বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সাথে উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদের আর কোন সম্পর্ক নেই।মুলতঃ তাদের এই ইমেলের কারণেই রিও অলিম্পিকে সিমান্ত খেলা অনিশ্চিতার মুখে পরে। কারণ, এতদিন মহিউদ্দিন আহমেদের বিশেষ অনুরোধে আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সভাপতি বেশ আন্তরিকতার সাথে রিও অলিম্পিকে সিমান্তর ওয়াইলড কার্ড পাওয়ার ব্যাপারে বেশ জোরালো আশ্বাস দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য যে, মোট ৫১টি আবেদনকারী দেশের মধ্যে ১০টি দেশকে ভারোত্তোলনে ওয়াইলড কার্ড প্রদান করবে আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশন।
যেহেতু আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশনকে জানানো হয়েছে যে, দীর্ঘ ৪১ বছরের যোগ্য সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বনামধন্য একজন বর্ষিয়ান ক্রীড়া সংগঠককে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশন থেকে অবমূল্যায়িত করে বিদায় করা হয়েছে, তাই স্বাভাবিক ভাবেই ওয়াইলড কার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশনের এখন চিন্তা ভাবনাও পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রকটভাবে।
শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশন ও এশিয়ান ভারোত্তোলন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে বিস্মিত হয়েছেন। যা বাংলাদেশ ভারোত্তোলন নিয়ে তাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে।
আমাদের দেশে সেই প্রবাদটি মনে পড়ে যায়, রাজায় - রাজায় মারামারী দেশের সাধারন মানুষের বারোটা বাজে, ফেডারেশনের ক্ষমতার চেয়ার দখল নিয়ে ক্ষমতার লড়াই, মাঝখানে একজন আন্তর্জাতিক ভাবে যোগ্য খেলোয়াড় সিমান্ত ওপর আঘাত।
ফেডারেশনের এ ধরনের ইমেল পাঠানো নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের অভিজ্ঞমহলের ধারনা, বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করে কি দরকার ছিলো এ সময় এ ধরনের ইমেল পাঠিয়ে একজন সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড়টির ক্ষতি করা, বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও জনমনের কাছে ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমুতি ক্ষীণ করার।
যে খেলোয়াড়টি এতদিন অলিম্পিকে খেলার স্বপ্নের জাল বুনছিলো তার স্বপ্ন কি তাহলে বর্তমান কমিটির নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ এই ইমেলের কারণে থমকে যাবে ? এমন প্রশ্ন ক্রীড়া সংগঠকদের মনে।
বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় বসে থাকা বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি মঞ্জুর কাদের কৌরাইশী অক্রীড়া সংগঠক সুলভ মনোভাবের কারণেই রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড় অংশ গ্রহন করতে পারছেনা।
জুন মাসের শেষ দিকে জানা যাবে সিমান্ত ওয়াইলড কার্ড পাচ্ছেন কি না।