মঙ্গলবার ● ২১ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » ২৭ বছর পর পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার উদ্যোগ
২৭ বছর পর পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার উদ্যোগ
ঢাকা প্রতিনিধি :: (৭ আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১১.২২মিঃ) ক্ষমতায় জনপ্রতিনিধি না থাকায়, বছরের পর বছর কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিষদীয় দৈনন্দিন কার্যাক্রম পরিচালনা করা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় পার্বত্য তিন জেলাতে দুর্নীতির আখড়া বলে খ্যাত। দীর্ঘ ২৭ বছর পর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান পদে কেবল উপজাতীয় এবং সদস্য পদে উপজাতীয় ও অ-উপজাতীয়দের নির্বাচনে যোগ্য ভাবা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৯ সালের ৬ মার্চ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে সরকার। এরপর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি হলে পাহাড়িদের মাঝে নির্বাচনের দাবি আরও জোরালোভাবে উত্থাপন হয়। ফলে ১৯৮৯ সালের আইনটিকে কার্যকর করতে ২০০০ সালে আরও সংশোধন আনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু আইন সংশোধনের পরও ১৬ বছর অতিবাহিত হতে চলছে। নির্বাচন আর হয়নি।
শুধু তাই নয়, নির্বাচন করার জন্য বিধিমালার প্রয়োজন হয়, সেটাও করা হয়নি। অথচ আইনে বলা আছে, নির্বাচন সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন। আর এজন্য বিধিমালা প্রস্তুত করে দেবে সরকার। যদিও পার্বত্য জেলা পরিষদ ছাড়া অন্য সব নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকেই আইনে দেওয়া আছে।
সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের জন্য বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবিষয়ে গত ১৪ জুন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত হয়ে নির্বাচন কমিশনের একজন উপ সচিবকেও মতামত দেওয়া জন্য বলেছিল মন্ত্রণালয়টি। সে পরিপ্রেক্ষিতে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এজন্য আরো আলোচনা পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’
ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, বিধিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব ইসিকে দিলেই কাজটি সহজ হবে। অন্যথায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কাজটি সম্পন্ন করা দুরূহ হবে।
আইনে বলা হয়েছে : একজন চেয়ারম্যান, ২০ জন উপজাতীয় সদস্য, ১০ জন অ-উপজাতীয় সদস্য, দুইজন উপজাতীয় মহিলা সদস্য এবং একজন অ-উপজাতীয় মহিলা সদস্য নিয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান উপজাতীয়দের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। আর ২০ জন সদস্য উপজাতীয় সদস্যের মধ্যে সার্কেল ভিত্তিক অর্থাৎ চাকমা থেকে ১০ জন, মারমা থেকে ৪ জন, তনচৈংগা থেকে ২ জন, ত্রিপুরা, লুসাই, পাংখু ও খেয়াং থেকে ১ জন করে নির্বাচিত হবেন। আর মহিলা সদস্যদের দুইজন উপজাতীয়, যে কোনো সার্কেল থেকে নির্বাচিত হতে হবে।
এ নিয়ে ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, একটি সার্কেলের জনগণ একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা পুরো জেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। তাই সদস্য পদে সার্কেল ভিত্তিক নির্বাচন করাটা কঠিন। এতে ব্যালট পেপারের আকার অনেক বড় হয়ে যাবে।
ইসির জ্যেষ্ঠ একজন উপ সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১৯৮৯ সালে একবার রাঙামাটি জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু সেটা অনেকটা সিলেকশনের মতো ছিল। প্রথাগত নির্বাচনের মতো সেটা ছিল না। কাজেই বলতে গেলে ২৭ বছরেও পার্বত্য জেলা পরিষদে কোনো নির্বাচন হয়নি।
ওই নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন অনেক বড় নির্বাচন। কেননা, একটা জেলা কমপক্ষে ৫টি সংসদীয় আসনের সমান। তাই স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনটি এতদিনেও করা যায়নি। নির্বাচন তো দূরের কথা, বিধিমালাও প্রস্তুত করা যায়নি। তবে পর্যালোচনা করে একটি পথ অবশ্যই খুঁজে বের করা যায়।