শুক্রবার ● ১ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই শিবির কর্মী নিহত
ঝিনাইদহে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই শিবির কর্মী নিহত
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি:: (১৭ আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৫৫ মিঃ) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের মাঠে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শহীদ আল মাহমুদ (২৭) ও আনিচুর রহমান (২৯) নামে দুই শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন৷ পুলিশের ভাষ্যমতে, বন্দুক যুদ্ধের সময় পুলিশের এস আই প্রবীর কুমার, কনস্টেবল রাবি্ব ও তরিকুল আহত হন৷
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ১ সুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ৬ টি হাসুয়া ও ৫ টি বোমা উদ্ধার করেছে ৷ ১ জুলাই শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে এ বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে৷
নিহত শহীদ আল মাহমুদ ঝিনাইদহ শহর শাখা শিবেরর ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ঝিনাইদহ সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার কামিল ১ম বর্ষের ছাত্র৷ তিনি সদর উপজেলার বদনপুর গ্রামের রজব আলীর ছেলে৷ তাকে গত ১৩ জুন নিজ বাড়ি সদরের বদনপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে গত ১৮ জুন পরিবারের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবী করা হয়েছিলো৷
অন্যদিকে ঝিনাইদহ পলিটেকনিকের শিবিরের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমানের বাড়ি কুষ্টিয়ায় বলে জানা গেছে৷ তিনি ঢাকার ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির বিএসসির ছাত্র৷ তাকেও গত ১৬ জুন রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নাম্বার রোডের ১১ নাম্বার বাসার ৬ তলা থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়৷ বুধবার (২৯ জুন) শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটি শহীদ আল মাহমুদ ও আনিচুর রহমান তাদের কর্মী দাবী করে বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায়৷
ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশের টহল গাড়ী লক্ষ করে একদল সন্ত্রাসী গুলি চালালে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়৷ খবর পেয়ে আমি এবং সার্কেল এসপি স্যার অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই৷ যখন গোলাগুলি বন্ধ হয় তখন আমরা ২ জনের লাশ উদ্ধার করি৷ এ সময় আমাদের তিনজন পুলিশ সদস্যও আহত হন ৷ নিহতদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ৷ তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রামের রজব আলী লাশ দুইটি তার ছেলে শহীদ আল মাহমুদ ও অন্যজন শিবির নেতা আনিচুরের বলে সনাক্ত করেন৷
এদিকে বন্দুক যুদ্ধের সময় আহত পুলিশের এস আই প্রবীর, সদস্য রাবি্ব ও তরিকুল আহত হয়৷ আহত পুলিশ সদস্যদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে তেতুলবাড়ীয়া এলাকায় একদল দুবৃর্ত্ত নাশকতা সৃষ্টির জন্য অবস্থান করছে৷
খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার টহল পুলিশ তেতুলবাড়ীয়া রাস্তা দিয়ে টহল দিচ্ছিল৷ পুলিশ টহলের সময় তেতুলবাড়ীয় গ্রামের উত্তর মাঠের দিকে দুবৃত্তরা পুলিশের গাড়ী লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে৷ আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ও পাল্টা গুলি চালায়৷ উভয় পক্ষের প্রায় ২০ মিনিট গুলি বিনিময় হয়৷ এর এক পর্যায়ে দুবৃত্তরা পালিয়ে যায়৷ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুইটি লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়৷
উল্লেখ্য গত ১৮ জুন নিখোঁজ সন্তানের উদ্ধারের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিহত শহীদ আল মাহমুদের বৃদ্ধ পিতা রজব আলী৷ তিনি সে দিন সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, গত ১৩ জুন রাত ১২টার দিকে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার ছেলে শহীদ আল মাহমুদকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ সেই থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় ঘটনার সময় ১০/১২ জন লোক একটি কালো মাইক্রোবাস ও ৩টি মোটর সাইকেল এসে তার ছোট ছেলে শহীদ আল মাহমুদকে উঠিয়ে নিয়ে যায়৷ এমতাবস্থায় তিনি এবং তার পরিবার ছেলের জীবন নিয়ে শংঙ্কিত ৷ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আল মাহমুদের বড় বোন মদিনা খাতুন এবং মামা ফিরোজ আহমেদ৷
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিবির কর্মী শহীদ আল মাহমুদকে আটক করা হয়নি বলে জানানো হয়৷ এদিকে ঝিনাইদহ শহরের পাবলিক হেলথ জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা (২২) ২৭ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন৷
গত ৩ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর একটি কালে রংয়ের হাইয়েজ গাড়িতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কে বা করা তাকে তুলে নিয়ে যায়৷ সেই থেকে তার কোন সন্ধান নেই৷ সোহেল রানা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কামারকুন্ডু গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে৷
সোহেল রানার ভাই মাসুদুর রহমান জানান, ঘটনার দিন সোহেল রানার সাথে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি কথা বলতে দেখা গেছে৷
এ ঘটনার পর থেকেই সোহেল রানাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাদের ধারণা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে৷ তবে পুলিশ সোহেল রানাকে আটক করে নি বলে জানিয়েছে৷