শনিবার ● ২ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহে ফের কথিত বন্দুক যুদ্ধে শিবির নেতা পরভেজ নিহত
ঝিনাইদহে ফের কথিত বন্দুক যুদ্ধে শিবির নেতা পরভেজ নিহত
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি :: (১৮ আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১১.১৪মিঃ) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর কবরস্থানে পুলিশের সাথে “বন্দুকযুদ্ধে” ইবনুল ইসলাম পারভেজ (২৯) নামে এক শিবির নেতা নিহত হয়েছেন৷ আর এই বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের রাধামদন মঠের অনতিদুরে৷ যেখানে ১ জুলই শুক্রবার ভোরে মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে৷
পারভেজ ঝিনাইদহ শহেরের বনানীপাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে৷ তিনি ঝিনাইদহ শহর শিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলেন৷ বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের দুই কনস্টেবল আরিফ ও সামান্ত কুমার আহত হন৷ তাদেরকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে৷ পুলিশ নিহতর পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারলেও লাশটি শিবির নেতা পারভেজের বলে তার স্বজনরা সকালে হাসপাতালে এসে সনাক্ত করে৷
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ওই এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছিল৷ পুলিশের টহল যানটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটী ইউনিয়নের মধুপুর কবরস্থানের কাছে পৌছালে ওত্ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়৷ ওসির ভাষ্যমতে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছোড়ে৷ শুরু হয় সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধ৷ বন্দুক যুদ্ধের সময় সময় অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়৷ ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১টি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, একটি ছোরা, ৩টি রামদা ও একটি চাপাতি উদ্ধার করে৷
নিহতর বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করেন, গত ১৬ জুন রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নাম্বার রোডের ১১ নাম্বার বাসার ৬ তলা থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় পারভেজকে৷ পারভেজের সাথে আরো তিন জনকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এর মধ্যে শিবির নেতা শহীদ আল মাহমুদ ও আনিচুর রহমান শুক্রবার ভোরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের মাঠে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন৷
এদিকে বুধবার (২৯ জুন) শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ইবনুল ইসলাম পারভেজ, শহীদ আল মাহমুদ ও আনিচুর রহমান তাদের কর্মী দাবী করে বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায়৷
এদিকে ঝিনাইদহ শহরের পাবলিক হেলথ জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা (২২) ২৮ দিন ধরে ও কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা এলাকার শিবির কর্মী সবুজ হোসেন ১০ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন৷
গত ৩ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর একটি কালে রংয়ের হাইয়েজ গাড়িতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কে বা করা তাকে তুলে নিয়ে যায় রানাকে৷ সেই থেকে তার কোন সন্ধান নেই৷ সোহেল রানা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কামারকুন্ডু গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে৷
অন্যদিকে নলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সবুজকে বাড়ি থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায়৷ তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সোহেল রানা ও সবুজকে আটক করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে৷
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সকাল ৮ টার দিকে যশোর সদরের হৈবতপুর ইউনিয়নের জোড়াদহ গ্রামের একটি পুকুর থেকে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবুজর গিফারি ও অপর নেতা শামীম হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়৷
গত ১৮ মার্চ শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝিনাইদহ জামতলা মোড় থেকে দু’টি মোটরসাইকেলযোগে ৪ ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে যশোর এমএম কলেজের ছাত্র আবুজর গিফারি এবং ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ কে সি কলেজের অনার্স ২য় বষের্র ছাত্র শামীম হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সে সময় অভিযোগ করেছিল তাদের পরিবার ও ছাত্রশিবির৷
এদিকে ঝিনাইদহ শহর শাখা শিবিরের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম গনমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, পুরোহিত ও সেবায়েত হত্যার আসামীদের ধরতে ব্যার্থ হয়ে পুলিশ শিবিরের মেধাবী ছাত্রদের ধরে একের পর হত্যা করছে৷ তিনি আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে বন্দুক যুদ্ধ বলে চালানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ সব ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদনত্ম দাবী করেন৷
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারাই নিঃশৃংস ভাবে পরিকল্পিত ভাবে তাদের হত্যা করল৷
তিনি বলেন, আজ যাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে, তাদের নিজ এলাকায় খোজ নিয়ে দেখুন, তারাই নম্র ভদ্র অমায়িক, সদালাপি পরোপকারি মেধাবী ছাত্র৷ অথচ রাষ্ট্রিয় বাহিনী আজ তাদের সন্ত্রাসী সাজালো৷