সোমবার ● ৪ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » গুলশানে হামলার নেপথ্যে কারা কারা আছেন ? জানালেন মনিরুল হক : জানলে অবাক হয়ে যাবেন
গুলশানে হামলার নেপথ্যে কারা কারা আছেন ? জানালেন মনিরুল হক : জানলে অবাক হয়ে যাবেন
অনলাইন ডেস্ক :: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে উদারপন্থী, নাস্তিক, বিদেশি নাগরিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব হামলার বেশির ভাগেরই দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদা। তবে পুলিশের দাবি, এ দুটি জঙ্গি সংগঠনের কোনওটাই বাংলাদেশের এসব হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নয়। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দেশে গড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠনগুলোই এসব হামলা চালিয়েছে। এসব সংগঠনের মধ্যে আনসার আল ইসলামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০১১ সালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সাবেক মেজর জিয়াউল হক। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে বৃটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
জুনের শুরুতে রাজধানী ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে হামলার হুমকি দিয়ে আইএসের নামে একটি হাতে লেখা চিঠি আসে। এর পরদিন মিশনে গিয়ে সাধুদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সদস্যরা। মিশন প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধু স্বামী শিবানন্দ দেশের ১০ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠীর সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা সন্ন্যাসী মানুষ। এখানেই জীবন যাপন করি, এখানেই দেহত্যাগ করব। কিন্তু যাদের পরিবার-পরিজন আছে তারা ভীত হয়ে পড়েন।’
উদারপন্থী, নাস্তিক, বিদেশী, সমকামী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর জঙ্গি হামলার হার এতই বেড়েছে যে গত বছর নিহত অন্তত ৩০ জনের হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদা। এতে ১৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যার রাষ্ট্র বাংলাদেশেও সৃষ্টি হয়েছে ভীতি। কেননা এই নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা এশিয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সম্ভাবনাকেও বিনষ্ট করে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরই দাবি করা হয়েছে, এই দুই আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশের কোনও সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়।
কিন্তু হিন্দু মিশনে হামলার হুমকির প্রেক্ষিতে পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনগুলোও আল-কায়েদার পদ্ধতিতে সহিংস কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। ফলে হামলার ঝুঁকির মধ্যে সত্যতা রয়েছে। তারা আরও জানায়, এক সাবেক সেনা সদস্য ২০১১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন।
অন্ধ প্রতিহিংসা
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে আনসার আল-ইসলাম বাংলাদেশ (এবিটি) ও জামাত উল-মুজাহিদিন (জেএমবি) নামের দুটি স্থানীয় জঙ্গি দল রয়েছে যারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এদের মধ্যে আল কায়েদার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে বলে এবিটি দাবি করে থাকে। এবিটি অত্যন্ত সুসংগঠিত ও ভয়াবহ একটি দল। অপরদিকে, জেএমবি আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দাবি করে থাকলেও এর কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সিটিটিসি ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিনে এবিটির সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা হয়ে গিয়েছে। তাদের নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কেও আমরা জানতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবিটি আল কায়েদার আদর্শের অনুসারী। তাদের নেতারা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে আসা শিক্ষিত মানুষ। এই দল উপমহাদেশে আল-কায়েদার শাখার সঙ্গে মৈত্রী ঘোষণা করেছে। আল কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহরির নেতৃত্বও স্বীকার করেছে।’
বিশ্বজুড়ে জিহাদি দল শনাক্তকারী প্রকাশনা লং ওয়ার জার্নালের সম্পাদক থমাস জোসেলিনের দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশের সঙ্গে আল কায়েদার যোগাযোগ সম্পর্কে আরও প্রামাণ্য তথ্যাবলি রয়েছে। জোসেলিনের মতে, বাংলাদেশ ইসলামি জঙ্গিবাদকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করছে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর বিষয়ে আল কায়েদা ও আইএসের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে।’
এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে একিউআইএস বা আল কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের নেতা আসিম ওমর বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক লেখক অভিজিত রায় হত্যার দায় স্বীকার করে। অভিজিতকে হত্যা করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা হত্যাকারী সম্পর্কে নিশ্চিত কোনও তথ্য দিতে ব্যর্থ হন।
প্রাথমিকভাবে এবিটি ইসলামের সমালোচনাকারী ব্লগার ও প্রকাশকদের লক্ষ্যবস্তু করে। পরে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ওপর হামলা চালায় তারা। এ বছর এপ্রিলে দুই সমকামী অধিকার আন্দোলনের কর্মীকেও ইসলাম-বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে হত্যা করে এই সংগঠনটি।
রহস্যজনক সাবেক মেজর
আনসার আল-ইসলামের এই আকস্মিক উত্থানের সঙ্গে এক সাবেক সেনা কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ২০১১ সালে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আত্মগোপন করে আছেন।
এ বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ, এই সাবেক সেনা কর্মকর্তাই এদের নেতা। তিনি আত্মগোপন করে আছেন, কিন্তু আমরা তার ক্ষমতার মাত্রা জানি। তিনি যদি আনসারের সঙ্গে থাকেন তবে তা তাদের জন্য একটি বড় শক্তির জায়গা হবে।’
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, জিয়াউল হক একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর থেকে এসেছেন এবং তিনি বিশেষ অভিযান চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এক সেনা মুখপাত্র জানান, জিয়াউল হককে পাঁচ বছর আগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সেই থেকে তার কোনও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানে না সেনাবাহিনী।
আনসারের সঙ্গে জিয়াউল হকের সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ প্রথম ২০১৩ সালে পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ সূত্র। জিয়া জঙ্গিদের যুদ্ধ ও বোমা তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে, একই সময়ে বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিমদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস। নিরাপত্তা বিভাগ এই হত্যাকাণ্ডগুলোকে আইএস খিলাফতের আদর্শে দীক্ষিত জেএমবির কর্মকাণ্ড বলেই শনাক্ত করেছে।
মনিরুল ইসলাম জানান, সিরিয়াতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত জিহাদি রয়েছেন। এরাই বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই দায় স্বীকার করে থাকেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আইএসের সরাসরি সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সূত্র: রয়টার্স