বুধবার ● ৬ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে রথযাত্রা ও রথমেলা শুরু
গাজীপুরে রথযাত্রা ও রথমেলা শুরু
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (২২আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.২৪মিঃ) গাজীপুরে ঐতিহ্যবাহী শতাব্দী প্রাচীন শ্রী শ্রী মাণিক্য মাধবের ২০ দিন ব্যাপী রথযাত্রা ও রথমেলা শুরু হয়েছে৷
গাজীপুর জেলা শহরের রথখোলায় ৬ জুলাই বুধবার সকালে রথটানের মধ্য দিয়ে রথযাত্রা শুরু হয়৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রথযাত্রা ও রথমেলার উদ্বোধন করেন৷
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ এস এম আলম সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, রথমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক মুকুল কুমার মলি্লক আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন, আব্দুল হাদী শামীম, ভাওয়াল রত্ন নুরুল ইসলাম ও মণীন্দ্র চন্দ্র মন্ডল প্রমূখ৷
রথযাত্রা উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত সভা শেষে সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রধান অতিথি, রথ সংশ্লিষ্ট ও হাজারো পূণ্যার্থী নিয়ে ভক্তি সহযোগে রথটান দিয়ে রথযাত্রা ও রথমেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন৷ এর আগে হস্তি ও পালকি সহযোগে দেবতা মাণিক্য মাধবকে রথে অধিষ্ঠান করা হয়৷ বুধবার রথ টানের মধ্য দিয়ে মাণিক্য মাধব নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুড় বাড়ি যাচ্ছেন৷ আগামী ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার উল্টো রথযাত্রায় মাণিক্যমাধবের নিজ বাড়ি ফেরার মধ্য দিয়ে এবারের ৯ দিনব্যাপী রথযাত্রার শেষ হবে৷ ২০দিন ব্যাপী মেলা উপলক্ষে ইতোমধ্যে রথখোলা এবং সংলগ্ন এলাকার রাস্তার দু’ধারে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শিশুদের খেলনা, মুড়ি-মুড়কি, মিষ্টির দোকান, তৈজষপত্র, আসবাবপত্রসহ নানা বাহারী সব জিনিসের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানীরা৷ এছাড়াও মনোরঞ্জনের জন্য মেলায় এসেছে পুতুল নাচ, মৃত্যুকুপ মটরসাইকেল, নাগরদোলা ও সার্কাস ইত্যাদি৷ রথমেলায় হাজারো পূণ্যার্থী এবং সকল ধর্মের মানুষেরা অংশ নিচ্ছেন৷
প্রায় দেড়শো বছর পূর্বে গাজীপুরের ভাওয়াল পরগণার রায় চৌধুরী বংশের অষ্টম উত্তর-পুরুষ রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরীর আমলে এই ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলার প্রচলন হয়৷
কথিত আছে, রাজা কালী নারায়ণ রায়ের স্ত্রী সভ্যভামা দেবী ছিলেন খুবই ধর্মপরায়ণ৷ রাজবাড়ির অভ্যন্তরে পদ্মনাভ ঠাকুর ঘরে পূজার্চনার সময় একদিন সভ্যভাম দেবী দৈববানী শুনতে পান যে- দীঘি থেকে মাধব মূর্তি উত্তোলন করে জয়দেবপুরে (গাজীপুরে) রথযাত্রার প্রচলন করতে৷ মতান্তরে তিনি এ ঘটনা স্বপ্নে দেখেন৷
পরে চাদনা (চান্দনা) গ্রামের নবলক্ষী দীঘি থেকে ৫টি এবং ভাওয়াল রাজদীঘিতে (মতান্তরে শ্রীপুর এলাকার রাজাবাড়ির একটি দীঘি) ২টি মাধবমূর্তি পাওয়া যায়৷ শেষাক্ত মূর্তি ২টি উত্তোলনের সময় একটি মূর্তির নাক আংশিক কর্তিত হলে সেটি আর উত্তোলন করা হয়নি৷ বাকি ৬টি মূর্তির নামকরণ করা হয়- মাণিক্য মাধব, ঠাকুর কুমার মাধব, চক্রপানি মাধব, নীলাম্বর মাধব, যশো মাধব ও বসুদেব মাধব নামে৷ রথমেলা প্রচলনের সময় ( ১২৭৮ বঙ্গাব্দ; ১৮৭১ খৃষ্টাব্দ) থেকে মাণিক্য মাধবমূর্তি রথে অধিষ্ঠান করে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা করা হতো৷
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী সারা দেশের ন্যায় মাধববাড়ি, মাধবমূর্তি ও রথেরও ক্ষতি সাধন করে৷ স্বাধীনতার পর ভাওয়াল রাজদীঘি থেকে ২টি মাধব মূর্তি উদ্ধার করা হলেও বাকি ৪টি কোন হদিস মেলেনি৷ উদ্ধারকৃত মূর্তির মধ্যে ১টি মাণিক্য মাধবের বলে শনাক্ত করে ওই মূর্তি দিয়ে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো৷
১৯৯২ খৃষ্টাব্দে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার জেরে মাধবের শ্বশুরবাড়িতে রক্ষিত মাণিক্য মাধবের মূর্তিটি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়৷ এরপর থেকে মাণিক্য মাধব মূর্তির আদলে মাটির তৈরি মূর্তি (প্রতি বছরই তৈরি করে) রথে অধিষ্ঠান করে রথ যাত্রার আয়োজন হতো৷