বৃহস্পতিবার ● ১৪ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে মানিক্য মাধবের উল্টো রথযাত্রা
গাজীপুরে মানিক্য মাধবের উল্টো রথযাত্রা
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৩০ আষাঢ় ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.২৪মিঃ) গাজীপুরে ভাওয়াল রাজাদের প্রতিষ্ঠিত প্রায় দেড়শ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী মানিক্য মাধবের উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে বিপুল সংখ্যক পূণার্থীর অংশগ্রহণে এই উলটোরথ অনুষ্ঠিত হয়৷
গাজীপুর জেলা শহরের রথখোলায় ৬ জুলাই বুধবার সকালে রথটানের মধ্য দিয়ে রথযাত্রা শুরু হয়৷ বৃহস্পতিবার উল্টো রথটানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা৷
মেলা উপলক্ষে ইতোমধ্যে রথখোলা এবং সংলগ্ন এলাকার রাস্তার দু’ধারে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শিশুদের খেলনা, মুড়ি-মুড়কি, মিষ্টির দোকান, তৈজষপত্র, আসবাবপত্রসহ নানা বাহারী সব জিনিসের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানীরা৷ এছাড়াও মনোরঞ্জনের জন্য মেলায় এসেছে পুতুল নাচ, মৃত্যুকুপ মটরসাইকেল, নাগরদোলা ও সার্কাস ইত্যাদি৷ রথমেলায় হাজারো পূণ্যার্থী এবং সকল ধর্মের মানুষেরা অংশ নিচ্ছেন৷ মেলা চলবে আরও সাত দিন৷
উল্লেখ্য, প্রায় দেড়শো বছর পূর্বে গাজীপুরের ভাওয়াল পরগণার রায় চৌধুরী বংশের অষ্টম উত্তর-পুরুষ রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরীর আমলে এই ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলার প্রচলন হয়৷
কথিত আছে, রাজা কালী নারায়ণ রায়ের স্ত্রী সভ্যভামা দেবী ছিলেন খুবই ধর্মপরায়ণ৷ রাজবাড়ির অভ্যন্তরে পদ্মনাভ ঠাকুর ঘরে পূজার্চনার সময় একদিন সভ্যভাম দেবী দৈববানী শুনতে পান যে- দীঘি থেকে মাধব মূর্তি উত্তোলন করে জয়দেবপুরে (গাজীপুরে) রথযাত্রার প্রচলন করতে৷ মতান্তরে তিনি এ ঘটনা স্বপ্নে দেখেন৷
পরে চাদনা (চান্দনা) গ্রামের নবলক্ষী দীঘি থেকে ৫টি এবং ভাওয়াল রাজদীঘিতে (মতান্তরে শ্রীপুর এলাকার রাজাবাড়ির একটি দীঘি) ২টি মাধবমূর্তি পাওয়া যায়৷ শেষাক্ত মূর্তি ২টি উত্তোলনের সময় একটি মূর্তির নাক আংশিক কর্তিত হলে সেটি আর উত্তোলন করা হয়নি৷ বাকি ৬টি মূর্তির নামকরণ করা হয়- মাণিক্য মাধব, ঠাকুর কুমার মাধব, চক্রপানি মাধব, নীলাম্বর মাধব, যশো মাধব ও বসুদেব মাধব নামে৷ রথমেলা প্রচলনের সময় ( ১২৭৮ বঙ্গাব্দ; ১৮৭১ খৃষ্টাব্দ) থেকে মাণিক্য মাধবমূর্তি রথে অধিষ্ঠান করে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা করা হতো৷
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী সারা দেশের ন্যায় মাধববাড়ি, মাধবমূর্তি ও রথেরও ক্ষতি সাধন করে৷ স্বাধীনতার পর ভাওয়াল রাজদীঘি থেকে ২টি মাধব মূর্তি উদ্ধার করা হলেও বাকি ৪টি কোন হদিস মেলেনি৷ উদ্ধারকৃত মূর্তির মধ্যে ১টি মাণিক্য মাধবের বলে শনাক্ত করে ওই মূর্তি দিয়ে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো৷
১৯৯২ খৃষ্টাব্দে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার জেরে মাধবের শ্বশুরবাড়িতে রক্ষিত মাণিক্য মাধবের মূর্তিটি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়৷ এরপর থেকে মাণিক্য মাধব মূর্তির আদলে মাটির তৈরি মূর্তি (প্রতি বছরই তৈরি করে) রথে অধিষ্ঠান করে রথ যাত্রার আয়োজন হতো৷