শনিবার ● ১৬ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » নিবরাসের সঙ্গে থাকা বাকী ৭ যুবক কারা ?
নিবরাসের সঙ্গে থাকা বাকী ৭ যুবক কারা ?
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (১ শ্রাবণ ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১৩মিঃ) ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলামের সঙ্গে ঝিনাইদহের একটি মেসে থাকা বাকী ৭ যুবককে নিয়ে সন্দেহ দানা বেধে উঠেছে৷ এই সাত যুবক কারা, কী মিশন নিয়ে তারা ঝিনাইহে ছিলেন, কী তাদের পরিচয় এবং এখন তারা কোথায় আছেন এমন হাজারো প্রশ্ন মানুষের মনে উঁকি দিচ্ছে৷
নানা কৌতুহল ও প্রশ্নের পাশাপাশি ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে ঝিনাইদহে অতি সমপ্রতি ঘটে যাওয়া চারটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-নিয়ে৷ সন্দেহর তীর এখন আইএস থেকে দায় স্বীকার করা চাঞ্চল্যকর ঝিনাইদহের এ সব হত্যার সঙ্গে নিবরাস ইসলাম জড়িত কিনা৷
তবে ঝিনাইদহ পুলিশের কাছে এমন তথ্য আছে কিনা তা জানা যায়নি৷
ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকার সোনালীপাড়ার ভাড়া ছাত্রাবাসে থাকাকালে নিবরাস যে মোটরসাইকেলটি চালাতেন তাতে প্রায় তিনজনকে চলাচল করতে দেখেছেন স্থানীয়রা৷ আর পুরোহিত আনন্দ গোপাল ও সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস হত্যাকান্ডে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে খুনিরা৷ খ্রিস্টান হোমিও ডাক্তার সমির খাজা ও আব্দুর রাজ্জাক হত্যার সম্ভাব্য কোনো প্রত্যক্ষদর্শী আছে কিনা জানা যায় নি৷ ফলে নিবরাসের ঝিনাইদহে অবস্থানকালে ঘটে যাওয়া আলোচিত কয়েকটি হত্যা নিয়ে নতুন করে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে৷ নিবরাস ঠিক কত দিন ঝিনাইদহের ওই বাড়িতে ছিলেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ বাড়ির মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহারের দাবি, আনুমানিক চার মাস আগে নিবরাস আসেন৷ ২৮ জুন চলে যান৷ আর ফুটবল খেলার সঙ্গী স্থানীয় তরুণেরা বলেছেন, মাস খানেক তাঁদের সঙ্গে নিবরাস খেলেছেন৷ সেটা কোন মাস, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ঢাকার গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে, নিবরাস ও তার সঙ্গীরা ঝিনাইদহে ছিলেন ৩ থেকে ৩০ মে পর্যনত্ম৷ এরপর তিনি ৫ জুন থেকে বগুড়ায় ছিলেন৷ ২৫ জুন ঢাকায় আসেন৷ গুলশানে হামলার পর নিবরাসের পরিবার বলেছে, নিবরাস ৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হন৷ ৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়৷ তাতে নিবরাসসহ তিন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জঙ্গিদের মেসে রান্নার কাজের বুয়া জানান, তিনি প্রতিদিন তিন বেলা এসে চারজনের রান্না করে দিতেন৷ কিন্তু থাকতেন আটজন৷ বাকি চারজন বলতেন, তারা বাইরে থেকে খেয়ে আসেন৷ বেশির ভাগ সময় ভাতের সঙ্গে আলু ভর্তা, ডিম আর ডাল রান্না করতেন৷ মেসে একটি মোটরসাইকেল থাকত ৷ ছদ্দনাম সাঈদ (নিবরাস) বেশির ভাগ সময় মোটরসাইকেলে বাইরে যেতেন বলে কাজের বুয়া জানান৷
মোটরসাইকেলে অচেনা ঝিনাইদহ শহরে আধুনিক শিক্ষায় গড়ে ওঠা নিবরাস ওরফে সাঈদ কোথায় যেতেন, কী করতেন এমন তথ্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নেই৷ বাড়ির মালিক কাওছার আলীর ভাই তাহের আলী জানান, তাঁরা পাঁচ ভাই৷ তিনিসহ তিন ভাই আওয়ামী লীগের সক্রিয় সমর্থক৷ কাওছারসহ দুই ভাই সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন৷ তারা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন৷
এদিকে ঝিনাইদহের পুলিশ বিভিন্ন সময় জানিয়ে আসছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটী গ্রামের বেলেখাল বাজারে খ্রিস্টান হোমিও চিকিত্সক সমির বিশ্বাস ওরফে সমির খাজা, কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা এলাকার শিয়া মতবাদের হোমিও চিকিত্সক আব্দুর রাজ্জাক, সদর উপজেলার করোতিপাড়া গ্রামের পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ও সদরের উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে৷
যে সব হত্যার ব্যাপারে আইএস দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রচার করে৷ কিন্তুু নিহতদের স্বজনদের ভাষ্যমতে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে জনসম্মুখে আনা ও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেওয়ায় তারাও রয়েছেন অন্ধকারে৷
অন্যদিকে পরিচয় গোপন করে সাঈদ নামের নিবরাস ঝিনাইদহ শহরে নিবরাসসহ ৮ জঙ্গির বাসা ভাড়া নেওয়ার খবর ১৫ জুলাই শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হওয়ার ব্যাপারে ঝিনাইদহ পুলিশের কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলতে চান নি৷ তারা বিষয়টি জানেন না বলে আগে থেকেই জানিয়ে আসছেন৷
আবার বাড়ির মালিক সেনাবাহীনির সাবেক সার্জেন্ট কাওছার আলী মোল্লার স্ত্রী বিলকিস নাহার শুক্রবার জনসম্মুখে আসেন নি৷
শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা বিলকিস নাহারের বক্তব্য নিতে তার বাড়ি গেলে তিনি তাতে সাড়া দেন নি৷ অথচ আগের দিন বিলকিস নাহার অনেক কথাই মিডিয়া কর্মীদের কাছে বলেছিলেন৷