শনিবার ● ১৬ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভূমি জোনিং কাজে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করার নির্দেশ ভূমি মন্ত্রীর
ভূমি জোনিং কাজে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করার নির্দেশ ভূমি মন্ত্রীর
ঢাকা প্রতিনিধি :: (১ শ্রাবণ ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৫৫মিঃ) ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এম.পি. বলেছেন, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জোনিং কাজে সংশ্লিষ্টদের আত্মনিয়োগ করতে হবে৷ তিনি বলেন, ভূমির বিদ্যমান আইন অনুসারেই কর্মসম্পাদন, আদেশ ও নির্দেশ পালন করতে হবে৷ পেন্ডিং রাখা বা দীর্ঘসূত্রিতার কোন সুযোগ ভূমি ব্যবস্থাপনায় থাকবে না৷
১৬ জুলাই রাজধানীর নিউ ইস্কাটন বিয়াম ফাউন্ডেশনের শহীদ এ.কে.এম.শামসুল হক খান মেমোরিয়াল অডিটরিয়াম হলে জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্পের আওতায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের ঢাকা বিভাগের দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী এ কথা বলেন৷
মন্ত্রী শরীফ বলেন, শিল্প, কলকারখানা গড়ার নাম করে শত শত একর আবাদি ফসলী জমি বিনষ্ট করা যাবেনা৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যত্রতত্র শিল্প কারখানা গড়ে না তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত রেখেছে৷ তিনি বলেন, ভূমির বিষয়টি ইচ্ছেমত করা যায় না৷ ব্রিটিশ আমলে একধরনের ব্যবস্থাপনা ছিল, পাকিস্তান আমলে আরেক ধরনের ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হয়, ১৯৬৬ সালে হিন্দু সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল৷ অদ্ভুত বিষয়গুলো সেই আমল থেকে চলে এসেছে৷ পরিত্যক্ত সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে নানা সময়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার এ ধরনের সম্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটাতে চায়৷ মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন শিল্পপতি ও ভূমি ব্যবসায়িরা শিল্প ও আবাসনের নামে শত হাজার একর জমি শিলিং বহির্ভুতভাবে ক্রয় করছেন, আইন প্রণয়ন ও সংযোজনের মাধ্যমে এসব বন্ধ করা হবে৷ মন্ত্রী বলেন, বিদেশিদের কাছে আমরা মাটি বিক্রি করব না৷ তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশের জনগণকে বোঝা মনে করেন না, তিনি জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে আগ্রহী৷ মন্ত্রী বলেন, টপসয়েল হ্রাস পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এবং দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে৷ মন্ত্রী সাহসিকতার সাথে জনস্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক থাকার আহ্বান জানান৷ মন্ত্রী সকলের মতামত থেকে ৩৭টি মতামতের বিষয় বিবেচনা করে দেখবেন বলে সেমিনারে জানান৷
সরকারের ভূমি ব্যবহার নীতিমালা-২০০১ বাসত্মবায়নের লৰ্যে দেশব্যাপী ভূমি জোনিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে৷ এর উদ্দেশ্য হলো কৃষি জমির অবক্ষয় রোধ ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা৷ কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাসের বর্তমান ধারা যুক্তিযুক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জমির প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য ও রাসায়নিক গুণাগুণ বিবেচনা করে কৃষি জমি সুরক্ষা এবং ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা ভূমি জোনিং এর মূল লৰ্য৷ ভূমি জোনিং বাস্তবায়নে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমি জোনিং ম্যাপ ও প্রতিবেদন অনুযায়ী জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা; দুই বা তিন ফসলী কৃষি জমি শুধুমাত্র কৃষি কাজে ব্যবহৃত হবে; মত্স্য চাষের জন্য নদী-নালা, খাল-বিল, দিঘী, পুকুর সংরক্ষণ করা হবে৷ চিংড়ি মহাল ঘোষিত এলাকায় শুধুমাত্র চিংড়ি চাষ করা যাবে; বিদ্যমান প্রাকৃতিক বনায়ন এবং সাংগঠনিকভাবে গড়ে ওঠা সামাজিক বনায়ন সংরৰণ করা; পাহাড় ও টিলাভূমি কর্তন রোধ করা; কৃষি, মত্স্য, বনভূমি ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণির জমিতে পরিকল্পিত আবাসিক ভবন নির্মাণ, শিল্প কারখানা স্থাপন, রাসত্মাঘাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ভূমির যুক্তিসংগত ব্যবহার নিশ্চিত করা; আবাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে উত্সাহিত করা; স্বল্প পরিমাণ জমিতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা; টপসয়েল বা কষি জমির মাটির উপরিভাগ কাটা বন্ধ করা; ইটের ভাটায় টপসয়েল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা৷ ভূমি জোনিং কার্যক্রম বাসত্মবায়নে সংশিস্নষ্ট ইউএনও কে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হবে৷ সেমিনারে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, কানুনগো, এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি, জেডএসও’র প্রতিনিধিরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন৷ ৮টি বিভাগের বিভাগীয় পর্যায়ের ভূমি জোনিং প্রকল্পের প্রথম কর্মশালা ঢাকা বিভাগ থেকে শুরু হয়৷
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে ভূমি সচিব মেছবাহ উল আলম, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব কফিল উদ্দিন, ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), সিনিয়র ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানার গোলাম সরওয়ার বক্তব্য রাখেন৷