রবিবার ● ১৭ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » গাজীপুরে সাংবাদিকের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
গাজীপুরে সাংবাদিকের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: অনলাইন সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানের গ্রামের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা৷
১৬ জুলাই শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামে এঘটনা ঘটেছে৷ এসময় ঘরের ভিতরে থাকা সকল প্রকার আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷
ঘটনার পর কাপাসিয়া থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ এলাকার ইউপি সদস্য (মেম্বার) আফজাল হোসেন ফরাজী ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগর হোসেন খাঁন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ পাশাপাশি এলাকাবাসী ওই বাড়িতে ভীড় করছে৷ এরকম ঘটনা ওই এলাকায় এটাই প্রথম ঘটেছে৷
ঠিকানা পাবুর ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনের নামে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উপজেলা ও থানা ধ্বংস করার সর্তক বার্তা দিয়ে চিঠি দেয়ার পাঁচদিন পরের এঘটনায় ওই এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে ৷ এর আগে ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার উপজেলার আমরাইদের ইয়াকুব আলী সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়ে পটকার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গী সংগঠনের সতর্ক বার্তা পাঠানোর পর দ্বিতীয় ঘটনা এটি৷
কে বা কারা রাতের আধাঁরে বাড়ির লোকদের অবরুদ্ধ করে আগুন দিয়ে বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে তা জানতে পারেনি পুলিশ৷ পুলিশের ধারণা পূর্ব শত্রুতার জেরে এঘটনা ঘটতে পারে৷
প্রতিবেশী আশরাফ আলী জানান, বাড়ির লোকজন রাত তিনটার দিকে আমাদের ফোন দিয়েছে এবং ডাকাত এসেছে বলে জানিয়েছে৷ পরে আমরা এলাকাবাসী মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়ির দক্ষিণ পাশে থাকা মাটির তৈরী একটি ঘরে আগুন জ্বলতে দেখি এবং সকলে মিলে তা নিভানোর চেষ্টা করে প্রায় আড়াই ঘন্টা পর তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই৷
সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানের মা মনোয়ারা বেগম জানান, আমরা যে ঘরে থাকি সে ঘরসহ সকল রুমের দরজা বাহিরে থেকে আটকানো ছিল৷ এমনকি বাহিরে থেকে বাড়িতে ঢোকার সদর গেইটও দুর্বৃত্তরা বন্ধ করে রেখেছিল৷ যার কারণে বাহিরে কি হচ্ছে তা বুঝতে পারিনি৷ তিনি বলেন, আমার তিন ছেলে রয়েছে তারা কেউ বাড়িতে না থাকায় এমনটি ঘটানোর সুযোগ পেয়েছে তারা৷ এর আগেও প্রায় দুই বছর আগে আমাকে বাড়িতে একা পেয়ে তিন মুখশধারী গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়েছে৷
সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান জানান, আমি পেশাগত কাজের জন্য বাড়ির বাহিরে (গাজীপুরে) থাকি৷ বাড়িতে আসলে এই ঘরটায় থাকতাম৷ কেউ শুধু বাড়ি পুড়ানোর জন্য এখানে এসছে এটা আমার বিশ্বাস হয় না৷ তাদের (দুর্বৃত্তদের) টার্গেট ছিল আমার কোন ক্ষতি করা৷ তারা হয়তো ভেবেছিল আমি বাড়িতে আছি এবং আমাকেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে হত্যা করার চেষ্টা এটি৷ বিষয়টি ছোট করে দেখার কিছু নেই কারণ দুর্বৃত্তরা এখানে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে এঘটনা ঘটিয়েছে৷ কারা এঘটনা ঘটিয়েছে তা আমাদের বুঝতে বাকি নেই৷ আমরা পুলিশের পরামর্শে ও তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি এখন প্রকাশ করবো না৷
ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন ফরাজী জানান, আমি খুব ভোরে এঘটনা শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি৷ তবে যারাই কাজটি করেছে খুব খারাপ করেছে৷ এখানে ডাকাতি বা শুধুমাত্র ঘরে আগুন দেয়া দুর্বৃত্তদের আসল উদ্দেশ্য ছিলনা, তাদের মনে অন্য কিছু ছিল৷ এর সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন কেননা রাতে ঘুমিয়ে থাকলে কেউ এসে বাড়ি পুড়িয়ে দিবে এটা সত্যিই খুব দুঃখ জনক৷
সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানের চাচা পাবুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আব্দুল আলিম মাষ্টার বলেন, সর্বপ্রথম বিষয়টি আমি আচ করতে পেরে ডাকাত এসেছে মনে করে ঘরের ভিতরে থেকে মোবাইলের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে বিষয়টি জানাই৷ স্থানীয়রা খবর পেয়ে সঠিক সময়ে না আসলে এরচেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি বা বড় ঘটনা ঘটার সম্ভবনা ছিল৷ পরে আমিসহ সকলে মিলে আড়াই ঘন্টার বেশি সময় চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷
তিনি আরও জানান, বাহিরে অনেক লোকজনের সমাগম ছিল এবং ঘরের বাহিরে থেকে কোন শব্দ শোনা গেছে৷ পরে এলাকাবাসীর উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেছে৷
কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আগুন লাগার পর ভোর সাড়ে চারটার দিকে আমাকে জানালে সাথে সাথেই পাঁচ পুলিশ সদস্যকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি৷ এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে৷
উল্লেখ্য, ১২ জুলাই মঙ্গলবার কাপাসিয়া উপজেলা ও থানা ধ্বংস করার হুমকির সতর্ক বার্তা দিয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পাবুর গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে ডাকযোগে চিঠি দেয় একটি জঙ্গি সংগঠন৷ চিঠি দেয়ার এঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে৷