রবিবার ● ১৭ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে ২ শ’ মেসের তথ্য নেই পুলিশের কাছে : ইমাম রোকনুজ্জামানকে অব্যাহতি
ঝিনাইদহে ২ শ’ মেসের তথ্য নেই পুলিশের কাছে : ইমাম রোকনুজ্জামানকে অব্যাহতি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহ যেন মেস আর ছাত্রাবাসের শহর৷ শহরে দুই শতাধিক ছাত্রাবাস আর মেস থাকলেও সেখানে কারা থাকে, কেন থাকে, কী করে, কার মেস, ঠিকানা কী, কজন থাকে, কত দিন আছে-এসব ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোন তথ্য নেই৷ জেলা শহরের এমনই একটি মেসে চার মাস আগে উঠেছিল গুলশান হামলার আলোচিত জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও তার সহযোগীরা৷
সাইদ ছদ্মনামে নিবরাসসহ দুজনকে মেসে তুলে দিয়েছিল মসজিদের ইমাম ইবি ছাত্র রোকনুজ্জামান রোকন৷ ন্যাক্কারজনক গুলশান হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোকনুজ্জামানসহ নিবরাসের সহযোগী সন্দেহে পাঁচজনকে আটকের পর মসজিদের ইমামের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে মসজিদ কমিটি৷
শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদটিতে নতুন একজন ইমাম জুমার নামাজ পড়িয়েছেন৷ গুলশান হামলার তদন্তকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল ঝিনাইদহের এই মেসরূপী জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায়৷
তবে এসব ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনও কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করে আসছে৷ আটক, গ্রেপ্তার, অভিযান বা জঙ্গি নিবরাস সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়ে আসছে সংবাদকর্মীদের নানা প্রশ্নে৷
সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, দিনের পর দিন ঝিনাইদহ জেলা শহরের সোনালীপাড়ার মেসে অবস্থানকারী সাইদ নামের ছদ্মবেশী জঙ্গি নিবরাস ইসলামকে কম-বেশি পাড়ার শিশু থেকে যুবক সবাই চিনত৷ সুদর্শন সাইদ নামধারী জঙ্গি নিবরাস একটি লাল রঙের মোটরসাইকেলে মেস থেকে প্রায়ই শহরে যেত বলে তারা জানিয়েছেন৷ তার সঙ্গে দু’একজন থাকত৷ আর প্রায়ই বিকেলের দিকে মেসের পাশে কিশোর-তরুণদের সঙ্গে ফুটবল খেলত, কখনো বা কিশোরদের সঙ্গে সামান্য আড্ডা দিত৷
নিবরাসের খাদ্য-খাবার আর পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল খুবই সাদামাটা৷ বাইরে সে মোবাইল ব্যবহার করত না, মসজিদে নামাজ পড়তেও দেখেননি স্থানীয়রা৷ ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলার পর গণমাধ্যমে ছবি দেখে কারো কারো চোখে ভেসে ওঠে তাদের পাড়ার সাইদের সেই চেহারা৷
তবে ঈদের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় একটি দল ওই মেসে হানা দেয়ার পর, সাইদ নামটি এলাকার মানুষের মুখে মুখে ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে৷ ছবির সঙ্গে বারবার মেলাতে থাকে সাইদকে, তখন শিশু-কিশোর, তরুণ, যুবক প্রায় সবাই নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের সেই সাদামাটা, সুদর্শন চেহারার যুবকটিই ছিল ভয়ঙ্কর আইএস জঙ্গি নিবরাস ইসলাম৷
লেখাপড়ায় অমনোযোগী আর বাবা-মার বখে যাওয়া ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়ে গত ৪ মাস আগে সাইদ ছদ্মনামে ঝিনাইদহ জেলায় শহরের সোনালীপাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট কওসর আলীর বাসায় মেস ভাড়া নেয় ঘাতক জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও তার সহযোগীরা৷ নিবরাসকে মেস ঠিক করে দিয়েছিল মেস-সংলগ্ন জামে মসজিদের ইমাম ইবি ছাত্র রোকনুজ্জামান রোকন৷
ঝিনাইদহ যেন ছাত্রাবাসের শহর : সরেজমিন ঝিনাইদহ জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রমতে জানা গেছে, জেলা শহরে দুই শতাধিক ছাত্রাবাস ও মেস আছে৷ এসব মেসে অবস্থানকারীদের বড় একটি অংশ ঝিনাইদহ-সংলগ্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী৷
এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত, এদের মধ্যে কেউ মসজিদে ইমামতি, মাদ্রাসায়, কিন্ডারগার্টেনে, বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, টিউশনিসহ নানা পেশায় যুক্ত৷
এসবের পাশাপাশি অনেক ছাত্র, শিক্ষার্থী বাসাভাড়া করে শহরে অবস্থান করছে৷ কিন্তুু কে কী করে তার কোনো হিসাব নেই পুলিশের কাছে৷ জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও তার সহযোগীরা অবস্থানকারী শহরের ৩নং পানির ট্যাঙ্কি এলাকার সোনালী-খোন্দকার পাড়াতেও ৪-৫টি মেস রয়েছে৷
ঝিনাইদহ সদর থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, দু’একদিনের মধ্যেই এসব মেস, ছাত্রাবাসের ব্যাপারে বিসত্মারিত তথ্য-উপাত্ত তাদের হাতে আসবে, পুলিশের পক্ষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, সমপ্রতি ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ছয় জঙ্গির মধ্যে অন্যতম নিবরাস ইসলাম হামলার আগে চার মাস ধরে ঝিনাইদহ শহরে অবস্থান করছিল৷ এ চার মাস ধরে ভয়ঙ্কর জঙ্গি নিবরাস ছোট্ট শহর ঝিনাইদহে কোথায় কী করছিল, কী ছিল তার মিশন ?
কারা আসা-যাওয়া করত এসব নিয়ে উদ্বেগ, উত্কন্ঠা আর কৌতূহল ক্রমেই বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ এ কয়েক মাসের মধ্যেই ঝিনাইদহে ঘটে যায় পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যাসহ বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড৷ যার দায় স্বীকার করে আইএস জঙ্গি সংগঠন৷
গুলশান হামলার কয়েক দিন আগে ২৮ জুন মেস ছেড়ে চলে যায় আইএস জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও তার সহযোগীরা৷