শুক্রবার ● ২২ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহের র্যাবের কর্মকান্ড : নিখোঁজ তালিকায় নিহত ও প্রতিবন্ধিদের নাম
ঝিনাইদহের র্যাবের কর্মকান্ড : নিখোঁজ তালিকায় নিহত ও প্রতিবন্ধিদের নাম
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (৭ শ্রাবণ ১৪২৩ বালা : বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫০মিঃ) ঝিনাইদহে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে দেশব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে র্যাবের করা নিখোঁজ ২৯ ব্যাক্তির নামের তালিকা নিয়ে ৷ র্যাবের তালিকায় নিহত, বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ও বাড়ি ফিরে আসা ব্যক্তিদের নাম রয়েছে ৷ ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার র্যাবের তালিকা নিয়ে জেলাব্যাপী অনুসন্ধান করে এ তথ্য মিলেছে ৷ র্যাব সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত তালিকায় দুইজন নিখোঁজ থাকার প্রমান মিলেছে ৷
এরা হলেন ঝিনাইদহ শহরের উপশহরপাড়া মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা ও সদরের হলিধানী গ্রামের রাশেদুজ্জামান রোজ ৷ তবে পুলিশের নিখোঁজের তালিকায় সোহেল রানা থাকলেও রোজ নেই ৷
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, র্যাবের তালিকায় ঝিনাইদহ পৌর এলাকার চরখাজুরা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দুলাল (৩০) ও একই গ্রামের গোলাম আজম পলাশ (৩২) এর নাম রয়েছে ৷ অথচ ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রয়ারী সদর উপজেলার ডেফলবাড়ি গ্রামের মাঠে এই দুই যুবকে কে বা করা গুলি করে হত্যা করে ৷ পরিবারের ভাষ্য মতে ডিবি পুলিশ পরিচেয়ে এই দুই যুবককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করা হয় ৷
এ দিকে র্যাবের তালিকায় বাড়ি ফিরে আসা, বিদেশে চাকরী করা ও প্রতিবন্ধিদের নামও পাওয়া গেছে ৷ এ ছাড়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া জেলার নিখোঁজ থাকা ১০ ব্যক্তির নাম ওই তালিকায় নেই ৷ র্যাবের তালিকায় ৬২ নং ক্রমিকে সোহেল ও ৬৩ নং ক্রমিকে মামুন রায়হান নামে দুই প্রতিবন্ধির নাম রয়েছে ৷
মামুনের বোন জেসমিন ও সোহেলের বোন শারমিন জানান প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে প্রায় তারা হারিয়ে যেত ৷ এ জন্য থানায় জিডি করা হয়েছিলো ৷
তথ্যানুসন্ধান করে জানা গেছে, র্যাবের তালিকায় থাকা কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই গ্রামের মাজেদুল হক (৩৫), দাদপুর গ্রামের আবু সাইদ ও বলরামপুর গ্রামের মো. হাসান আলী (৩০) নিখোঁজ না ৷ তালিকা প্রকাশের আগ থেকেই তারা বাড়িতেই আছেন ৷ তিনজনের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাগারাগি ও অভিমান করে তারা বাড়ি থেকে চলে গেলে থানায় জিডি করা হয় ৷ হয়তো সেই জিডির ভিত্তেত্বে এই তালিকা হয়েছে, যোগ করেন তারা ৷ ২০৬ নং ক্রমিকে মহেশপুরের গোয়ালহুদা গ্রামের বাপ্পি ও ২৩২ নং ক্রমিকে একই গ্রামের ওয়াফিল কেও বাড়ি পাওয়া গেছে ৷
ওয়াফিলের বাবা ইয়াকুব হোসেন জানান, ১১ বছর বয়সে তার ছেলে ও বাপ্পি নামে তার এক বন্ধু নিখোঁজ হয়ে যায় ৷ পরে জানতে পারি ইংরেজী পরীক্ষা ভাল না হওয়ার কারণে বাপ্পি ও ওয়াফিল ৬ দিন পালিয়ে ছিল ৷ এ ঘটনায় আমি থানায় জিডি করি ৷ ৩ বছর পর র্যাবের করা তালিকা দেখে তিনি বিস্মত হয়েছেন বলে জানান ৷
ইয়াকুব আরো জানান, ২/৩ দিন আগে মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাকে ডেকেছিলেন ৷ আমি সেখানে সব বলে এসেছিলাম৷ এখন র্যাব অফিস থেকে ফোন করে দেখা করার কথা বলা হচ্ছে ৷ হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাচারিতোলা গ্রামের ছব্দুল হোসেন জানান, তার জামাই মো. মতিয়ার রহমান (৩০) মেয়ের সাথে রাগ করে সাগান্না গ্রামে তার নিজ বাড়ি চলে যায় ৷ আমি বিপদের কথা ভেবে থানায় জিডি করি৷ র্যাব আমার বাড়িতে তদন্ত করতে আসে৷ আমি বলি পারিবারিক ঝামেলার কারণে আমি জিডি করেছিলাম ৷ র্যাব চলে যাওয়ার ৩ দিনের মাথায় দেখি তালিকায় আমার জামাইয়ের নাম ৷
একই উপজেলার আদর্শ আন্দুলিয়া গ্রামের আকাশ জানান, তার ভাই র্যাবের তালিকায় থাকা ৮১ নং ক্রমিকের মো. শফিকুল ইসলাম বিদ্যুত্ এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন ৷ পরে সে বাড়ি ফিরে আসে ৷
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর আইয়ূব হোসেন জানান, তার এলাকার কাশিপুর গ্রামের মো. শামীম আলী (২৬) ও মো. মোজাম্মেল মোল্যা (২৮) কে র্যাব খুজতে এসেছিলো ৷ কিন্ত তারা কেও নিখোঁজ না ৷ শামিম বাড়িতে আছে আর মোজাম্মেল বিদেশে চাকরী করে ৷ তিনি জানান, মোজাম্মেল ঝিনাইদহ শহরের হামদহ থেকে অপহরণ হয়েছিলো ৷ পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে৷ এ ঘটনায় আমরা জিডি করি ৷
র্যাবের তালিকায় শৈলকুপার নিখোঁজ থাকা ৮ জনের মধ্যে সবাই বাড়িতে আছেন, কেওবা আছেন বিদেশে ৷ শৈলকুপার হুদা মাইলমারী গ্রামের আমিজ উদ্দীন জানান, তার ছেলে মাসুমকে সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যায় ৷ এ ঘটনায় আমি জিডি করি ৷ পরে আমার ছেলে ফিরে আসে ৷ একই উপজেলার চরআউশিয়া গ্রামের নাইমের নাম র্যাবের তালিকায় ৮৪ নং ক্রমিকে রয়েছে ৷ কিন্তু তার পরিবারের ভাষ্য নাইম বিদেশে চাকরী করছে ৷ শৈলকুপার সাতগাছি গ্রামের মো. মজিবর খা (২৮) বোয়ালিয়ার উজ্জল, ওয়াসিম আকরাম (২৫), উমেদপুরের মো. রবিউল ইসলাম (২৫), বাজারপাড়ার মো. রফিকুল ইসলাম (২২) ও কৃষ্ণপুর গ্রামের মো. তোতা (২৫) মিয়া নিখোঁজ না বলে তাদের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে ৷
গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, র্যাবের তালিকায় নিখোঁজ থাকা কালুহাটী গ্রামের মো. আশিকুর রহমান রিপন (২৪) ও আক্তারুজ্জামান বাড়িতেই আছেন ৷ ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে এরা নিখোঁজ থাকার কারণে জিডি করা হয় ৷ এদিকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিয়ে নিয়ে যাওয়া ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন ৷ দীর্ঘদিনেও তাদের কোন সন্ধান মেলেনি ৷
নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিরা হলেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ষাটবাড়িয়া মসজিদের ইমাম আব্দুল হাই (৩৫), ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চাপড়ী গ্রামের দশম শ্রেনীর ছাত্র হাসান আলী, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের কোরাপাড়া বটতলা এলাকার হোসেন আলী মোল্লার ছেলে যুবলীগ কর্মী জাহিদ ওরফে কোবরা জাহিদ, শৈলকুপা উপজেলার চরফুলহরি গ্রামের আমিরুল ইসলাম মন্ডলের ছেলে শাহিন হোসেন পরশ, শহরের আদর্শপাড়া কচাতলার আবুল কালাম আজাদের ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র আব্দুর রব, ঝিনাইদহ শহরের সোনালী পাড়ার সাবেক সেনা সদস্য কওছার আলী, তার দুই ছেলে বিনছার আলী ও বেনজির আলী, আরাপপুর চানপাড়ার মাদ্রাসার শিক্ষক শাহ আলমের ছেলে আজমুল হুদা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ষাটবাড়িয়া গ্রামের আকরামের ছেলে৷ তাকে ঢাকার খিলগাঁও এলাকার জনৈক মাহবুবের বাসা থেকে র্যাব পরিচয় দিয়ে নিয়ে যায় ৷
জেলাব্যাপী নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন সাংবাদিক জাহিদুর রহমান তারিককে জানান, বিভিন্ন সময় জেলায় ২৪ জন নিখোঁজের খবর তাদের কাছে ছিল ৷ কিন্তুু নিখোঁজ থাকা সবাই বাড়ি ফিরে এসেছে ৷ কেওবা বিদেশ গেছে চাকরী করতে ৷ সর্বশেষ পুলিশের পক্ষ জেলা ৪ জন নিখোঁজ থাকার কথা বলা হচ্ছে ৷
এরা হলেন মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহল রানা, শৈলকুপার উজ্জল, মজেদুল ও তোতা মিয়া৷ তবে সোহেল রানা ব্যতিত বাকী তিনজনের সর্বশেষ তথ্য পুলিশের কাছে নেই ৷ তালিকা নিয়ে র্যাবের একটি সুত্র জানায়, বিভিন্ন সময় ঝিনাইদহের বিভন্ন থানায় করা জিডির ভিত্তিত্বে নিখোঁজের এ সব তালিকা করা হয়েছে ৷ হারিয়ে বা রাগারাগি করে বাড়ি ছাড়া ব্যক্তিরা ফিরে আসার কারণে নিখোঁজের তালিকা এখন হাল নাগাদ করে দেখা হচ্ছে বলেও সুত্রটি জানায় ৷ র্যাবের করা তালিকা বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, জেলার ২৯ জন নিখোঁজের মধ্যে ২ জন নিহত হয়েছেন ৷ ২ জন প্রকৃত নিখোঁজ আছেন ৷ বাকী ২৫ জনের মধ্যে কেও বিদেশে আবার কেও বাড়িতে রয়েছেন ৷