মঙ্গলবার ● ২৬ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » বান্দরবান-রুমা সড়ক মরণফাঁদে পরিণত : যেকোন সময় সড়কপথ বিচ্ছিন্নের আশংকা
বান্দরবান-রুমা সড়ক মরণফাঁদে পরিণত : যেকোন সময় সড়কপথ বিচ্ছিন্নের আশংকা
বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি :: (১১শ্রাবণ ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.২০মিঃ) স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা,পুরোপুরি অপরিকল্পিত, অদক্ষ প্রকৌশলগ প্রযুক্তি ব্যবহার এবং নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় প্রায় ১৫কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩টি আরসিসি সেতু কার্যত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে৷ ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে গত ৩দিন ধরেই রুমা-বান্দরবান সড়কে৷ ফলে রুমা উপজেলা সদরের সাথে বান্দরবান জেলা সদরের মাধ্যে সড়ক যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে৷ যেকোন সময় সড়কপথ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে৷
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনীর ১৯ নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়নের তত্বাবধানে সেতুগুলো নির্মিত হয়েছে৷ মূল সড়কের দুইপাশ এপ্রোচ সড়ক শক্তিশালী না করে ড্রামশিটের প্রটেকশন দেয়ায় সড়কের মরণদশা আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে৷ সাংগু নদীর তীরে রুমা গ্যারিসনের প্রধান ঘাটে নির্মিত বড়সেতুর পাশেই রুমা বাসষ্টেশন৷ এ বাসষ্টেশন থেকে রুমা সরকারি কলেজের সামনে হয়ে রুমা উপজেলা পরিষদ অফিস পর্যন্ত প্রায় ৫কিমি এলাকায় কয়েকটি পাহাড়ি ঝিরির ওপর নির্মত হয় ৩টি আরসিসি সেতু৷ সেতুগুলো মূলসড়ক চেয়ে গড়ে ৩/৪ফুট নিচুতেই নির্মিত হয়েছে৷ প্রকৌশলগত নিয়মানুসারে সড়কপথ থেকে গড়ে ৪/৫ ফুট উচুঁ করেই সেতু নির্মাণ করার কথা৷ এ ৩টি সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি৷ সংবাদপত্রে কিংবা সরকারি দপ্তরগুলোতে সড়ক ও সেতুগুলোর নির্মাণের কোন প্রকার দরপত্র প্রকাশ করা ছাড়াই কর্মকর্তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজভিত্তিক নির্মাণ কাজ করানো হয়েছে৷ এসব কারণেই সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর পরই চলতি বর্ষার শুরুতেই ভারী বর্ষণে এপ্রোচসড়ক ছিন্ন-ভিন্ন ও দেবে গেছে পড়েছে৷ মঙ্গলবার দুপুরে পাহাড় কেটে মাটির আস্তর দিয়ে যানবাহন চলাচল খানিকটা সচল রাখার চেষ্টা করতে দেখা গেছে সেনা সদস্যদের৷ রবিবার বিকেল থেকে ও মঙ্গলবার দুপুর রুমা উপজেলা সদরে অবস্থানকালে ওই সেতুগুলোর মুমুর্ষ অবস্থা অবলোকন করেছেন সরেজমিন এ প্রতিনিধি৷ সেই সময় দেখা গেছে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ এবং সড়কের মরণফাঁদের অবস্থা৷ তাছাড়াও রুমা উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে এলজিইডির মাধ্যমে নির্মাণাধীন নাইক্যঝিরির ওপর আরসিসি সেতুর কাজ রহস্যজনকভাবে বন্ধ রাখায় সেই পয়েন্টে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে বিশাল পরিসের কাদায়৷ এ সেতুর দুইপাশে ৪টি পিলারের একাংশ কাজ শেষ করেই নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখায় বর্ষার এ সময় যারবাহন চলাচল তো দুরে থাক, স্থানীয়দের পায়ে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে৷ জীবনের অতিঝুঁকি নিয়েই ছোট-বড় যানবাহনগুলো চলাচল করছে বর্তমানে৷ এলজিইডির এ আরসিসি সেতু নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় কোটি টাকা৷ সেনা নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে রুমা উপজেলা পরিষদ অফিস বরাবর পর্যন্ত মূল সড়কপথ ও ভগ্নদশাগ্রস্থ সেতুগুলো পুননির্মাণের কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নেই অজুহাতে সেইসব সেতুও পুননির্মাণ করা হচ্ছে না৷ রুমা বাজার থেকে পর্যটন কেন্দ্র বগালেক,ক্যক্রাডং এবং তাজিংডং পাহাড়ের এলাকা পর্যন্ত সড়কপথ প্রশস্থকরণসহ নতুন করে নির্মাণ ও প্রযোজ্য এলাকাসমুহে সেতু নির্মাণে সেতু ও সড়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৯৬ কোটি বরাদ্দ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ তিনি গত ৯ জুলাই বান্দরবান জেলার মেঘলায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকারে এসব তথ্য জানান৷ তিনি ওই সময় জানিয়েছেন, বান্দরবান জেলা সদর থেকে রুমা উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কিমি দীর্ঘ সড়কপথ ও সেতুগুলোর পুননির্মাণে ১৬কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে৷ কিন্তু বিপুল অর্থ বরাদ্দ সত্বেও এ সড়কের নাজুক অবস্থা জিইয়ে থাকায় ভুক্তভোগী জনগণসহ সচেতন নাগরিকদের মাঝে সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়নের অপরিকল্পিত ও দুর্নীতির কর্মকান্ড নিয়ে নানামুখি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ রুমা সফরকালে স্থানীয়রা (নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ করেন, অন্য সরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকাশ্যে দরপত্র প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ গুলো সম্পাদন বা বাস্তবায়ন করে থাকে৷ কিন্তু সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগ তা কখনও করে না৷ সেনাবাহিনীর নির্মাণ কাজের কোন জবাবদিহিতাও নেই, সংবাদপত্রে প্রকাশ্যে দরপত্রও নেই৷ ফলে অভিজ্ঞ ঠিকাদারদের পক্ষে তাদের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগও নেই৷ তাই তারা যেনতেনভাবেই নির্মাণ কাজগুলো শেষ করে থাকে৷ এসব কারণে সেইসব কাজ জনগণের জন্যে কল্যাণকরের পরিবর্তে মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে৷
এসব বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে রুমা এলাকায় সেতুসহ সড়কপথ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত সেনা নির্মান প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি অর্থবরাদ্দ সাপেক্ষেই উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে৷ রুমা বাজার থেকে বগালেক পর্যন্ত ভগ্নদশায় পরিণত সেতু ও সড়কপথের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগের কাছে অর্পিত হলে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে৷ ওই কর্মকর্তা বলেন, রুমা উপজেলা সদরে যাবারপথে যে ৩টি আরসিসি সেতুর এপ্রোচসড়ক বিনষ্ট বা ঢেবে গেছে সেইসব খুব শিঘ্রই পুননির্মাণ করা হবে,আপাতত যানবাহন চলাচল সচল রাখার লক্ষ্যে মাটির আস্তরন ও ড্রামশিটের প্রটেকশন দেয় হচ্ছে৷ বান্দরবান-রুমা সড়কের ৪৮কিমি পথের নানাস্থানে পাহাড়ের অংশ ধসে পড়েছে৷ সড়কপথের অবস্থা খুবই করুণ৷