মঙ্গলবার ● ২৬ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » নবীগঞ্জে ব্যঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার
নবীগঞ্জে ব্যঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: নবীগঞ্জে প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং বাণিজ্য ব্যবসা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক মহলে বর্তমানে সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ গ্রামাঞ্জলের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীকে একাধীক বিষয় শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয় আর শহরাঞ্জলে শিক্ষার্থীকে করতে হয় বাধ্যতামুলক কোচিং৷ তবে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই প্রাইভেট ও কোচিং-বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকরা৷ ২০১২ সালে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা’ জারি করা হয়৷ কিন্তু কাগজপত্রে এ নীতিমালা থাকলেও নবীগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র৷ নবীগঞ্জ শহরেই অসংখ্য শিক্ষক নীতিমালা তোয়াক্কা না করে নবীগঞ্জ শহরের আনাচে-কানাচে ঘড় ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট-কোচিং বানিজ্য করছেন৷ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাও নোট-গাইডকে প্রধান অবলম্বন করে নিয়েছেন৷ ফলে সরকার নিষিদ্ধ করার পরও বাড়ছে নোট-গাইড বই বাণিজ্যর হিড়িক৷ বাড়ছে বাধ্যতামুলক প্রাইভেট-কোচিং বানিজ্যের রমরমা ব্যবসা৷ সমপ্রতি সরকার নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাইভেট-কোচিং নিষিদ্ধ করার পরও নবীগঞ্জে থামেনি প্রাইভেট বা কোচিংয়ে পড়ানোর বাধ্যতামুলক প্রবণতা৷ নবীগঞ্জের বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুল ও হাই স্কুলের শিক্ষদের পাশাপাশি বেশি বেপরোয়ার মতো কোচিং বাণিজ্য করছেন নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষকরা৷ কলেজ শিক্ষকরা অবৈধভাবে কোচিং বাণিজ্য করে বাধাগ্রস্থ করছেন সুনাম অর্জনকারী কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের৷ তারা সরকারের নীতিমালা লঙ্ঘন করে তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেপরোয়া প্রাইভেট কোচিং নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন৷ যদিও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং বেআইনী৷ তারপরও নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের কিছু অসাধু শিক্ষক ক্লাশের পূর্বে ও পরে, শহরের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে কোচিং সেন্টার খোলে তারা নিয়মিতভাবে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন৷ যার কারণে শিক্ষকের খাচায় বন্ধি হয়ে আছেন কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা৷
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নিকটস্থ পৃথক একটি বাসায়, খাদ্য গুদামের পাশের একটি বাসায়, শহরের হিরা মিয়া গার্লস হাই স্কুলের পাশে একটি মাকের্টে, ওসমানি রোডের আনোয়ার বিপনীতে, শহরের ধান সিড়ি নামক স্থান,ডাকবাংলার পাশে ভাড়া বাসা,মধ্যবাজার ভাড়া বাসাসহ পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যঙ্গের ছাতার মত প্রাইভেট কোচিং সেন্টার খোলে সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত তাদের অবৈধ কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা৷ এছাড়াও শহরে বিভিন্ন নামে আছে একাধিক কোচিং সেন্টার৷ এসব দেখার যেন কেউ নেই? প্রশাসন যেন এসব শিক্ষার নামে কোচিং বানিজ্য দেখে ও না দেখার ভান করছেন৷
কথা আছে যে অর্থ সম্পদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চরিত্র৷ যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন করার কথা তাদের চরিত্র এখন বিচিত্র রকমের এমনকি প্রশ্নবিদ্ধ৷ শিক্ষক নির্যমানুবর্তিতার শিক্ষা দেন যে জীবন নিয়মের সুতায় বোনা৷ কিন্তু, তাদের মধ্যে কিছু নামধারী অর্থলোভী শিক্ষক সরকারী নিয়ম-নীতিমালা লঙ্ঘন করছেন প্রতিনিয়ত৷ এসব শিক্ষকদের মনোযোগ এখন আর শিক্ষাদানের দিকে নয়, স্বচ্ছল অভিভাবকের সম্মানদের প্রাইভেট বানিজ্য ও কোচিং পড়ানোর দিকে তাদের দৃষ্টি৷
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভাল করে না পড়িয়ে নামমাত্র দায়সারা ক্লাস নিয়ে প্রতারণা করছেন৷ ঠকাচ্ছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের৷ প্রাইভেট কোচিং বানিজ্যের প্রভাব পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর৷ যে সব শিক্ষার্থী প্রাইভেট কোচিং করে তাদের প্রতি এসব শিক্ষকদের এক ধরণের আচরণ আদুরে আদুরে ব্যবহার৷ আর অন্যদিকে, যে সব শিক্ষার্থী কোন শিক্ষকের নিকট প্রাইভেট কোচিং করে না ওই সব শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকদের অমনোযোগিতা, তাদের এড়িয়ে চলা এবং অস্বাভাবিক আচরণ করা হয় বলেও অভিযোগে রয়েছে৷
সচেতন অভিভাবকরা মনে করেন, এটা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের গাফিলতি৷ প্রাইভেট কোচিং এর সাথে জড়িত শিক্ষকদের আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করার দৃষ্টান্ত নেই নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷ সাধারণ মানুষের দাবী শিক্ষার নামে কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকদের খোঁজে বের করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা৷ তা না হলে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়বে সার্টিফিকেট বিক্রির অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷
বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ- শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে৷ নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭-এ উল্লেখ আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কোচিং-বাণিজ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷ ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় প্রচারণা ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন৷ অনুচ্ছেদ ১৪-এর ‘ক’ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত বা বাতিল, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্থ, চূড়ান্ত বরখাস্থ ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷
উল্লেখিত বিধিসমূহ সদয় জ্ঞাতার্থে ও কাযার্থে শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ ২৪ টি স্তরে প্রেরণ করা হয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নীতিমালা বাস্তবায়নে৷ এ নীতিমালা চালুর পর কিছুদিন হইচই ফেলেছিল৷ শিক্ষা ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ঘাপটি মেরে বসেছিল ঠিকই৷ কিন্তু এরপর আর তেমনভাবে নিয়ম পালিত হচ্ছে না বললেই চলে৷ সব আগের মতোই চলছে কোচিং বানিজ্য৷ অথচ সরকার নির্বিকার৷
জানা গেছে, কোচিং-ব্যবসায়ী শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তা আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা৷
প্রশ্ন উঠেছে, আইনের প্রয়োগ না হলে আইন করার দরকার কী ? এ কি শুধুই লোক দেখানো ? শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালাটিও দেশের বিবেকবান ও সচেতন মহলকে মারাত্মকভাবে বিদ্ধ করেছে৷ ভুক্তভোগীরা ভেবেছিলেন এবার অন্তত শিক্ষক নামধারী কিছুসংখ্যকঅসাধু শিক্ষা-ব্যবসায়ীর লাগাম ধরা যাবে৷ এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেরা প্রমাশন ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছেন নবীগঞ্জের সচেতন মহল৷