বুধবার ● ২৭ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » আতঙ্কে দেশ ছাড়লেন ২ পুরোহিত
আতঙ্কে দেশ ছাড়লেন ২ পুরোহিত
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি :: নিরাপত্তার অজুহাতে ঝিনাইদহের দুই পুরোহিত দেশ ত্যাগ করেছেন। তারা হলেন শৈলকুপার মঠবাড়ি কালীমন্দিরের পুরোহিত সোনা সাধু এবং রামগোপাল মন্দিরের পুরোহিত স্বপন চক্রবর্তী।
ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী এবং সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস খুনের পর বিভিন্ন মন্দিরে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও আতংক তাদের পিছু ছাড়ছে না। তারপর ঝিনাইদহের সোনালী পাড়ায় একটি ভাড়া মেসে গুলশাল হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নায়ক জঙ্গি নিবরাস ওরফে সাঈদ ও তার খালাতো ভাই পরিচয়দানকারী কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নিহত জঙ্গি আবিরসহ ৭ জঙ্গি অবস্থান নেওয়ার কথা প্রচার হওয়ার পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোহিত-সেবায়েতদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছিল। এরপর থেকে পূজা অর্চনার জন্য মন্দিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা।
এ ঘটনায় রামগোপাল মন্দিরের সভাপতি কালাচান সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দুই হত্যাকাণ্ডের পর তাদের মন্দিরের পুরোহিত অন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়ে ভারত চলে গেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি ফিরতে পারেন বলে জানিয়ে গেছেন।
অন্যদিকে মঠবাড়ি কালীমন্দিরের পুরোহিত প্রতাপ চন্দ্র সাহা জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে পুরোহিত স্বপন চক্রবর্তীকে সতর্ক থাকার কথা বলতেই তিনি আতংকে দেশত্যাগ করেন। দেশের অবস্থা ভাল হলে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
এক মাসের ব্যবধানে ঝিনাইদহে এক হিন্দু পুরোহিত এবং এক সেবায়েত খুনের পর বিভিন্ন মন্দিরে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না পুরোহিত ও সেবায়েতদের৷ জেলাটিতে চারটি গুপ্ত হত্যা এবং জঙ্গি আসত্মানার সন্ধান মেলার পর আতঙ্কে রয়েছেন হিন্দু ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষও৷ পুলিশি নিরাপত্তার পরও তারা নিজেরা সতর্ক হয়ে চলাফেরা করছেন৷
ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থান ঘুরে জানা গেছে, শৈলকুপার মঠবাড়ি কালীমন্দিরের পুরোহিত সোনা সাধু এবং রামগোপাল মন্দিরের পুরোহিত স্বপন চক্রবর্তী ভারতে চলে গেছেন৷
রামগোপাল মন্দিরের সভাপতি কালাচান সাহা জানান, দুই হত্যাকান্ডের পর তাদের মন্দিরের পুরোহিত অন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়ে ভারত চলে গেছেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি ফিরতে পারেন বলে জানিয়ে গেছেন৷
অন্যদিকে মঠবাড়ি কালীমন্দিরের পুরোহিত প্রতাপ চন্দ্র সাহা সাংবাদিক জাহিদুর রহমানকে জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক থাকতে বলার পর দেশ ছেড়েছেন তাদের পুরোহিত৷
“পুরোহিত হত্যার ঘটনার পর আমাদের মন্দিরে পুলিশ এসেছিল৷ তারা পুরোহিতকে বলল, আপনার মন্দির দুর্গম এলাকায়, যাতায়াতে সমস্যা, আপনি একটু সাবধানে থাকবেন৷ এরপর তিনি ভারত চলে যান৷”
এছাড়াও ওই এলাকায় গত ১ জুলাই এবং ৭ জুন এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে৷
দুই খুনের পর ঝিনাইদহের প্রায় সব মন্দিরেই পুরোহিত, সেবায়েত এমনকি পুণ্যার্থীরাও ভয়ে আছেন৷
মন্দিরগুলোয় পূজা অর্চনা হচ্ছে ফটক আটকে৷ আর পূজা শেষে বন্ধ রাখা হয় মন্দির৷
শহরের শ্রী শ্রী মোদনমোহন মন্দিরে গিয়ে সেখানে দুজন পুলিশ সদস্যকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত দেখা যায়৷
সেখানে কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম জানান, একজন এএসআই এর তদারকিতে পুলিশের ৬ সদস্য পালাক্রমে এখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন৷
পাহারায় পুলিশ থাকলেও তাতে আতঙ্ক কাটেনি বলে জানালেন মন্দিরের পুরোহিত মদন গাঙ্গুলী৷ তার কথাতেই বোঝা গেল আতঙ্ক কতটা চেপে বসেছে৷
“বলতে গেলে ভেতরে বন্দি অবস্থায় আছি৷ পারতপক্ষে বাইরে বের হই না৷ কারও বাড়িতে ডাক পড়লে ভয়ে ভয়ে দুই একজন সঙ্গে নিয়ে যাতায়াত করি৷ মাঝে মাঝে পুলিশও নিয়ে যাই৷”
তার প্রশ্ন- তারা পুরোহিত, কোনো রাজনীতি করেন না, তারপরও কেন তাদের ওপরই হামলা ?”
রবিবার শহরের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে দেখা যায়, পূজা শেষ হওয়ার পরপরই মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ এই মন্দিরে এখন গেট আটকেই পূজা হয় বলে জানান স্থানীয়রা৷
শহরের চাকলাবাড়ি মন্দিরের পুরোহিতও কলাপসিবল গেইটবন্ধ করে পূজা করেন৷ এভাবে কতদিন বাঁচা যায়- প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, পুলিশ মাঝে মাঝে আসে, তারপরও তারা আতঙ্কে থাকেন৷ পুরোহিত-সেবায়েত ছাড়াও হিন্দু সমপ্রদায়ের সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক রয়েছে৷
শহরের প্রতিষ্ঠিত একজন হিন্দু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “খুব আতঙ্কে আছি৷ কখন কী হয়, বুঝতে পারছি না৷ তাই মন খুলে ব্যবসা বাণিজ্যেও মন দিতে পারছি না৷”
হিন্দু পুরোহিত, সেবায়েত এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় নেওয়া ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন বলেন, “আমরা পুরোহিত ও সেবায়েতদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি৷ জেলা শহর ও উপজেলা সদরে যে সব মন্দিরে নিত্যপূজা হয়, সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
“এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবকরা পূজার আগে পুরোহিতকে মন্দিরে নিয়ে যায়, পূজার পর আবার বাড়ি পৌঁছে দেয়৷”