বুধবার ● ২৭ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » বগুড়ার মৃত্শিল্প পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন
বগুড়ার মৃত্শিল্প পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন
বগুড়া প্রতিনিধি :: বগুড়া শাজাহানপুরের আড়িয়া পালপাড়ায় মৃত্শিল্প পরিবারের সদস্যদের উপর নির্মম নির্যাতন-হুমকি ও নানা সমস্যা’ জর্জরিত হওয়ায় তারা এখন মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছেন ৷ মিথ্যা মামলা ও হামলায় অনেক পরিবার দেশত্যাগসহ নানা জায়গায় পালিয়ে গিয়েছেন৷ ফলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় এখনো নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত পরিবারগুলো নিরাপত্তা ও সু-শাসনসহ আইনী সহযোগিতা পেতে মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন৷
একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ১শ বছর পূর্বে থেকে শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়ায় প্রায় দু’শতাধিক পরিবার এ মৃত্শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে৷ তবুও বাপ-দাদার এ শিল্পের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে তাদের প্রচেষ্টার অন্ত নেই৷ নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতা কাঁটিয়ে তাঁরা দিন-রাঁত মৃত্শিল্পের কাজ করে তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সুশিক্ষিত করার জন্য সংগ্রামী জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এ পেশার সঙ্গে জড়িত৷ বাঙালির ঐতিহ্যে নিপুন হাতের তৈরি মাটির বাটি, পাতিল, কড়ই, পুতুল, ব্যাংক, খেলনা, দইয়ের বাটি, ফুলের টব ও হরেক রকমের মাটির সামগ্রী তৈরি করছেন তাঁরা৷ তবে ছেলেদের চাইতে মেয়েদের এই শিল্পে বেশি কাজ করতে হয়৷ পুরুষ ও মহিলারা মাটি ছানা, শুকানো, পোড়াই, রং করার কাজ করে হাট-বাজারে সেসব জিনিস বিক্রি করে থাকেন৷ তবে বিক্রির চাইতে অর্ডার নেওয়ার কাজ তাঁরা বেশি করে থাকেন৷ দলবদ্ধ সন্ত্রাসীরা গত বছরের ২৯ শে এপ্রিল ২০১৫ইং পালপাড়ায় হামলা ও মালামাল ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছিল৷ এঘটনায় শাজাহানপুর থানায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়৷ মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন রয়েছে৷ পালপাড়ার নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুষ্টভাবে জীবনযাপন এবং নিরাপত্তা চেয়ে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য জাতীয় মানবাধীকার সংস্থায় একাধিক আবেদন করলে আবেদনের প্রেক্ষিতে বগুড়া পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্ত করেছেন৷ এরপরেও পালপাড়ার ঘটনা এখনো যেন তাদের মনে আতংক বিরাজ করছে৷ অসহায় পালপাড়াবাসী চায় শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানে বসবাসের জন্য নিরাপত্তা, খাদ্য সংগ্রহের জন্য কাজ, বস্ত্র, চিকিত্সা সেবা’সহ নাগরিক অধিকার৷ এরপরেও তাদের জীবনের প্রতি মুহুর্তে হুমকি-ধামকি, হামলা ও মালামাল ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে৷ ফলে অনেক নিরীহ পাল পরিবার প্রতিবাদ করার সাহস না পাওয়ায় তাঁরা দেশত্যাগ করে পালিয়ে গেছেন ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো সময়মত সার্বিক সহযোগিতা না করায় ইতিমধ্যে পালপাড়া থেকে পালিয়ে গেছেন মনোতোষ, প্রদীপ, ডাবলু, শ্যামা পাল, অন্তীম, গোপাল, শ্যামা চন্দ্রসহ অনেক পরিবার৷ নারীদের হুমকি, চাঁদা দাবী, মিথ্যা মামলা, হামলা থেকে বাঁচতে অনেক পরিবার জন্মভূমি ছেড়ে বিভিন্ন শহরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ অনেকেই জীবন সংগ্রামে জয়লাভ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন৷ পালপাড়া গ্রামের দিনমজুর নাল মাধব পাল এ শিল্পে কাজ করে ছেলে মানবেন্দ্র কুমার পাল ও কন্যা নবনিতা পালকে এমবিবিএস ডাক্তার করেছেন৷ সিঙ্গাপুরে গেছেন সঞ্চয়, সবুজ ও মনোতোষ৷ কমলমতি ৩০থেকে ৪০জন শিশু শিক্ষার্থী থাকলেও পালপাড়া গ্রামে কোন স্কুল ও পাঁকা রাস্তা না থাকায় পাল পরিবারের সন্তানদেরকে লেখাপড়া শিখাতে নানা দূভোগ পোহাতে হচ্ছে৷ স্বপ্ন দেখছেন এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জীবনটাকে আরও সুন্দর করার৷ কারিগর তিনকড়ি পাল, সতেন, রতন, বাচ্চু, পাবর্তী, অঞ্জলী জানান, আমাদের ২থেকে ৪শতক বাড়ির জায়গা ছাড়া অন্য কোন জমি নেই৷
পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে৷ সংখ্যালঘু হওয়ায় আমাদের ভয় বেশী৷ কখনো সন্ত্রাসীদের হামলা আবার কখনো মালামাল ভাংচুর করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে৷ সমিতি বাড়ি বাড়োয়ারি মন্দির ও পালপাড়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চন্দ্র মহনত্ম জানান, আমাদের পাল পাড়ায় গতবছরের ২৯শে এপ্রিল ২০১৫ইং তারিখে সন্ত্রাসী হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ করেছি৷ মাঝে মধ্যেই আমাদের উপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে৷ ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ দোষি ব্যক্তিদের দৃষ্টানত্মমূলক শাস্তির দাবী জানান তিনি৷ একই সঙ্গে সে মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক’দের সহযোগিতাও কামনা করেন৷ কারিগর সুকুমার চন্দ্র পাল জানান, এ শিল্পে যে যত পরিশ্রম করবে সে তত আয় করবে৷ আয়ের বিষয়টা হাতের কাজের উপর নির্ভরশীল৷ তবে প্রতি মাসে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না৷ মাটি, রং, ফার্নিস, কাঠের গুড়া ও শ্রম বাজার বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বহুকষ্ঠ করে জীবন যাপন করছি৷ শ্যামলী পাল জানান, হাত চললে পেট চলে, হাত না চললে পেট চলে না৷ সুকানত্ম পাল জানান, বগুড়া দই বাজার এলাকা হওয়ায় দই মাটি বাটি’র চাহিদা বেশি৷ তবে বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ’সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মেলায় মাটির তৈরির জিনিসের বেশ কদর রয়েছে৷ এ শিল্পে ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় আমরা প্রসার ঘটাতে পারছি না৷ তবে প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে না৷ এছাড়াও বিপুল চন্দ্র পাল জানান, হুমকি ও নির্যাতনের ফলে অনেকেই দেশত্যাগ করেছেন৷ আবার কেউ কেউ বিদেশ ও অন্য পেশায় রয়েছে৷ ফলে এ শিল্প দিনদিন বিলুপ্তির পথে৷ তবে আমরা পালপাড়াবাসী এখনো নাগরিক অধিকার’সহ সরকারী-বেসরকারী অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ ফলে আমরা আমাদের ন্যার্য মৌলিক অধিকার পেতে সংশিস্নষ্ট মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কতর্ৃপৰের হসত্মৰেপ কামনা করছি৷ আড়িয়া ইউপি’র চেয়ারম্যান তছলিম উদ্দিন জানান, পালপাড়ার প্রতি আমাদের নজর রয়েছে৷ তবে দেশত্যাগের বিষয়টি শুনেছি৷ মামলা তদনত্মকারী কর্মকর্তা এসআই খোকন কুমার জানান, ‘স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প’ স্থাপন বিষয়ে আবেদনে প্রেৰিতে তদনত্ম হয়েছে৷ পালপাড়ায় পুলিশ প্রতিরাঁতে ডিউটি করছে৷ আতংকিত হওয়ার কিছু নাই৷ শাজাহানপুর থানা ওসি মোঃ আব্দুলস্নাহ আল মাসউদ জানান, পালপাড়ায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে৷