বুধবার ● ২৭ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » মাছ চাষে সফল নারী উদ্যোক্তা রুবা খানম
মাছ চাষে সফল নারী উদ্যোক্তা রুবা খানম
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: নিজের একান্ত শখ থেকে ২০১২ সালে বাড়ির পুকুরে মাছচাষ শুরু করেন সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার রামধানা গ্রামের প্রবাসী আফিয়া খানম৷ একটু পরিশ্রমে তিনি পান ব্যাপক সফলতা৷ এ সফলতার কারণে পরের বছর থেকেই শুরু করেন বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ৷ এখানেও সফলতা তিনি পান৷ এরপর থেমে না থেকে মাছচাষের পাশাপাশি শুরু করেন সবজি চাষ৷ সফলতা তাঁর সঙ্গি হওয়ায় তাতেও সফল হন আফিয়া খানম৷
২০১৪ সালে প্রবাসী দম্পতির কনিষ্ঠ কন্যা ও উপজেলার অন্যতম নারী উদ্যোক্তা রুবা খানম মায়ের শুরু করা মাছ ও সবজি চাষের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন৷ মায়ের মতো রুবা খানমও মাছচাষে পেতে শুরু করেন একের পর এক সফলতা৷ এর ফলশ্রুতিতে মাছচাষে সফলতা হিসেবে ২০১৫ সালে উপজেলা পর্যায়ে ও ২০১৬ সালে জেলা পর্যায়ে সফল সম্বনিত মাছচাষ উত্পাদনকারী হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পান ‘আফিয়া খানম ফিসারিজ’র সত্ত্বাধিকারী রুবা খানম৷
রুবা খানমের এই সফলতার খবর শুনে তার নিজের এলাকার পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা সম্পৃক্ত হচ্ছেন লাভজনক এপন্থার সঙ্গে৷ এতে অর্থনৈতিকভাবে উপজেলার অনেকেই পাচ্ছেন নিজের কর্ম ফলের ওপর নির্ভর করে সফলতা৷ মাছ ও সবজি চাষে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা আরাও ব্যাপক হারে এগিয়ে আসলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরোও সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন তরুণী উদ্যোক্তা রুবা খানম৷
উপজেলার রামধানা গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী দম্পতি জয়নাল আবেদীন ও আফিয়া খানমের ৬ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের মধ্যে রুবা খানম ষষ্ঠ সন্তান৷ ২০১৩ সালে ৬ বিঘা জমিতে ২টি পুকুর করে করে মাছচাষ শুরু করে রুবা খানমের মা আফিয়া খানম প্রথম বছরে আয় করেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা৷ আর ২০১৪ সাথে রুবা খানম দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্বের ৬ বিঘার সাথে আরোও ৪ বিঘা যোগ করে নতুন আরেকটি পুকুর তৈরী করে শুরু করেন মাছচাষ৷ বর্তমানে পুকুরগুলোতে যে পরিমাণ মাছ (রুই, কাতলা, কালী বাউস, রাজপুঁটি, দেশীয় শিং-মাগুর-কৈ) রয়েছে যার পরিমান বিক্রি করার সময়ে প্রায় ১২ টনেরও অধিক হবে বলে জানান রুবা খানম৷
মাছচাষের পাশাপাশি নিজেদের বাসা-বাড়ি ও পুকুর পাড়সহ প্রায় ২ বিঘা জমিতে রুবা খানম করেছেন সবজি চাষ৷ এতে রয়েছে শিম, বর্ষাকালীন টমোটো, নাগা মরিচসহ নানান ধরনের মৌসুম ভিত্তিক সবজি৷ আর সবজি চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন জৈব পদ্ধতি তৈরী ভার্মি কম্পোস্ট সার৷ এর পাশাপাশি বাবা জয়নাল আবেদীনের প্রতিষ্ঠিত গরুর খামার নিজের দায়িত্বে আনার পর থেকে বছর প্রায় ১ লাখ টাকার দুধ বিক্রি করছেন রুবা খানম৷ তাঁর খামারে রয়েছে উন্নত মানের ১০টি গরু৷ এরমধ্যে ৪টি গাভী৷
রুবা খানম ফিজারিজের দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৪ সালে মাছ বিক্রি থেকে আয় করেন প্রায় ৫ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে আয়ের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৫ লাখ টাকায়৷ সবজি চাষ থেকে প্রতি বছর রুবা খানমের আয় রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা৷ চলতি বছরে (২০১৬ সালে) পুকুরে থাকা মাছ ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে সম্ভব হবে বলে আশাবাদি নারী উদ্যোক্তা রুবা খানম৷
উপজেলায় সৃষ্ঠমান নারী উদ্যোক্তাদের ও রুবা খানমের সফলতায় তাঁকে উত্সাহ দিতে ২৩ জুলাই আফিয়া খানম ফিসারিজ পরিদর্শন করেন বিশ্বনাথের কৃতিসন্তান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মঈন উদ্দিন৷ এসময় তিনি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনাও অবমুক্ত করেন৷
মায়ের সফলতা দেখে মাছ ও সবজি চাষের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন বলে জানান রুবা খানম৷ আর ভবিষ্যত্ সফলতার জন্য তিনি সর্বস্থরের জনসাধারণের কাছে সহযোগীতা ও দোয়া কামনা করেছেন৷