শুক্রবার ● ২৯ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহে রাস্তা নির্মানের ৪৪ কোটি টাকা হরিলুট
ঝিনাইদহে রাস্তা নির্মানের ৪৪ কোটি টাকা হরিলুট
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি :: (১৪ শ্রাবণ ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.৩০মিঃ) ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের ডাকবাংলা বাজার এলাকায় রাস্তা তৈরীর নামে এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাল রাস্তা খুড়ে রাখার প্রতিবাদে ২৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরে অবেরাধ কর্মসুচি পালন করেছে এলাকাবাসী৷ এ সময় ওই সড়কে এক ঘন্টারও বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল৷ দুই পাশে শত শত পরিবহন আটকে পড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়৷
অবরোধ কর্মসুচিতে বৈডাঙ্গা, বাটিকাডাঙ্গা, ডহরপুকুর, বাথপুকুর ও নারায়নপুরসহ আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ অংশ গ্রহন করেন৷ অবরোধ শেষে রাস্তার উপর এক প্রতিবাদ সমাবেশ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়৷
সমাবেশে স্থানীয় ইউপি মেম্বর হুসিয়ার হোসেন, ড্রাইভার নুর ইসলাম সরকার, ওহিদুল ইসলাম, রাজু আহম্মেদ শিপন ও টোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন৷ রাস্তা অবরোধকারীরা অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের উত্তর নারায়ণপুর থেকে বৈডাঙ্গা বাজার প্রায় এক কিলোমিটার ভাল রাস্তা দেড় বছর ধরে খুড়ে রাখা হয়েছে৷
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মুজিবনগর রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়৷ তারা বলেন, অন্যান্য ঠিকাদাররা রাস্তার বিভিন্ন অংশের নির্মান কাজ শেষ করলেও সুমন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রাস্তা না করে ফেলে রেখেছে৷ খুড়ে রাখার কারণে রাস্তার উপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে৷ সেই গর্তে যানবাহন পড়ে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে৷ রাস্তা অবরোধের এক ঘটনা পর দ্রুত সংস্কারের পুলিশের এমন আশ্বাস তারা অবরোধ তুলে নেয়৷
এলাকাবাসির অভিযোগ ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা মুজিবনগর রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহের অংশে ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়৷ কিন্তু নির্মান কাজ শুরু থেকেই ঘপলাবাজীর আশ্রয় নেওয়া হয়৷ মাটির কাজ না করেই কয়েক কোটি টাকা ভাগাভাগী করে নেওয়া হয়েছে৷
অবরোধকারীরা সিডিউল দেখিয়ে অভিযোগ করেন, প্রতি কিলো রাস্তা ৩ কোটি টাকার নির্মান ব্যায় ধরা হয়েছে৷ এর মধ্যে প্রতি কিলোতে বেস টাইপ ওয়ান নির্মান ব্যায় ধরা হয় ১ কোটি টাকা, বেস কোর্স ওয়ারিং কোস করতে প্রতি কিলোতে বরাদ্দ দেড় কোটি টাকা ও প্রতি কিলোতে ৫০ লাখ টাকার মাটির কাজ রয়েছে৷ বেস টাইপ ওয়ানে ৪ ঝুড়ি পাথর ও এক ঝুড়ি বালি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে সিডিউলে৷ সেখানে কাজ করা হয়েছে ঠিক উল্টো৷ যা এলজিইডির ল্যাব টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করলে এই পুকুর চুরির ঘটনা ধরা পড়বে৷
এলাকাবাসি জানিয়েছে, প্রতি কিলোতে মাটির কাজ রয়েছে ৫০ লাখ টাকার৷ কিন্তু রাসত্মার সাইড প্রশস্থ করণে কোন মাটির কাজ করা হয়নি৷ রাসত্মা তদারকি কর্মকর্তা এসও আহসানুল হক প্রতি কিলোতে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বিল দিয়েছেন বলে অভিযোগ৷
ঠিকাদারদের একটি সুত্র জানিয়েছে, আনলিমিটেড ঘুষ নেওয়ার কারণে রাস্তার কাজ মানসম্মত হয়নি৷ তাদের ভাষ্য ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে৷ সরকারের রাসত্মা উন্নয়নের টাকা ভুয়া পাইলিং, রং, রাসত্মার পাশ পরিস্কার, মালামাল সাপস্নাই, বালি, ইট ও মাটির কাজ দেখিয়ে হরিলুট করা হচ্ছে৷
এছাড়া ২৫ হাজার টাকার কোটেশন দেখিয়ে মাসে সরকারের লাখ লাখ টাকা তছরুপ করছে এসও আহসান ও মনিরুল৷ এ নিয়ে ঠিকাদারদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে৷
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, মাটির কাজ এখনো শেষ হয়নি৷ রাস্তার কাজ এখনো চলমান৷ তাই টাকা তছরুপের বিষয়টি ঠিক নয়৷
তিনি বলেন, সুমন এন্টারপ্রাইজকে চিঠি দিয়ে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তিনি রাস্তার কাজ শেষ করছেন না৷
ফলে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের উত্তর নারায়ণপুর থেকে বৈডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত রাস্তা খুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে৷ তিনি ভুয়া কোটেশন ও বিল ভাউচারে সড়কের টাকা হরিলুটের বিষয়টি এড়িয়ে যান৷