রবিবার ● ৩১ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » সিরাজগঞ্জে বন্যায় দুর্ভোগ চরমে
সিরাজগঞ্জে বন্যায় দুর্ভোগ চরমে
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: যমুনার নদীর পানি সিরাজগঞ্জে পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ জেলার ৫টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের কয়েক লৰাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে৷ বসতবাড়ী প্লাবিত হওয়ায় দুর্বিসহ জীবন কাটছে বানভাসীদের৷ চুলো জ্বলছে না অনেক বানভাসীর পরিবারে৷ খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন৷ শুকনো খাবার ও বিশদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে৷ উচু জায়গা না থাকায় নৌকায় খোলা আকাশের নীচে কাটছে অনেকের সংসার৷ গবাদি পশুর সাথে এক ঘরে রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের৷ দুর্গম অঞ্চলগুলোতে এখনো পৌছেনি সরকারী ত্রাণ সহায়তা৷ যা দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল৷ শরীরে ঘা-চুলকানিসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রানত্ম হচ্ছে বানভাসী মানুষগুলো৷ কাজিপুরের নতুন খাসরাজবাড়ী গ্রামটি প্রায় ১৫দিন যাবত পানির নীচে তলিয়ে গেলেও এখানে কোন সরকারী সহায়তা পৌছেনি৷ এ গ্রামের কিছু কিছু মানুষ নৌকা খোলা আকাশের নীচে দিনযাপন করছে৷
নতুন মাইজবাড়ীর চরে আধো ডুবো একটি ছোট্ট ওয়াপদার বাঁধের পাশে বেঁধে রাখা নৌকার উপর থেকে চেচিয়ে চেচিয়ে জ্যোতি চাকলাদার বলেন, আইজ ৮ দিন ধইর্যা নায়ের উপর আছি৷ নায়েই রান্দা, নায়েই খাওয়া, আবার নায়েই শোয়া, এভাবেই চইলত্যাছে আমগোরে জীবন৷ বানের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুইবা গেছে, আশ্রয় কেন্দ্রেও থাকার জায়গা পাই নাই, কোনঠে যামু ? তাই প্রতিদিন ৭ থেকে ৮শ টাকার করে নৌকা ভাড়া নিয়া এহেনেই বউ ছওয়ালপাল নিয়া কুনমতে বাইচা আছি৷
নৌকায় আশ্রয় নেয়া রম্নস্তুম খা, আব্দুস সালাম, বাবলু, সাঈদ, ইসমাইল ও আলমানি আকন্দ জানান, ৮/৯ দিন ধরে যমুনার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন মাইজবাড়ী, খাসরাজবাড়ী, চর বুরম্নঙ্গী, উজান মেওয়াখোলা, ভাটি মেওয়াখোলা, মাইজবাড়ী, ঢেকুরিয়াসহ চরাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রাম পুরোপুরি পস্নাবিত হয়েছে৷ প্রথম ঘরে বাঁশের মাচা তৈরী করে থাকার চেষ্টা করি৷ কিন্তু ধীরে ধীরে বাঁশের মাচাও ডুবে যায়৷
গ্রামের রাশিদা খাতুন জানান, রান্না করার জায়গা নেই৷ দিনে একবার পাক করা হয়৷ আর বাকী সময় না খেয়েই থাকতে হয়৷ জায়গা না থাকায় গরম্ন ছাগলের সাথে এক ঘরেই রাত কাটাতে হয়৷
হযরত আলী জানান, কারও দুদিন, কারও একদিনের খাবার আছে৷ অনেকের খাবার সংকটের কারণে অন্যের কাছে ধার করতে হচ্ছে৷ এত কষ্ট স্বত্বেও এইসব অঞ্চলে এখনও সরকারী-বেসরকারী কোন ত্রাণ পৌছেনি বলে জানান নৌকার উপর আশ্রয় নেয়া বানভাসী মানুষেরা৷
নতুন মাইজবাড়ী এলাকার সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য লতা খাতুন জানান, অন্যান্য এলাকায় ত্রাণ দিলেও এ অঞ্চলে এখনো কিছুই দেয়া হয়নি৷ আমরা চাহিদা দিয়েছি৷ আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা চলে আসবে৷
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত ১৩ লক্ষ টাকা ও ৩৭০ মে.টন চাল বিতরণ ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে সকলকে ত্রাণের আওতায় নানা হবে৷