রবিবার ● ৩১ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » নাটোর » ঘুরে আসুন জল ঝলমল চলনবিল
ঘুরে আসুন জল ঝলমল চলনবিল
চলনবিল প্রতিনিধি :: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল৷ ৩টি জেলা জুড়ে বিস্তৃত৷ নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বিস্তৃত অংশ জুড়ে যে জলভূমি, বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে দেখা যায় সেটাই বিখ্যাত চলনবিল৷ শুকনা মৌসুমে এসব বিলে জল থাকে না৷ তখন চাষাবাদ চলে বিলের জমিতে৷ তবে বর্ষায় কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ থাকে৷ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলনবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়৷ ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলনবিলের সৃষ্টি৷ গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার৷ বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে৷
আসলে চলনবিল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি৷ বর্ষায় এই বিলগুলোতে জলপ্রবাহ বেড়ে একসঙ্গে বিশাল এক বিলের সৃষ্টি হয়৷ বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ,তাড়াশ,উল্লাপড়া,শাহাজাদপুর, পাবনা জেলার চাটমোহর,ভাঙ্গুঁড়া,এবং নাটোর জেলার গুরুদাসপুর,বড়াইগ্রাম, নলডাঙ্গা, সিংড়া উপজেলা জুড়ে এ বিলের বিসত্মিৃতি৷ বিলের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত পাবনা জেলার নুন নগরের কাছে অষ্টমনীষা পর্যন্ত বিস্তৃত৷ এর প্রশস্থতম দিকটি উত্তর-পূর্ব কোনাকুনি৷ নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে গুমনী পাড়ের কচিকাটা পর্যন্ত এ বিলের সবচেয়ে বড় অংশ, যা প্রায় চবি্বশ কিলোমিটার দীর্ঘ৷ নাটোরের গুরুদাসপুর,সিংড়ার পূর্বপ্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ভদাই নদীর পূর্ব পাড় পর্যন্ত বিলের পূর্ব সীমানা৷ চলনবিলের সবচেয়ে বড় অংশ পড়েছে নাটোরের সিংড়া,গুরম্নদাসপুর, নলডাঙ্গা উপজেলায়৷ এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরম্নল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের বুকেই৷ সড়কের দুপাশে বর্ষার সময়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু অথৈই জলরাশি৷ এ পথে চলতে চলতে সড়কের দুপাশে বর্ষায় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য,পালতোলা নৌকা, নৌকায় জন-মালামাল পরিবহন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি চারনসহ চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় দুচোখ ভরে৷ নিজস্ব গাড়িতে গেলে ইচ্ছামতো থেমে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব৷ এছাড়া চলনবিলের আকর্ষণীয় একটি বিল ‘হাইতি বিল’৷ এটি নলডাঙ্গা উপজেলায়৷ জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে এ বিলের অবস্থান৷ হাইতিকে দেশের সবচেয়ে গভীর বিল বলা হয়৷ প্রায় ১২ মিটার গভীর এই বিলে সারা বছরই পানি থাকে৷ বর্ষায় পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি৷
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, উলস্নাপড়া, শাহাজাদপুর ও তাড়াশ উপজেলার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে চলনবিলের অংশ বিশেষ৷ চলনবিলের বেশ কয়েকটি বিল পড়েছে এ উপজেলায়৷ সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরম্নল গোলচত্বর থেকে বনপাড়া সড়কে প্রবেশ করলে কিছু দূর যাওয়ার পর চলনবিলের যে অংশের দেখা মিলবে সেটাও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মধ্যে৷ এখান থেকে দক্ষিণ দিকের পুরো অংশটাই এই জেলার অনত্মর্গত চলনবিল৷ পাবনার চলনবিল চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চলনবিলের অংশ৷ গাজনা, বড়, সোনাপাতিলা, ঘুঘুদহ, চিরল, গুরকা ইত্যাদি বড় আকারের বিলগুলো বেশিরভাগই পাবনা জেলায়৷ বড়বিলের আয়তন প্রায় ৩১ বর্গ কিলোমিটার ও সোনাপাতিলা বিলের আয়তন প্রায় ৩৫ বর্গকিলোমিটার৷ এছাড়া এ বিলের আরও দুটি বৃহত্ অংশ যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুরলিয়া ও দিক্ষি বিল চাটমোহরে অবস্থিত৷ বর্ষায় এ বিল থাকে জলে পরিপূর্ণ ৷
ঢাকা থেকে নাটোর যাতায়াত ও থাকা : ঢাকার গাবতলি থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ,শ্যামলী পরিবহন, দেশ ট্রাভেলস,ন্যাশনাল পরিবহন প্রভৃতি বাসে নাটোর যাওয়া যায়৷ এছাড়া রাজশাহীগামী যে কোনো বাসেই নাটোর আসা সম্ভব৷ ভাড়া ৪শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা৷ নাটোরের চলনবিল দেখতে গেলে থাকতে হবে নাটোর জেলা সদরে৷ শহরে থাকার জন্য আছে চকরামপুরে হোটেল ও ভিআইপি হোটেল এবং মাদ্রাসা রোডের হোটেল উত্তরা ও হোটেল মিলাত৷ ভাড়া ২শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা৷
ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ যাতায়াত ও থাকা : ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ আসা যায় সড়ক ও রেলপথে৷ ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহন, এসআই এন্টারপ্রাইজ এবং গাবতলী থেকে ইউনিক সার্ভিসসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস যায় সিরাজগঞ্জ৷ ভাড়া ৩শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা৷ সিরাজগঞ্জ থেকে রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় আসা যাবে লোকাল বাসে৷ সিরাজগঞ্জ শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হল- আল হামরা,মাদারঙ্৷ ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা৷ সলঙ্গা থানার হাটিকুমরম্নল গোলচত্বর এলাকায় ভাল থাকার হোটেল খাঁন আবাসিক,আল-আমিন,সিদ্দিকিয়া ভারা ২শ টাকা ৫টাকা৷ নিজস্ব বাহনে গেলে দিনে দিনেই ঢাকা থেকে গিয়ে ঘুরে আসা যায়৷
ঢাকা থেকে পাবনা যাতায়াত ও থাকা ঃ ঢাকা থেকে সরাসরি পাবনা যাওয়া যায় সড়কপথে৷ প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যনত্ম বিভিন্ন সংস্থার বাস চলাচল করে এ পথে৷ পাবনা এঙ্প্রেস, শ্যামলী পরিবহন, রাজা বাদশা পরিবহন, কিংস পরিবহন, বাদল গ্র্যান্ড চয়েজ, সরকার ট্রাভেলস ইত্যাদি৷ ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা৷ পাবানা শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের হোটেল হল- জালালপুরে প্রশান্তি ভুবন পার্ক, হোটেল পার্ক, হোটেল শিল্টন ইত্যাদি৷ ভাড়া ৫শ’-১৫শ’ টাকা৷ পাবনা জেলা সদর থেকে বাসে চাটমোহর এসে সেখান থেকে রিকশায় আসা যায় চলনবিলে৷
প্রয়োজনীয় তথ্য : চলনবিলে বেড়ানোর জন্য স্থানীয় নৌকা পাওয়া যাবে ভাড়ায়৷ সারাদিনের জন্য ভালো মানের একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৬শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা৷ এছাড়া ইঞ্জিন নৌকা মিলবে ১ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়৷ সাঁতার না জানলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন৷ নৌকায় ভ্রমণকালে হৈচৈ, লাফালাফি করবেন না৷
এই সুযোগে দেখে নিতে পারেন চলনবিল জাদুঘরটিও৷ গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে এ জাদুঘর৷ স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী এ সংগ্রশালা৷ চলনবিলে প্রাপ্ত নানান নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ৷ নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এই জাদুঘরে৷ শনিবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে৷