বুধবার ● ৩ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » গাজীপুরে স্ত্রীসহ ৩ জনকে হত্যার ঘটনায় আটক ৩
গাজীপুরে স্ত্রীসহ ৩ জনকে হত্যার ঘটনায় আটক ৩
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১৯ শ্রাবণ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪৭মিঃ) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় স্ত্রী ও এক শিশুসহ তিনজনকে হত্যা করে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের যমুনা নদীতে লাশ বস্তাবন্দি করে ফেলে দেয়ার ঘটনায় ২ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকা থেকে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন কুমার পন্ডিতের নেতৃত্বে স্বামীসহ তিনজনকে আটক ও হত্যায় ব্যবহৃত গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ- ২৫৪১৪৪) জব্দ করেছে পুলিশ৷
আটককৃতরা হলো- নিহত নাসরিনের তৃতীয় স্বামী ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি চালা অফিস পাড়া এলাকার হাজী আব্দুল মান্নানের ছেলে আল আমিন (৩২), একই জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার মাহাবুবুল আলমের ছেলে নয়ন (২০) ও প্রাইভেটকার চালক জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পবাহার নোয়াপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম (২২)৷ আল আমীন ও নয়ন শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার রিজভী-মীম-নিশি বস্ত্রালয় অ্যান্ড ফার্নিচার স্টোরের কর্মচারী৷ রবিউল ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মিজানুর রহমানের প্রাইভেটকারের চালক৷
এর আগে ৩১ জুলাই রবিবার বেলা ১১টার দিকে জাইমতিকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে শিশুসহ ওই দুই নারী নাসরিন ও মেহেরুন শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন৷ পরে সম্ভব্য সকলস্থানে তাদের খোজাখুজির শেষে না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়৷
এদিকে সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিরাগঞ্জে যমুনা নদী থেকে শিশুসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে এমন খবর টিভি ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে দেখে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে নিহতের স্বজনরা৷ পরে অনলাইন পোর্টালগুলোতে ও ফেইসবুকে নিহত ওই তিন জনের ছবি দেখে পরিবারের লোকজন তাদের ব্যাপারে কিছুটা নিশ্চিত হয়ে সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহগুলো সনাক্ত করেন৷ মৃতদেহগুলোর নাকে মুখে রক্তপাতের চিহ্ন রয়েছে৷
নিহতরা হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের ব্যবসায়ী বাদল মন্ডলের স্ত্রী নাসরিন মন্ডল (৩০), হাদিকুলের স্ত্রী মেহেরুন আক্তার (৪৮) ও তার পালিত নাতি শিশু জাইমতি (৪)৷ এদের মধ্যে মেহেরুনের ভাতিজি নাসরিন৷ জাইমতি নাসরিনের মামাতো বোন৷
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন কুমার পন্ডিত আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, শ্রীপুর উপজেলাধীন টেংরা এলাকার নাসরিন আক্তারের প্রথম স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হলে একই এলাকার বাদল মন্ডলের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয়৷ এরই মাঝে নাসরিন মাস্টার বাড়ী এলাকার রিজভি মিন মিসি বস্ত্রলায়ের ম্যানেজার আল আমিনকে তৃতীয় বিয়ে করে৷ গত ৩০ জুলাই শনিবার দুপুরে নাসরিনের তৃতীয় স্বামী আল আমিন নাসরিনকে দ্বিতীয় স্বামীর বাড়ী থেকে ডেকে ঐ দোকানে নেয়৷ সেখানে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দোকানের কর্মচারী নয়ন মিয়ায় সহযোগিতায় আল আমিন নাসরিনকে স্বাসরোধ করে হত্যা করে৷ এ ঘটনা দেখে ফেলায় নাসরিনের ফুফু মেহেরুন আক্তার ও পালিত নাতী জাইমতিকেও তারা স্বাসরোধ করে হত্যা করে৷
পরে সিরাজগঞ্জের বাড়ীতে বন্যা হয়েছে বাড়ি দেখতে যাবার কথা বলে উক্ত দোকানের মালিকের গাড়ীতে (ঢাকা মেট্রো গ- ২৫৪১৪৪) করে লাশ নিয়ে ঐদিন রাতেই তারা সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানার খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের পাশে যমুনা নদীতে বস্তাবন্দি করে ফেলে আসে৷ রাতেই তারা শ্রীপুরে ফিরে আসে৷ পরদিন সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর উপজেলায় যমুনা নদী থেকে দুই নারী ও এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধারের টিভি ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে দেখে স্বজনরা গিয়ে লাশ সনাক্ত করে৷
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, নাসরিন আগের স্বামীকে তালাক না দিয়ে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার অফিসপাড়ায় আবদুল মান্নানের ছেলে আল আমিনকে গোপনে বিয়ে করেন৷ রবিবার বেলা ১১টার দিকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে জাইমতিকে নিয়ে নাসরিন ও তার ফুফু মেহেরুন নেছা টেংরা গ্রাম থেকে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় আল আমিনের কাছে যান৷
এ সময় নাসরিনকে আগের স্বামীর সংসার ছেড়ে আসতে বলায় আল আমিনের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়৷ একপর্যায়ে আল আমিন সহযোগীদের নিয়ে ওই দোকানের মধ্যে প্রথমে নাসরিনকে পরে মেহেরুন নেছা ও জাইমতিকে হত্যা করে লাশ দুটি বস্তায় ভরে রাখেন৷ পরে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে দোকান মালিকের কাছ থেকে গাড়ি নেন৷ সন্ধ্যার পর লাশের বস্তা গাড়িতে উঠিয়ে সিরাগঞ্জের এনায়েতপুর এলাকায় যমুনা নদীতে ফেলে দেন৷
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এঘটনায় সাংবাদিকদের নিয়ে নিজ কার্যালয়ে প্রেস বিফিং করেছেন৷ এসময় তিনি জানান, আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে৷ এছাড়া পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ- ২৫৪১৪৪), গাড়ীর চালক রবিউলসহ তাদের আটক করেছে৷ এঘটনায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজগর আলী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা [০১(০৮)১৬] করেছেন৷