মঙ্গলবার ● ৯ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহে আবারও পুলিশ পরিচয়ে তুলে যাওয়া শিক্ষক ও কৃষকের সন্ধানের দাবীতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন
ঝিনাইদহে আবারও পুলিশ পরিচয়ে তুলে যাওয়া শিক্ষক ও কৃষকের সন্ধানের দাবীতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২৫ শ্রাবণ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.২৮মিঃ) ঝিনাইদহে পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ আনিচুর রহমান ও ইদ্রিস আলী পান্না নামে দুই ব্যক্তির সন্ধানের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে তাদের পরিবার৷ ৯ আগষ্ট মঙ্গলবার ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে পরিবার দুইটির পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দু’টি পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় কথিত ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে তাদের হত্যা অথবা লাশ গুম করা হতে পারে৷
ঝিনাইদহ সদর থানার কেশবপুর গ্রামে থেকে ৯ দিন ধরে নিখোঁজ থাকা আনিচুর রহমানের ভাই আব্দুল মান্নান ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন৷
এ সময় নিখোঁজ আনিচুরের স্ত্রী রোজিনা খাতুন, মেয়ে আশা খাতুন, ছেলে রাকিব হোসেন, রাতুল হোসেন, বোন সখিনা খাতুন, চাচা দিদার হোসেন, ভাই আব্দুল কুদ্দুস ও মামা হোসেন আলীসহ গ্রামের অর্ধশত মানুষ উপস্থিত ছিলেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয় গত ৩০ জুলাই রাত ১২টার দিকে একটি সাদা মাইক্রোবাস ও দুইটি মটরসাইকেলযোগে সাদা পোশাকের লোকজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী আনিচুর রহমানকে উঠিয়ে নিয়ে যায়৷
আব্দুল মান্নান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, রাতের আধারে ভাইকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা থানায় যোগাযোগ করি৷ কিন্তুু থানা থেকে অস্বীকার করা হয়৷ আনিচুর রহমান নিজ গ্রামে একজন নীরিহ ও ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত৷ তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই৷
মহরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে আনিচুর বিএনপি প্রার্থী খুরশিদ আলমের পক্ষে ভোট করার কারণে প্রতিপক্ষরা প্রশাসনের লোক দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে হয়রানী করতে পারে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়৷
এই অসহায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে এ ভাবে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তার নাবালক তিনটি সনত্মান সর্বক্ষন কান্নাকাটি করছে৷ এ বিষয়ে সদর থানায় একটি জিডি করা হলেও পুলিশ এখনো নিখোঁক আনিচের সন্ধ্যান দিতে পারেনি৷
এদিকে জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক ইদ্রিস আলী পান্না ৪ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন৷ গত ৪ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাতে পান্নাকে শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের সামনে থেকে সাদা পাশোকের লোকজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়৷
মঙ্গলবার দুপুরে পান্নার স্ত্রী বেগম ইদ্রিস এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার তার স্বামী কাপড় স্ত্রী করার জন্য পাশর্্ববর্তি রামচন্দ্রপুর বাজারে যান৷ মটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রধারীরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এ সময় তাদের কোমরে পিসত্মল ও হাতে হ্যন্ডকাপ ছিল৷ এ নিয়ে শৈলকুপা থানায় জিডি করতে গেলে থানা পুলিশ জিডি গ্রহন করেনি৷
বেগম ইদ্রিস জানান, তিনি তার স্বামীর জীবন নিয়ে শংকিত৷ কথিত ক্রসফায়ার সাজিয়ে যেন তাকে হত্যা করা না হয় সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবী করেন তিনি৷ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বামীকে জীবিত অবস্থায় ফেরতের দাবী জানিয়েছেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়ে মাহফুজা খাতুন, আদুরী খাতুন, শেফা খাতুন, ছেলে ফরহাদ, নিখোঁজ পান্নার বাবা গোলাম কওছার আলী মন্ডল, ভাই আব্দুল মান্নান, ভগি্নপতি মহিউদ্দীনসহ তার আত্ময় স্বজন ও গ্রামবাসিরা উপস্থিত ছিলেন৷
উলেস্নখ্য, ঝিনাইদহে সাদা পোশাকে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এ ঘটনা সাথে কারা জড়িত তা স্পষ্ট নয়৷ তবে অনেকে বাড়ি ফিরে আসছে৷ আবার কেও আদালতের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে জেল হাজতে৷ বাড়ি ফিরে আসারা ভয়ে মুখ খুলছে না৷
সর্বশেষ ব্যাপারীপাড়ার তেল ব্যবসায়ী শরিফুল গত রোববার বেলা ১টায় নিখোঁজ হন৷ সাদা পোশাকের লোকজন তাকে বাজারের মধ্যে থেকে তুলে নিয়ে যান বলে তার স্ত্রী বিথি খাতুন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন৷ ওই দিন রাত ১০টার দিকে তিনি একাই বাড়ি ফেরেন৷ বাড়ি ফিরে তিনি মুখে কুলুপ আঁটেন৷
র্যাবের সর্বশেষ নিখোঁজের তালিকা মোতাবেক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে জাহিদুল নামে একজন নিখোঁজের কথা বলা হয়েছে৷ তবে নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের স্বজনদের দেওয়া তথ্য মতে জেলা থেকে এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন৷ এর মধ্যে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার সংখ্যাই বেশি৷
নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিরা হলেন, কোরাপাড়া বটতলার জাহিদ, হলিধানীর রোজ, ঝিনাইদহ উপশহরপাড়া মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা, হরিণাকুন্ডুর ইদ্রির আলী পান্না, সদর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের আনিচুর রহমান, কালীগঞ্জ উপজেলার ষাটবাড়িয়া মসজিদের ইমাম আব্দুল হাই, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চাপড়ী গ্রামের হাসান আলী, ঝিনাইদহ শহরে হামদহ এলাকার খোকন ও তার ভাতিজা৷
এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করতে বলা হয়েছে৷ জেলা পিেুশর মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের স্বজনদের জিডি করতে বলা হচ্ছে৷ পাশাপাশি পুলিশও তাদের সন্ধান করছে৷