শুক্রবার ● ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » এতো অপমান কেন ?
এতো অপমান কেন ?
এ্যাডভোকেট সিরাজী এম আর মোস্তাক :: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে কারা যুদ্ধাপরাধ করেছে ? কারা ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণ কেড়েছে ও দুই লাখ নারীর ইজ্জত নিয়েছে ? ২৬ শে মার্চ কালো রাতের সূচনাকারী কারা ? পাকিস্তানের ঘাতক সেনাবাহিনী নাকি বাংলাদেশের অসহায় জনগণ ? এ বিষয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ আদালত তথা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় কি ? সম্প্রতি শুধুমাত্র বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হয়েছে ৷ পাকিস্তানীরা ধোয়া তুলসি পাাতা ৷ এ সংবাদ বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে ৷ সবাই জেনেছে, বাংলাদেশীরাই যুদ্ধাপরাধী; পাকিস্তানিরা নয়৷ বাংলাদেশের ষোল কোটি জনতা যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম আর পাকিস্তানীরা বীরের জাতি ৷ এতে বাংলাদেশের সম্মান বেড়েছে নাকি কমেছে ?
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে ৷ এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করাও আপত্তি ধরা হয়েছে ৷ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত নয় কেন, এ প্রশ্নও করা যাবেনা ৷ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নেই কেন, তাও বলা নিষেধ ৷ ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্বমহারা মা-বোন মুক্তিযোদ্ধা নাকি রাজাকার, এসব প্রশ্ন অপরাধতুল্য ৷ অর্থাত্ বর্তমানে যে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও কোটা চালু আছে, তাই যথেষ্ট ৷ এ ছাড়া অন্য কাউকে মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবেনা, এমনকি দেশনেত্রীকেও নয় ৷ মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে দেশে বৈষম্যের পাহাড় সৃষ্টি হলেও তা নিয়ে মন্তব্য করা অন্যায় ৷ এভাবে ইতিহাসের গতিধারা থেমে দেয়া কি ভালো লক্ষণ ? তাতে বাংলাদেশের মান বাড়ছে নাকি কমছে ?
ইতিহাসের অপমান থেকে বর্তমান অপমান আরো নিকৃষ্ট ৷ বর্তমানে জঙ্গি বিরোধী প্রচারণা শুরু হয়েছে ৷ ১৯৭১ সালেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এদেশের গেরিলা যোদ্ধাদেরকে জঙ্গি হিসেবে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ৷ দীর্ঘ নয়মাস রক্ত-নদী প্রবাহিত করেছে ৷ তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৷ স্বাধীন দেশে জঙ্গিবাদের উত্পত্তি কেন ? যাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নেই, তারা জঙ্গি হতে পারে ৷ স্বাধীনতার চার দশক পরে বাংলাদেশ জঙ্গি কেন ? আমরা কি পরাধীন হয়েছি ? এ অপমান কি কখনো ঘুচবে ?
এক বিদেশি বন্ধু আমাকে বললো, বন্ধু! তোমরাই যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম, পাকিস্তানীরা নয়৷ তোমরা মুক্তিযোদ্ধা বা বীরের জাতি নও, পাকিস্তানীরা বীরের জাতি ৷ আমি বললাম, কিভাবে ? সে বললো, পৃথিবীর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তোমরাই যুদ্ধাপরাধী; পাকিস্তানীরা নয় ৷ অর্থাত্ তোমরাই ত্রিশ লাখ ব্যক্তিকে হত্যা করেছ ও দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছ; পাকিস্তানীরা নয় ৷ এমনকি আন্তর্জাতিক আদালতে প্রমাণ হয়েছে, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী একাই বহু নারী ধর্ষণ করেছে ৷ আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি ৷ পৃথিবীর কাছে আমি যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম ৷ এ অপমান আমার বুকের পিঞ্জরে লেগেছে ৷
যারা আন্তর্জতিক আদালতের মাধ্যমে পাকিস্তানীদের পরিবর্তে বাংলাদেশীদেরকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করেছে, তারা জঘন্য রাষ্ট্রদ্রোহী ৷ তারা বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরদের প্রেতাত্মা ৷ তাদেরকে চিহ্নিত করে চিরতরে নির্মূল করা উচিত ৷ তারাই জঙ্গি ৷ তারা বাংলাদেশের মান নষ্টের ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত ৷ তারা যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদ ছাড়া আরো কতো অপমান যে আমদানি করবে, তার শেষ নেই ৷
এখনই উচিত, বাংলাদেশের বিশ্বাসঘাতক স্বার্থান্বেষী মহলকে চিহ্নিত করা ৷ মুক্তিযুদ্ধের নামে প্রদত্ত সকল সুবিধা বাতিল করা ৷ শুধু দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বা কোটা নয়; বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, জেনারেল ওসমানীসহ ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি যোদ্ধা ও শহীদ সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেয়া ৷ বাংলাদেশের ষোল কোটি নাগরিককে তাদের প্রজন্ম ঘোষণা করা ৷ এতে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গি অপমান থেকে সামান্য হলেও রেহাই পাবে ৷
এ্যাডভোকেট সিরাজী এম আর মোস্তাক, হাইকোর্ট,ঢাকা ৷