শুক্রবার ● ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটি শহরে ৩৫ কাঠুরিয়াসহ ৩৫ হাজার শহীদ বাঙালির স্মরণে শহীদ মিনার স্হাপন করার দাবি
রাঙামাটি শহরে ৩৫ কাঠুরিয়াসহ ৩৫ হাজার শহীদ বাঙালির স্মরণে শহীদ মিনার স্হাপন করার দাবি
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (২৫ ভাদ্র ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.০০মিঃ) আজ শুক্রবার ৯ সেপ্টেম্বর, পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস । পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক ভয়ংকর কালোদিন । ১৯৯৬ সালের এই দিনে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার পাকুয়াখালীতে পাহাড়ে কাঠ কাটতে যাওয়া ৩৫ জন নিরীহ বাঙালী কাঠুরিয়াকে নির্মম নির্যাতন আর অত্যাচারের মাধ্যমে হত্যা করেছিল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন তথাকথিত শান্তিবাহিনীরা । পার্বত্যাঞ্চলে শান্তিবাহিনীরা এর আগেও অসংখ্য গনহত্যা করেছিল কিন্তু এই হত্যাকান্ড সকল বর্বরতা আর নৃসংশতাকে হার মানিয়েছিল । কারণ এতগুলো মানব সন্তানকে হত্যা করতে ঘাতকরা একটি বুলেটও খরচ করেনি, শুধুমাত্র দেশীয় অস্ত্র’র আঘাতে হিংস্র হায়েনার মতো ক্ষত বিক্ষত করেছিল প্রতিটি লাশ । তাই উদ্ধার করার সময় অধিকাংশ লাশেরই পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি । এদিনে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার ৩৫ কাঠুরিয়াকে মিটিং করার নামে ডেকে সন্তুর নেতৃত্বে শান্তি বাহিনী নির্মমভাবে পাকুয়াখালী নামক স্হানে হত্যা করে । তাই পার্বত্য গণ পরিষদ চেয়ারম্যান আ্যডভোকেট পারভেজ তালুকদার, মহাসচিব এডভোকেট আলম খান এক বিবৃতিতে এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান । নেতৃবৃন্দ বলেন স্বাধীনতার এত বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে পারলে এ গণহত্যার বিচার হবেনা কেন ? এই নারকীয় গনহত্যার পর বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের তত্কালীন চারজন প্রভাবশালী মন্ত্রী লংগদু উপজেলা পরিষদ মাঠে বিক্ষুদ্ধ জনতার সামনে উপস্হিত হয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচারের প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন । নিহতের পরিবারদের আর্থিক ক্ষতিপূরনের এবং শহীদদের ছেলে সন্তানদের সরকারীভাবে কর্ম সংস্হানের ব্যবস্হা করে দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছিলেন । কিন্তু ঘটনার দেড় যুগ পার হলেও কোন কিছুই করা হয়নি শহীদ পরিবারের জন্য । পরিবারের উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে আজো নিহতদের অসহায় স্ত্রী আর সন্তানেরা পথে পথে ঘুরছে দুমুঠো অন্নের জন্য । আজো তারা জানেনা কি ছিল তাদের অপরাধ ?
ঘটনার পর লংগদু থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও ১৭ বছর পার হলেও রহস্যজনক কারণে এখনো পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ । ঘটনা তদন্তের জন্য সরকারীভাবে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও আজো তাদের তদন্ত করা শেষ হয়নি । সরকারীভাবে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তেমন কিছুই পায়নি নিহতদের পরিবার আর সন্তানেরা । মানবেতর জীবন করেছেন সকলেই । ফলে জীবিকার সন্ধানে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রায় সকলেই । এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি হত্যাকারীদের- এজন্য চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্হানীয় জনগন । নেতৃবৃন্দ পাকুয়াখালী গনহত্যার মূলনায়ক সন্তুলারমা সহ সকল খুনীদের যথাযথ বিচারের দাবি জানিয়েছেন । নেতৃবৃন্দ বলেন এই ৩৫ কাঠুরিয়া সহ ৩৫০০০ বাঙালি শহিদের রক্তে বেচে আছে পার্বত্য চট্রগ্রাম ।দেশমাতৃকার অখন্ডতা রক্ষায় এভাবেই নিজের জীবন বিসর্জন দেন ৩৫ কাঠুরিয়াসহ ৩৫ হাজার বাঙালি নিরীহ জনগণ । কিন্তু তাদের জন্য কিছুই করা হয়নি । তাই পার্বত্য গণ পরিষদ ৩৫ কাঠুরিয়াসহ ৩৫ হাজার বাঙালির স্মৃতি রক্ষায় রাঙামাটি শহরে একটি শহীদ মিনার করার জোর দাবী জানাচ্ছে রাঙামাটি পৌরসভা মেয়র ও সরকারের প্রতি ।
এ জন্য প্রয়োজনে আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা দেন সংগঠনের মূখপাত্র আ্যডভোকেট পারভেজ তালুকদার ।