রবিবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » নবীগঞ্জে ৪’শ বছরের তেতুল গাছ নিয়ে নানা রহস্য
নবীগঞ্জে ৪’শ বছরের তেতুল গাছ নিয়ে নানা রহস্য
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি :: (১০ আশ্বিন ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪৫মিঃ) নবীগঞ্জ উপজেলার ১১ নং গজনাইপুর ইউনিয়নে ঐতিহাসিক শতক গ্রামের ৪শ বছরের পুরোনো একটি রহস্যময় তেঁতুলগাছ নিয়ে সবর্ত্র আলোচনার ঝড় বইছে । এ তেঁতুল গাছের কাহিনী যেন রুপকথার গল্প। ঠাকুরের হাতের রোপন করা গাছের তেঁতুল জটিল রোগের মুক্তি মেলে নিঃসস্তান দম্পতি সস্তান লাভ করেন।
প্রতিদিনই ঐ গাছের নিচে শত শত দর্শনার্থীরা আসেন পূজা দিতে এবং মুসলমান নর নারী আসেন নিজের মনোবাসনা পূরনের জন্য নিয়াজ অথবা শিরনী নিয়ে। বিশাল এ গাছের নিচে রয়েছে শিববানী ঠাকুরের ১টি মন্দির ১টি নাট মন্দির ও যাত্রী নিবাস বসতঘর রয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার অদুরে গজনাইপুর ইউনিয়নের শতক গ্রামের শিববানী ঠাকুরের বাড়ীতে চারশত বছরের পুরনো একটি তেঁতুল গাছ । এই গাছটি দেখতে অনেকে যান ঠাকুর বানীর বাড়িতে। আবার মানতও করে থাকেন অনেকে।
এই গাছটি নিয়ে এলাকা নানা প্রবাদ রয়েছে। প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর ছড়িয়ে আছে এ বিশাল পুরনো তেতুঁল গাছটি। গাছের এক একটি শিকড় প্রায় ৩০-৪০ ফুট দীর্ঘ হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রসস্থ প্রায় ১৫ফুট উচ্চতা ৪০/৫০ ফুট ডাল পালা ৬০/৭০ ফুট নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রায় ৫ বছর আগে এই গাছের শিকড় ২ কিলোমিটার দূরে দেখতে পাওয়া গেছে।
শিববানী ঠাকুরের উত্তরসূরী দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌরাপদ গোস্বামী তেতুঁল গাছ সম্পর্কে বলেন, শুনেছি অন্তত ৪শ বছর আগে ঠাকুর বানী (শিববানী ঠাকুর) নামে এক ঠাকুর তার মা এর জন্য বাজার থেকে টক তেতুঁল নিয়ে আসলে ঐ তেতুল খেয়ে শেষ হয়ে গেলে সকালে মা আবারো তেতুঁল খেতে চাইলে ঠাকুর বানী কে বলেন তখন ঠাকুর বানী মাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি তেতুঁল খেয়ে এর বীজ কোথায় রেখেছেন মা তাকে বলেন ঘরে পার্শ্বে রেখেছি ঐ কথা শুনে তিনি তেতুঁল বীজের কাছে গিয়ে হাতের লোটা থেকে একটু পানি ছিঠিয়ে দিলে সাথে সাথে বীজ থেকে গাছ জন্ম নেয় এর পর গাছে ফুল ফুটেঁ তেতুঁল আসে। তারপর গাছ তেতুঁল হাতে নিয়ে মা কাছে দেন মা তেতুঁল খাবার পর ঠাকুর বানী আবার চলে গিয়ে তেতুঁল গাছে উঠে উধাও হয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ঠাকুর বানীকে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে ঠাকুর বানীর তেতুঁল গাছটি কে ঘিরে রহস্য বিরাজ করছে। হিন্দু মুসলিম সবাই বিস্বাস করেন ঠাকুর বানী জিবিত আছেন। বিভিন্ন পূজায় তিনি ঐগাছে আসেন তাই দর্শনার্থীদের ভীড় জমে প্রতিটি পূজায়।
এলাকাবাসী জানান, তেতুঁল গাছের তেতুঁল টক হবার কথা থাকলেও তা টক নয়, অত্যান্ত সুস্বাধু মজাদার একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছা হয়।অনেকে তেতুঁল খেয়ে মনোবাসনা পূরন হয়েছে। প্রতি বছর ঐ গাছে ১৫/২০ মন তেতুঁল আসে তা ভক্তবৃন্দের মাঝে বিতরণ করা হয়।তেতুঁল গাছের আকার প্রতিদিন বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিশাল আকার ধারন করেছে।হিন্দু ধর্মালম্বীদের মতে প্রতি স্বরসতি ও দূর্গা পূজায় শিব ঠাকুর বানী তেতুঁল গাছে আসেন।ঐ দুটি পূজায় হিন্দুরা সারারাত জেগে কীর্তন করেন।
শতক গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের গ্রামের ৪শ বছরের পুরোনো রহস্যময় তেঁতুলগাছ টি সম্পর্কে শুনছি একদিনের গাছ রোপন করে এক ঠাকুর তার মাকে তেতুঁল খাওয়ার জন্য দিয়েছিলেন।এটা কোন রুপকথা নয় সম্পূর্ন সত্য ঘটনা।একই এলাকার নরপতি শীল (৮০) বলেন ঠাকুর বাবার হাতের লাগানো (ঠাকুর বানী) গাছের ফল(তেতুঁল) খেলে যে কোন রোগ কমে যায়। ঠাকুর বানী মন্দিরের বর্তমান ঠাকুর গৌরাপদ গোস্বামী বলেন ঠাকুর বানীর তেতুঁল গাছ দেখার জন্য প্রতিদিন লোকজন আসেন ।ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য হিন্দুরা আসেন ঠাকুর বানী গাছের তেতুঁল খেতে। বাংলাদেশের মুসলমানরা ঠাকুর বানীর কেরামতিকে বিস্বাস করে গাছের তেতুঁল খেয়ে থাকেন।
গ্রামের ৯৮ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ ছায়েব আলী জানান, আমরা ছোট বেলা থেকেই গাছটি এমন দেখে আসছি। তিনি আরো জানান, আমার দাদা ও মুরব্বিদের মুখে শুনেছি তাদের জন্মের অনেক আগে গাছটির জন্ম। তিনি জানান, এ গাছটির বয়স আমি নিজেও জানি না। কথিত আছে এই গাছ কাটার নিয়তে কেউ গাছের কাছে গেলে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত এসে মারা যায়। গাছটি এর আগে বেশ কয়েকবার বিক্রি করা হয়। কিন্তু কেউ কাটতে সাহস পায়নি। বর্তমানে গাছটির গোড়ায় অনেকে মানত করে রান্না করা খাবার খেয়ে যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মোমবাতি আগরবাতি ও ধোপ জ্বালায়। এই গাছটির রহস্য নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার মানুষের ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা রয়েছে।।