বৃহস্পতিবার ● ৬ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » সন্তানদের খাওয়ার আগে তাকে খাইয়েছি : খাদিজার মা
সন্তানদের খাওয়ার আগে তাকে খাইয়েছি : খাদিজার মা
সিলেট জেলা প্রতিনিধি :: (২১ আশ্বিন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১০মি.) সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের একটি গ্রাম হাউসা পূর্ব পাড়া গ্রামে মাসুক মিয়ার বাড়ি। গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় লোকজনের ভিড়। ঘরের ভেতর থেকে আসছিল কান্নার শব্দ। খাদিজা বেগম নার্গিসের মা মনোয়ারা বেগম বিলাপ করে কাঁদছেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে এলাকার বৃদ্ধ, মধ্যবয়সী ও ছোট ছেলেমেয়েরা। তবু তার কাঁন্না যেন শেষ হচ্ছেনা, হাউমাউ করে আরও জোরে কেঁদে ওঠেন তিনি। বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমি দুধ-কলা খাইয়ে কালসাপ পুষেছিলাম। যাকে নিজের ছেলের মতো আশ্রয় দিয়েছি, সে এ কাজ করল? সে আমার মেয়েকে নির্মমভাবে কুপালো। সন্তানদের খাওয়ার আগে তাকে খাইয়েছি। সে কিকরে এমন নিমক হারামী করলো।
খাদিজার মা জানান, কলেজে যাওয়ার আগে মেয়েকে খাওয়ার কথা বলেছিলেন। প্রত্যুত্তরে নার্গিস মাকে বলেন, ‘আম্মা আমি আইয়া খাইমু।’ মনোয়ারা বেগমের পাশে বসা খাদিজার চাচাত বোন নাদিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। নাদিয়া জানান, সারাদিন তারা দু’জন মিলে দুষ্টুমি করতেন। দু’বোন মিলে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতেন। গত সোমবার থেকে তাদের বাড়িতে বইছে পিনপতন নীরবতা। সিলেট সেন্ট্রাল কলেজের শিক্ষার্থী নার্গিসের ছোট ভাই সালেহ আহমদ জানান, প্রায় ৭ বছর আগে তাকে এবং তার ছোট ভাইবোনদের বাড়িতে লজিং থেকে পড়াতেন বদরুল। বছর তিনেক আগে জাঙ্গাইল কলেজে তার বোনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় এলাকার লোকজন বদরুলকে মারধর করে। এর পরও তার বোনের পিছু ছাড়েনি বদরুল। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সালেহ। আবদুল আহাদ, গিলমান আহমদ, সালমান আহমদ, জিয়াউর রহমান, আনোয়ার হোসেন, আবুল হাসনাতসহ নাম না জানা অনেক _ তাদের প্রত্যেকের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাদের কেউ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কেউবা ঘরের ভেতর ঢুকে নার্গিসের মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। তাদের কয়েকজন জানায়, লজিং মাস্টার বদরুলকে তারা চেনে। তবে ওই মাস্টার এমন কাজ করবে তা তারা ভাবতেই পারছে না। তারা বদরুলের ফাঁসির দাবি জানায়।
ওই গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শিক্ষা-দীক্ষায় এ গ্রাম অনেকটা পিছিয়ে। কিন্তু নার্গিসদের পরিবারের লোকজন সবাই শিক্ষিত। প্রবাসে থাকা মাসুক মিয়া অনেক কষ্ট করে জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছেন। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে শাহিন আহমদ চীনে লেখাপড়া করছেন। নার্গিস কলেজে পড়েন। এমন পরিবারের মেয়ের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকার লোকজন। মোগলগাঁও ইউপির সদস্য তাজিজুল ইসলাম জয়নাল জানান, এলাকার সবচেয়ে ভালো পরিবার মাসুক মিয়ার পরিবার। এ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য শিক্ষিত। আর নার্গিসের মতো একটি মেয়ে আমাদের এলাকায় পাওয়া খুব দুষ্কর। এমন মেয়েকে যে কুপিয়েছে তার শাস্তি দিতে হবে।