মঙ্গলবার ● ২৫ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » পাবনা » পর্যটন কেন্দ্র নয় তবুও প্রতিদিন মানুষের ভীড় পাকশী সেতু এলাকায়
পর্যটন কেন্দ্র নয় তবুও প্রতিদিন মানুষের ভীড় পাকশী সেতু এলাকায়
তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী প্রতিনিধি :: (১০ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৩৫মি.) উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদার বলে খ্যাত লেওয়ে জংসন শহর ঈশ্বরদীর আট কিলোমিটার দৰিন পশ্চিমে পাকশী পদ্মা নদরি উপর সৌন্দর্যের রাজা সেজে দাঁড়িয়ে আছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলওয়ে হার্ডিঞ্জ সেতু৷
১৯১০ সালে এই সেতুটি ব্রিটিশ প্রকৌশলী রবার্ট উলিয়াম গেলস এর নকসা অনুযায়ী নির্মিত হয় ৷ পাশাপাশি মাত্র তিন’শ মিটার ভাটিতে নির্মিত হয়েছে লালনশা সেতু৷ এতে দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরী হয়েছে৷ প্রতিদিন এখানে দুরদুরান্ত থেকে শতশত দর্শনার্থীরা ঘুরতে এসে ভীড় জমায় এ এলাকায়৷
এই দু’সেতুর পাশেই রয়েছে একই সময়ে গড়ে ওঠা প্রকৃতির রুপতিলক ও ঈশ্বরদীর গর্বিত কন্যা বলে পরিচিত বিভাগীয় রেলওয়ে শহর পাকশী৷ সবুজে ঘেরা এই শহরটিকে ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান৷ লালনশাহ সেতু নির্মাণকে ঘিরে পদ্মা নদীর পাদদেশে গড়ে উঠেছে দেশিবিদেশী কর্মকর্তাদের সৌন্দর্য মন্ডিত আবাসিক এলাকা৷ বিমানে উড্ডয়ন রত অবস্থায় বা যে কোন উঁচুস্থান থেকে দেখলে মনে হবে এটি চিন দেশের কোন এক অঙ্গরাজ্য৷ পর্যটনের উজ্জল সম্ভাবনা নিয়ে দু’হাত বাড়িয়ে প্রতিনিয়ত জানাচ্ছে সাদর সম্ভাসন৷
এখানে রয়েছে রাশি রাশি বালুচর আর নয়ন ভোলানো ঘন সবুজ বনরাজি৷ দেশিবিদেশী বিচিত্র পাখির কিচিরমিচির,হৃদয় দোলানো পদ্মার গর্জণ ৷ মত্স্য শিকারে জেলেদের নৌকা নিয়ে পদ্মায় ছুটেচলা৷ পদ্মায় আচরে পড়া ঢেউতরঙ্গ আর রয়েছে লালনশাহ সেতু ও হার্ডিজ্ঞসেতুর মধ্য দিয়ে সূর্যোদয় এবং সুর্যাস্তের দৃশ্য৷ বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে রক্ষিত স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া ইষ্টিম ইঞ্জিন এবং সুদুর ভারত থেকে আগত কুরাইশ বংশধরদের ঐতিহাসিক ফুরফুরা শরীফ ৷
হার্ডিঞ্জসেতু নির্মাণকালিন ব্রিটিশ প্রকৌশলী রবার্ট উইলিয়াম গেলসের ব্যবহৃত বাংলো দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে৷ সব মিলিয়ে পাকশী শহর ও পদ্মা নদী যেন শুধুই ভালবাসার এক প্রাকৃতিক স্বর্গ৷ সে প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার রয়েছে অপূর্ণ সুযোগ৷ কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা সহ বিভিন্ন কারণে প্রকৃতির রুপতিলক পদ্মা নদীর তীরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছেনা৷
১৯৯৩ সালে সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের সাংবাদিক প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে তত্কালিন রাষ্টপতির কাছে পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ করেন৷ সাবেক সরকারের বিমান মন্ত্রীও পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েও কোন কাজ হয়নি৷
সে সময়ের পাকশী আর বর্তমনের পাকশীর মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে৷ পদ্মা নদীর গাইডবাঁধের শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা এমন কি একটি পরিপাটি আধুনিক পিকনিক স্পট নির্মাণ করাও সম্ভব৷ যদিও সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রতি শীত মৌসুমে পাকশীতে পিকনিকপার্টির ভির জমে৷ অথচ এতসব সম্ভাবনা থাকা সত্তেও কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করছেননা৷ পাকশীর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছর এখানে বসানো হয় বৈশাখী মেলা ৷ আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের৷ ১৯১০ সালে হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে পদ্মার কোলঘেষে পাকশী শহর গড়ে উঠেছে৷ সেতু নির্মাণ শেষে শহরের মধ্যে গড়ে উঠেছে রেলওয়ে বিভাগীয় রেলওয়ে কন্ট্রোল অফিস৷ এখান থেকেই দেশের অভ্যনত্মরে ও ভারত বর্ষের মধ্যে চলাচলকারি ট্রেন তদারকি করা হতো৷তখন বিভাগীয় রেলওয়ে কন্ট্রোল অফিসের পাশেই পদ্মা নদীতে ছিল ঐতিহাসিক সাড়াঘাট৷
এ ঘাটে নিয়মিত ভিরতো দেশীবিদেশী যাত্রী , মালবাহী জাহাজ ও ষ্টিমার৷ এ ঘাট থেকে নদী পথে সহজেই ভারতের বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করা যেত৷ বর্তমানে সাড়াঘাটে দেশীবিদেশী জাহাজ ষ্টিমার না ভিরলেও বিভিন্ন কারণে পাকশীর আকর্ষণ বেড়েই চলেছ । বিশাল এলাকাজুরে তৈরী হয়েছে ইপিজেড৷ পাশেই নদীর ধারদিয়ে তৈরী হয়েছে একটি ভারতীয় কোম্পানীর আবাসিক এলাকা ও বিশ্বের ২৮ তম রুপপুর পরমাণু বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে৷ রাশিয়ানদের পদভারে এলাকা সবসময় সরগরম থাকছে৷
প্রতিবছর শীত মৌসুমে উত্তর গোলার্ধ থেকে ছুটে আসা অনেক পাখি পাকশী অঞ্চলে থেকে যায়৷ সম্প্রতি পাখি শিকার করতে গিয়ে পাকশী সেতু প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার মি. মেসের আলী খান (টাইগার খান) সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিলেন৷ প্রায় সারা বছরই পাকশীতে জেলেদের কর্মব্যস্ততা লক্ষ করা যায়৷ পাকশীর গোটা শহরটা সবুজে ঘেরা থাকায় বিমানে উড্ডয়নের সময় মনে হয় শালিক পাখির বাসা আর হার্ডিঞ্জসেতুকে মনে হয় বাঁশের তৈরী সাঁকো৷ পাকশীর সঙ্গে দেশের সকল অঞ্চলের যোগাযোগ খুবই সহজ৷ বিমান, রেলপথ, সড়কপথ ও নদীপথে পাকশীতে সহজেই আসাযাওয়া সহজ৷
এছাড়াও এখানে রয়েছে পেপার মিল,আকর্ষণীয় রেলওয়ে একাধিক সিঙ্গল ও দ্বিতল বিশিষ্ট টানেল৷ইপিজেডসহ আরো অনেক কিছু৷ যা সহজেই দেশীবিদেশীদের মন কেড়ে নেয়৷
নদীতে পালতোলা নৌকা, স্পিডবোট, কেরিট্রলার৷ এসবই নদী ভ্রমনের কাজে লাগে৷ পর্যটকরা কোথাও না গেলেও ব্রিটিশ প্রকৌশলী রবার্ট উলিয়াম গেলসের বাংলো এবং রেলওয় বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন রঙে সজ্জিত ইংল্যান্ডের তৈরী বাস্পচালিত ন্যারোগেজ ইঞ্জিণটি দেখতে যান৷ এদু’টি স্থানে না গেলে পর্যটকরা যেন স্বসিতপাননা৷ পাকশীতে নিরাপদ রাত কাটানোর জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে৷ এখানে কয়েকটি এসি নন এসি গেস্ট হাউজ ছাড়াও বিনোদনের জন্য রয়েছে টেনিস কোর্ট, একাধিক সুইমিংপুল,ফুটবল খেলার মাঠ৷ এলাকার ঐতিহ্যবাহি সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মঞ্চ৷ পাকশীর মধ্যে রয়েছে ঐহ্যবাহি বিবিসি বাজার৷ এ বাজার সম্পর্কে বিশ্বের সচেতন মহলের কমবেশী জানা রয়েছে৷
মুকি্তযুদ্ধচলাকালিন সময়ে বিবিসি বাজারের কাশেম মোল্লার চায়ের দোকানে বসে এলাকার লোকজন রেডিওতে বিবিসি সেন্টারের মাধ্যমে যুদ্ধের খবর শুনতেন৷
এ কারণেই বাজারটির নাম করণ হয়েছে বিবিসি বাজার৷অনেক পর্যটক বিবিসি বাজারে এসে মুগ্ধ হয়েছেন৷ আরো মুগ্ধ হয়েছেন অপরুপ গ্রামের পরিবেশ দেখে৷ দুরসম্প্রতি লন্ডন থেকে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং সেন্টারের কর্মকর্তারা এসে বিবিসি বাজার ঘুরেগেছেন৷ তাঁরা এক সভায় বিবিসি বাজারসহ গোটা পাকশীর ভুয়সী প্রশংসা করেন৷