রবিবার ● ১৩ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » এখন থেকে কেইস ডায়েরি ছাড়া কাউকে আদালতে আনা হলে বিচারক তাকে মুক্তি দেবেন
এখন থেকে কেইস ডায়েরি ছাড়া কাউকে আদালতে আনা হলে বিচারক তাকে মুক্তি দেবেন
৫৪ ধারার রায়ে আপিল বিভাগের গাইডলাইন হিসাবে নির্দেশনা । ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও ১৬৭ ধারায় রিমান্ডের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রতি যুগান্তকারী নির্দেশনা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যুগান্তকারী এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কেইস ডায়েরি (তদন্তের দিনপঞ্জি) ছাড়া কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ এই রায় প্রকাশ করে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ৩৯৬ পৃষ্ঠার এই রায়টি লিখেন। এতে সাক্ষর করেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। গত ২৪ মে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও পুলিশ রিমান্ড প্রশ্নে ১৩ বছর আগে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। বহালের সাড়ে ৫ মাসের মধ্যে আপিল বিভাগ গতকাল এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করল।
ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক এবং ট্রাইব্যুনালের জন্য গাইডলাইন
১. যদি কোন ব্যক্তিকে কোন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারা মোতাবেক কেস ডায়েরি ছাড়া উপস্থাপন করেন, তবে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত বা ট্রাইব্যুনাল ওই ব্যক্তিকে ধারা ১৬৭ অনুযায়ী মুক্তি দিবেন। এক্ষেত্রে তার কাছ একটি বন্ড নিতে হবে।
২. যদি কোন গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কোন সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কর্মকর্তা যদি কোন আবেদন করেন, যে ব্যক্তি আগে থেকেই কাস্টডিতে আছেন, ওই ব্যক্তিকে যদি মামলার ডায়েরিসহ আদালতে হাজির করা না হয় এবং গ্রেপ্তারের আবেদন যদি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং যদি ভিত্তিহীন হয়, তবে আদালত ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন।
৩. উপরোক্ত শর্তপূরণ সাপেক্ষে যদি কোন ব্যক্তিকে আটকের ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করা না যায়, যা ১৬৭(২) ধারা মোতাবেক এবং ওই মামলা যদি সেশন কোর্ট বা ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হয় তবে ম্যাজিস্ট্রেট ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী রিমান্ডে পাঠাতে পারবেন, তবে একইসঙ্গে ১৫ দিনের বেশি নয়।
৪. ফরোয়ার্ডিং এ বর্ণিত কারণ যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সন্তোষজনক মনে হয় এবং কেস ডায়েরিতে বর্ণিত অভিযোগ অথবা তথ্য যদি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কেস ডায়েরিতে যদি ওই ব্যক্তি আটক রাখার জন্য তথ্য থাকে, ম্যাজিস্ট্রেটে ওই ব্যক্তি আরও আটক রাখার জন্য আদেশ দিবেন, যা তিনি সঠিক মনে করেন।
৫. কোন কাজ থেকে বিরত রাখতে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার কোন ব্যক্তিকে আটকের আবেদন বিচারক মঞ্জুর করবেন না।
৬. ১৬৭ ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোন আদালতে হাজির করা হলে শর্তগুলো পূরণ করা হয়েছে কি-না, সেটা দেখা ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারকের দায়িত্ব।
৭. যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এটা বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যে কোন সদস্য বা কর্মকর্তা যার কোন ব্যক্তিকে আইনত কারারুদ্ধ করার ক্ষমতা আছে, ওই কর্মকর্তা বা সদস্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কার্যক্রম করেছেন তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ড-বিধির ২২০ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
৮. যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন কর্মকর্তা কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিতে রিমান্ডে বা তার কাস্টডিতে নিবেন, তখন তার দায়িত্ব হচ্ছে নির্ধারিত সময় শেষে তাকে আদালতে তাকে আদালতে হাজির করা। যদি পুলিশ রিপোর্ট বা অন্য কোনভাবে জানা যায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তি মারা গেছেন তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষার নির্দেশ দিবেন, যদি দেখা যায় যে, ভিকটিমের এরই মধ্যে দাফন হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে মৃতদহ উঠিয়ে মেডিকেল পরীক্ষার নির্দেশ দিবেন, যদি মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টে দেখা যায়, মৃত্যু হত্যাজনিত, তবে ম্যাজিস্ট্রেট হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী ওই কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অথবা ওই কর্মকর্তা যার কাস্টডিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিবেন।
৯. যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপাদান বা তথ্য থাকে কোন ব্যক্তি কাস্টডিতে নির্যাতন বা মৃত্যুর শিকার হয়েছেন (নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ২ এ বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী) নির্যাতনের ক্ষেত্রে তিনি ভিকটিমকে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে রেফার করবেন। আর মৃত্যুর ক্ষেত্রে আঘাত বা মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ডে রেফার করবেন। যদি মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায় আটক ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়েছে অথবা নির্যাতনের কারণে মৃত্যু হয়েছে, এক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট ধারা ৪ ও ৫ এ মামলার জন্য অপেক্ষা না করে স্বপ্রণোদিত হয়ে ধারা ১৯০(১)(সি) অনুযায়ী অপরাধ আমলে নিবেন। এসব নির্দেশনা সার্কুলেট করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র :ইত্তেফাক