বুধবার ● ১৬ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » মেশিনে কাটা গেল শিশু শ্রমিকের হাত
মেশিনে কাটা গেল শিশু শ্রমিকের হাত
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (২ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১৩মি.) অভাবে ঝড়ে গেল পঞ্চম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সুইটির (১১) ভবিষ্যত্৷ অসুস্থ্য বাবার সংসারের হাল ধরতে গিয়ে জুতা কারখানার মেশিনে কাটা গেল ডান হাত৷ কর্মহীন সুইটি এখন হতাশা আর উত্কন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে৷
গুরুতর আহত শিশুটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামের জুতা কারখনা বেনবীজ (প্রাঃ) লিঃ এর শ্রমিক৷ সে চাঁদপুর জেলার হাইমোচড় থানার উত্তর বিংগুড়িয়া গ্রামের আহসান গাজীর কন্যা৷
আহত সুইটির চাচী নাজমা আক্তার জানায়, সুইটি হাইমোচর থানার উত্তর বিংগুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী৷ সুইটির বাবা প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত, মা অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে৷ অভাবের সংসারের হাল ধরতে বিদ্যালয় ছাড়তে হয় তাকে৷ চাচীর হাত ধরে চলে আসে শ্রীপুরের টেপিরবাড়ী গ্রামে৷ দেড় মাস পূর্বে চার হাজার টাকা মাসিক বেতনে সহকারী অপারেটর পদে চাকুরী নেয় বেনবীজ (প্রাঃ) লিঃ কারখানায়৷ সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ শেষে বাড়তি আয়ের জন্য প্রতিদিন রাত নয়টা পর্যন্ত চার ঘন্টা অতিরিক্ত সময়ের কাজ করত সুইটি৷ মাত্র ১১ বছর বয়সে দৈনিক বার ঘন্টার কাজ তার শরীরে মানায়নি৷
সুইটি জানায়, গত ১২ নভেম্বর শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কারখানার সুপারভাইজার আজিজুল হক তাকে মেশিন চালাতে বলে৷ কোন অভিজ্ঞতা না থাকার পরও সুইটিকে মেশিন ধরিয়ে দেন ওই সুপার ভাইজার৷ মুহুর্তের মধ্যেই তার ডান হাত মেশিনে ঢুকে গেলে কেটে যায়৷ হাত হারিয়ে কর্মহীন সুইটির দু’চোখে এখন শুধুই হতাশা৷ কিভাবে চলবে অসুস্থ্য বাবার চিকিত্সা ও অভাবের সংসার৷
সুইটির মা পারুল আক্তার জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ পঙ্গু হাসপাতাল থেকে নাম মাত্র চিকিত্সা করে দায় সেরেছে৷ কোন আর্থিক সহযোগীতা করে নি৷ ভাড়া বাসায় চিকিত্সার অভাবে ব্যথায় কাতরাচ্ছে সুইটি৷ হাসপাতালে রেখে তার উন্নত চিকিত্সা করা খুবই প্রয়োজন৷
স্থানীয় লোকদের অভিযোগ, জুতা কারখনায় কম বেতনে শিশু শ্রমিক দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করানো হচ্ছে৷ প্রতিটি শ্রমিকের বয়স ১২-১৪ বছরের মধ্যে৷
কারখানার প্লানিং ম্যানেজার খালেদ হাসান শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, মেয়েটির কান্নাকাটি দেখে মানবিক বিবেচনায় তাকে কাজ দেয়া হয়েছিল৷
কারখানার মালিক শরিফ মাহমুদুল হক বলেন, মেয়েটির চিকিত্সার সকল দায়িত্ব আমাদের৷ তবে কারখানায় কোন শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয় না বলে দাবি করেছেন তিনি৷