বৃহস্পতিবার ● ১৭ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন
স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান (আতিক), গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৩ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১১.০৮মি.) টাঙ্গাইল সদরের তারাবাড়ি গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের মামলায় এক নারীসহ পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সৈয়দ জাহেদ মনসুর জনাকীর্ন আদালতে এ রায় দেন।
হাইকোর্টের নির্দেশে গাজীপুর আদালতে স্থানান্তরিত আলোচিত এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানার মোগলপাড়া গ্রামের আঃ রশিদের মেয়ে বিথী আক্তার ওরফে ইভা (২২), কালিহাতি থানার আউশনারা বোকরেবাইদ গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে এসএম নূরুজ্জামান ওরফে গেদা (৪৫), একই থানার কুটিবাড়ি গ্রামের মো. গাজীবুর রহমানের ছেলে মো. হারুন অর রশীদ ওরফে হারুন (৩১), একই থানার জটাবাড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে মো. শাহজাহান আলী ওরফে শাহজাহান ও টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার বোলালী মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত হাজি ওমেদ আলী সরকারের ছেলে মনিরুজ্জামান ওরফে মনি।
রায়ে একই সঙ্গে আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মো. ফজলুল কাদের সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর আসামি বিথী আক্তার ইভা তার মামাত বোনের বিয়েতে ভিকটিম বান্ধবীকে নিয়ে যায়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে আসামি বিথী সহযোগী আসামি নুরুজ্জামান, হারুন অর রশিদ, শাহজাহান ও মনিরুজ্জামানের হাতে তুলে দেয়। এসএম নুরুজ্জামান গেদার বাড়িতে তারা ভিকটিমকে আটকে রেখে চারদিন পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
পরে ধর্ষণে সহায়তাকারী আসামি বিথী আক্তার ইভা অসুস্থ ভিকটিমকে তার বাড়ির কাছে রেখে পালিয়ে যায় এবং ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করলে ছুরি দিয়ে হত্যা করবে বলে তাকে ভয় দেখায়। এতে ভিকটিম আতঙ্কিত হয়ে ঘটনাটি লুকানোর চেষ্টা করে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে ভিকটিম বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেয়।
এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। ডাক্তারি পরীক্ষা ও ভিকটিমের স্বীকারোক্তিতে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মজিবুর রহমান সহায়তাকারী বীথি সহ পাঁচ ধর্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ভিকটিমকে মধুপুরের বোকারবাইদ গ্রামে আসামী এস এম নুরুজ্জামানের বাড়িতে অন্যান্য সহযোগী আসামীদের সহায়তায় রাখার বিষয়টি বাড়ির গৃহকর্তা আসামী এস এম নুরুজ্জামানের স্ত্রী চায়না বেগম টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এর কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে আইনজীবি জানিয়েছেন।
পিপি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে আরো জানান মামলাটি টাঙ্গাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ছিল। পরে এ মামলায় বিচারক বিব্রতবোধ করায় হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর মামলাটি গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়। মামলায় ১৮জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে বৃহস্পতিবার আদালত আলোচিত মামলাটির রায় দেন।
ভিকটিমের পক্ষে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী মো. জালাল উদ্দিন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের টঙ্গী শাখার সভাপতি আনোয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী মো. জালাল উদ্দিন জানান, গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীকে দেড় বছর ঢাকার শেল্টার হোমে রাখা হয়। পরে তাকে তার নিজ বাড়ি পাঠিয়ে দিলে সেখান থেকে কিছু দিন পরে তাকে ফের ঢাকায় আনা হয়। এর পর তাকে একটি এনজিওর সহায়তায় ছয় মাসের গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বর্তমানে সে গাজীপুরে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করছে।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের স্পেশাল পিপি ফজলুল কাদের। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল।