শুক্রবার ● ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » দেশে ২০১৬ চলতি বছর ১৫ হাজার ৫৪টি সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে
দেশে ২০১৬ চলতি বছর ১৫ হাজার ৫৪টি সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে
ঢাকা প্রতিনিধি :: (১৬ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.০০মি.) ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৯৮ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে এক হাজার ৯ জনকে। হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৮ জনকে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। নিখোঁজ রয়েছেন ২২জন।
প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে ২০৯টি। ৩৬৬টি মন্দিরে পূজা বন্ধ করা ও ৩৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ১৫ হাজার ৫৪টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার ৩০ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
সংবাদ সম্মেলনে ১ লা জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর -২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে বসবাসরত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের চিত্র প্রকাশ করা হয় ।
যা বিভিন্ন সংবাদ পত্র ও তাদের প্রতিনিধিদের তথ্য প্রমাণ সহ রির্পোট পাঠানোর ভিত্তিতে।সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে বাংলাদেশে বসবাসরত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের এ চিত্র তুলে ধরেন সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি. সুকৃতি কুমার মন্ডল।
তিনি বলেন এই রিপোর্ট কোন দল বা ব্যক্তিকে খুশি বা অখুশি করার জন্য নয় । প্রকৃত সত্য আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসি সহ বিশ্ববাসি কাছে পৌছানোঁ । ২০১৬ সাল এদেশে সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের জন্য ছিল এক নির্যাতনের বছর ।
কারণ এই বছর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে সংখ্যালঘূ নির্য়াতন হয়েছে । যারকানে বহু হিন্দু পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এ বছর।অনেকে এই বছরকে সংখ্যালঘূ নির্যাতনের বছর হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটেছে ৮৬টি। এর মধ্যে ভূমি দখল ৬১টি, ঘরবাড়ি দখল ৫টি এবং দখলের তৎপরতার ঘটনা ঘটেছে ২০টি। উচ্ছেদে ঘটনা ঘটেছে ২১০টি, উচ্ছেদের তৎপরতার ঘটনা ঘটেছে ৩২৬টি, উচ্ছেদের হুমকি তিন হাজার ৪৩১টি, দেশ ত্যাগের হুমকি ৭১১টি।
তিনি আরো বলেন, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, চুরি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১৪১টি। বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, চুরি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৩২৮টি।
প্রতিমা ভাঙচুর ২০৯টি, প্রতিমা চুরি ২২টি, মন্দিরে পূজা বন্ধ করা হয়েছে ৩৬৬টি, অপহরণ ৩৮টি, অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭টি। গণধর্ষণ হয়েছে ৪টি। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত বা ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা এক হাজার ২৫১টি।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে ধর্ষণ, হত্যা, প্রতিমা ভাঙচুরসহ ৩০টি ক্যাটাগরিতে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে আরও জানানো হয়- চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৩৫৭ জনকে জখম, ৮ জনকে কারাগারে আটক, ৯৯ জনকে চাঁদাবাজি-মারধর ও আটকে রেখে নির্যাতন, ১৬৫টি লুটপাটের ঘটনা ও বসতঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১৩টি হামলা হয়েছে।
এ বছরের শুরু থেকে ধারবাহিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যার কারণে বহু হিন্দু পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। অনেকে এ বছরকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বছর হিসেবে অভিহিত করেছেন। চাকরির নামে ধর্ষণ, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ, মা মেয়েকে নৌকায় তুলে একসঙ্গে ধর্ষণ, হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ি, মাঠ-মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দিরের রথের জায়গা দখল করা হয়েছে।
চাকরির নামে ধর্ষণ,স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ, হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর বাড়ি,মঠ-মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর,ধামরাইয়ে মাধব মন্দিরের রথের জায়গা দখল, দিনাজপুরের পুজা ও ধর্ষণ, সিলেটে ইসকন মন্দিরে হামলা,চট্টগ্রামে চশবাজারে শিব মন্দির ভাংচুর ও দখল, প্রশাসনরে প্রত্যক্ষ মদদে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসির নগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা মধ্য যুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
হিন্দু সম্প্রদায়কে দেশ ত্যাগের বাধ্য করনের যে ঘটনা ঘঠেছে তা শুধু ৭১ এর পাক হানাদের বাহিনীর ধ্বংস যজ্ঞকে স্মরণ করিয়ে দেয়।দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাংচুর,সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি লুট,জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সংখ্যালুদের সমুলে বিনাস করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ২০১৬ সালকে হিন্দু নির্যাতনের বছর হিসেবেই ঘোষনা করে এ সংবাদ সম্মেলনে।
সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ড. প্রভাস চন্দ্র রায় , উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আনন্দ কুমার বিশ্বাস, প্রধান সমন্বয়কারী শ্যামল কুমার রায়, পলাশ কান্তি দে মুখপাত্র সহ ভাপতি ডিসি রায়,সুশীল মাহাতো, বাদল দত্ত, যুগ্ম মহাসচিব সমীর সরকার ,অখিল মন্ডল , ফণি ভূষণ হালদার , ডা. নিমাই চন্দ্র আয়্য, কেনেডি ঘোষ, ব্রিটিশ কর্মকার রামকৃষ্ণ দাস, উজ্জল কুমার পাল , জগন্নাথ হালদার হিন্দু মহিলা জোটের সভাপতি মীনা দেবী ছেত্রী, সিনি: সহ সভাপতি বান্তি দাস সাধারন সম্পাদক বনানী বিশ্বাস,যুগ্ম সম্পাদক সোমা সরকার, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের প্রধান সমন্বয়কারী পংকজ হালদার ,সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে, নির্বাহী সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক সুদীপ চন্দ্র হালদার , সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাজেশ নাহ ,সজল নাহা, রঞ্জন পাইক সাংঠনিক সম্পাদক কনক কান্তি সাহা ,ছাত্র মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি বাবুল শিকদার, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সজীব বৈদ্য , য্গ্মু সম্পাদক উত্তম বিশ্বাস ও সুরঞ্জন মণ্ডল প্রমূখ ।