রবিবার ● ৮ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » যে গ্রামের ৭০ ভাগ মানুষ ব্যবহার করে খোলা পায়খানা
যে গ্রামের ৭০ ভাগ মানুষ ব্যবহার করে খোলা পায়খানা
মো.আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: (২৫ ফৌষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.০৩মি.) ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম আমতৈল। এখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এরা দিন আনে দিন খায়। একটি অজপাড়া গাঁ। বেশীর ভাগ মানুষ মৎস্যজীবী। অবহেলিত ও অনুন্নত গ্রাম। গ্রামটির অবস্থান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে আমতৈল গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। লোকসংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। দুঃখজনক হলেও সত্য গ্রামের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে খোলা পায়খানা ব্যবহার করে আসছে। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার নেই বললেই চলে এ গ্রামে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে গ্রামে রোগ ব্যাধি তাদের নিত্যসঙ্গী। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমতৈল গ্রামে এখনো প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার খোলা পায়খানা ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এ গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এ গ্রামের অনেক মানুষ পানিবাহিত রোগে ভোগছে। শিশুরা প্রায়ই ডায়রিয়া, জন্ডিস, খাদ্যে বিষক্রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বড়দের বেলায়ও একই সমস্যা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, হাসপাতালে বেশির ভাগ রোগী আসে আমতৈল গ্রাম থেকে। প্রতিদিন এ গ্রামের মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করার মত। এ গ্রাম থেকে হাসপাতালে যে সব রোগী আসে তাদের বেশীর ভাগের সমস্যা খোলা পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কিত। এ সমস্যা তাদের পুরনো।
বাড়ির সীমানা ও খালের পাশে বাঁশের তৈরি খোলা পায়খানা ব্যবহার করা হচ্ছে। ময়লা ও পানি নিষ্কাশনে নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়েও বসবাস করছেন গ্রামের মানুষ। এছাড়া এ গ্রামে বিশুদ্ধ পানির অভাব তো রয়েছেই।
আমতৈল গ্রামের কবির মিয়া বলেন, গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ দরিদ্র। যার কারণে খোলাপায়খানা ব্যবহার করে থাকেন। তিনি স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ মৎস্যজীবী। অভাবের কারণে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে পারে না।
রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, দুইশ পরিবারের মধ্যে ৫টি পরিবারে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই। যার কারণে এখানকার মানুষের রোগে ভোগতে হয় প্রায় সারা বছর। তাছাড়া পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানার ব্যবস্থা করার জন্য সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার মো.ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ঘনবসিত আমতৈল গ্রামে স্যানিটেশনের ব্যবস্থা দরকার। স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার না করায় এ গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ ডায়রিয়া, আমাশয় ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসে। তিনি স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করার জন্য আমতৈল গ্রামের মানুষকে আহবান জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন এসেছি। তবে লোকমুখে শুনেছি স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা আমতৈল গ্রামে খুবই কম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব এবং গ্রামটি পরিদর্শন করতে যাবেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে আমতৈল গ্রামের কয়েকশত পরিবারকে সরকারিভাবে স্যানিটিশনের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরোগ্রামকে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহারে আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।