শুক্রবার ● ১৩ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » বাউকুল চাষে ভাগ্য বদলে দিচ্ছে সাজেকের প্রান্তিক পাহাড়িদের
বাউকুল চাষে ভাগ্য বদলে দিচ্ছে সাজেকের প্রান্তিক পাহাড়িদের
মো.মাইনউদ্দিন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: (৩০ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.১০মি.) বাউকুলের চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সীমান্তবর্তী রাঙামাটি জেলার সাজেকের অর্ধ-শতাধিক পাহাড়ি পরিবার। এবছর সাজেকে বাউকুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো গাছের ফল বিক্রিও শেষ পর্যায়ে। উৎপাদিত এসব বাউকুল স্বাদে ও মিষ্টি। সাজেক পাহাড়ের উঁচু নিচু জমিতে এবছর ব্যাপকহারে বাউকুল উৎপাদন হয়েছে।
ফলের ভারে নুয়ে পড়া গাছগুলোকে বাঁশের ঠেকা দিয়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ৫ থেকে ১০ ফুট উঁচু প্রতিটি গাছে ঝুলছে পরিপুষ্ট বাউকুল। কোনোটি সবুজ আবার কোনোটিতে হালকা বাদামী রং ধরেছে। ফলের ভারে কোনো কোনো ডাল বাউকুলসহ মাটির উপরেই লতার মতই পরে আছে।
রাঙামাটির সাজেকের বাঘাইহাট ডিপু পাড়ার সুজন চাকমার বাউকুল বাগানে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ৮০শতাংশ জায়গা জুড়ে সুজন চাকমার বাগানে সব মিলিয়ে ১৮৫টি বাউকুল গাছ রয়েছে। সবকটি গাছেই ফলন এসেছে। বড় আকারের এই বাউকুল’র একেকটির ওজন ৩০ থেকে ৫০গ্রাম। স্বাদেও বেশ মিষ্টি।
শুধু সুজন চাকমা নন, সাজকের ডিপু পাড়া, গুচ্ছ গ্রাম নোয়াপাড়া, গ্লোকমা ছড়া, মাচালং এ্যাগোজ্যাছড়ি এলাকায় তাঁর মতো আরও অর্ধ-শতাধিক বাউকুলচাষী রয়েছেন। এ বছর এই এলাকায় বাউকুলের ফলন যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। এই মৌসুমে একেকজন চাষি পঞ্চাশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বাউকুল বিক্রি করেছেন।
বাউকুল চাষী সুজন চাকমা সিএইচটি মিডিয়াকে জানান ২০১৪ সালে খাগড়াছড়ির এক নর্সারী থেকে পঞ্চগড়ের বাউকুলবীজ নিয়ে আসি। ৮০শতাংশ জায়গায় আমি ১৮৫টি চাড়া রুপন করি। ২০১৫ সাল থেকে বাগানে ফল আসা শুরু হয়। প্রথম বছরেই বাগান থেকে ২৫ থেকে ৩০হাজার টাকার মত বাউকুল বিক্রি করেছি। আর এই বাগান করতে প্রথমে আমার ১৫হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবছর বাগানে বাদুর ও পাখিদের হাত থেকে রক্ষা করতে জাল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় পুরো বাউকুল বাগান এবং ঔষুধ সহ বাগান পরিস্কার বাবত খরছ হয় ছয় হাজার টাকা মত। ঠিকমত বাগান পরিচর্যার কারনে বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ফলন্ত বাগন থেকে মাত্র অর্ধেক বাউকুল বিক্রি করে আয় হয়েছে ১লাখ ৭ হাজার টাকা ।প্রতি কেজি বাউকুল প্রথমে ৮০টাকা ও এখন ৬০টাকা করে বিক্রি করেছি।
সুজন চাকমা আরও বলেন সাজেকরে বাউকুল সমতলে প্রিয় হওয়ায় সাজেক থেকে ও আমার বাগান থেকে বাউকুল চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজধানী ঢাকাতেও নিয়ে যাচ্ছে দীঘিনালা খাগছড়িরর বাউকুল পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সুজন চাকমার মত ডিপু পাড়ার শান্তিময় চাকমা, মিলন কার্বারী, খোখন চাকমা তাদের বাউকুল চাষে অভাবনী সাফল্যের বর্নণা দেন এবং বাউকুল চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে ও স্বাভলম্বী হয়েছেন বলে জানিয়েছন তারা।
সাড়া জাগানো এ বাউকুল নিয়েই এখন আলোচনা চলছে সাজেক জুড়ে। কম পুজিতে লাভ বেশি হওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাউকুল চাষ। বাম্পার ফলন আর বেশি লাভের আশায় জুম চাষ বাদদিয়ে বাউকুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে পাহাড়ি সাজেক অঞ্চলের কৃষকরা।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, সাজেকে কয়েক বছর ধরে বাউকুল ফলছে। প্রতিবছর ফলন বেড়েই চলছে। এর মধ্যে ডিপু পাড়া গ্রামে বেশি বাউকুল চাষ হয়। পার্বত্য এলাকার সব চেয়ে সাজেকের বাউকুল বড় স্বাদেও মিষ্টি । এলাকায় মিশ্র ফলজ বাগানেরও প্রয়োজন রয়েছে সরকারি সাহায্য পেলে এখানে বাউকুল চাষ বাড়বে পাশাপাশি কৃষকেরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল ইমরান সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, উপজেলার ৫-৬ একর জমিতে বাউকুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাজেকে ৩-৪একর জমিতে কৃষকেরা আমাদের কৃষি পরামর্শ ক্রমে এই চাষ করে, এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে বাউকুল চাষীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। উপজেলার সাজেকেই প্রথম বাউকুল চাষ শুরু হয় এবং সেখানের আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় এর ফলন বেশী হচ্ছে।