শুক্রবার ● ২০ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ বানিজ্য : দ্বিতীয় দফা তদন্তে রাঙামাটি’র আব্দুল মোত্তালেব সরকারের দুর্নীতির প্রমান
ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ বানিজ্য : দ্বিতীয় দফা তদন্তে রাঙামাটি’র আব্দুল মোত্তালেব সরকারের দুর্নীতির প্রমান
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ::(৭মাঘ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫০মি.) ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সাবেক সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা তদন্তে ব্যাপক দুর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যর অভিযোগ প্রমান হয়েছে। ২০ জানুয়ারি শুক্রবার রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম তদন্ত করেন।
এর আগে গত বছরের গত ২৪ আগষ্ট ডিএডি আব্দুল মোত্তালেব সরকারের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে হয়রানী, ঘুষবানিজ্য ও উত্যক্তসহ যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তদন্ত করতে ঝিনাইদহে আসেন প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর। তিনি তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করেন। উক্ত রিপোর্টে উভই ফেঁসে যান।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, চাকরী বাঁচাতে উপর মহলে তদ্বীর করে আবারো দ্বিতীয় দফা তদন্তের আয়োজন করেন সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার। দ্বিতীয় দফার রিপোর্টটি পুরোপুরি তার পক্ষে নেবার জন্য মিমাংশিত বিষয়টি নতুন করে আবারো তদন্ত করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত কর্মকর্তা আবজাউল আলম ২০ জানুয়ারি শুক্রবার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, নিরপেক্ষ ভাবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। উভয় পক্ষের তথ্য উপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। তিনি দ্রুত রিপোর্ট দিবেন বলে জানান।
ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক বজলুর রশিদের কাছে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, গোপন তদন্তের বিষয়ে আপনারা কিভাবে খবর পেলেন ? তিনি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে উপদেশ দিয়ে বলেন, আপনারা বাইরে অপেক্ষা করুন, কোন প্রমান থাকলে চেয়ে নেওয়া হবে। সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগকারী রোখসানা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আমি বিষয়টি ডিজি মহোদয়কে লিখিত জানিয়েছিলাম। প্রথমে একবার তদন্ত হয়েছে। পক্ষপাতিত্ব নয়, আমি ন্যায় বিচার চাই।
উল্লেখ্য, পাসপোর্ট গ্রাহীতাদের কাছ থেকে বেপরোয়া ঘুষ আদায়, মানুষের সাথে চরম দুর্ব্যবহার, দুর্নীতি ও অফিসের নারী কর্মচারী রোখসানাকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার কারণে মোতালেব সরকারকে রাঙামাটি পাসপোর্ট অফিসে বদলী করা হয়। সে সময় ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসে পদায়ন (চঃ দাঃ) করা হয় রাঙামাটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ডিএডি ফরিদ উদ্দীন আহমেদকে। কিন্তু ফরিদ উদ্দীনকেও ২/৩ মাস পর বদলী করা হয়।
বর্তমান সহকারী পরিচালক হিসেবে বজলুর রশিদকে পদায়ন করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, একাধিক কর্মকর্তার বদলী হলেও ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ বন্ধ হয়নি। বরং ঘুষের রেট আট’শ থেকে বৃদ্ধি করে ফাইল প্রতি নয়’শ টাকা করা হয়েছে।
এ হিসেবে ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসে দিনে আনুমানিক এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে ঘুষ আদায় করা হচ্ছে। ঘুষের টাকা না দিলে চরম ভাবে হয়রানী করা হয় মানুষকে। এ নিয়ে পাসপোর্ট গ্রাহীতাদের মাঝে ক্ষোভ এবং অসেন্তাষের অন্ত নেই। পদে পদে হয়রানী ও দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয় ঝিনাইদহের মানুষকে। ঝিনাইদহ পোসপোর্ট অফিসের ঘুষের টাকা প্রতি সপ্তাহে ভাগাভাগি করা হয়। এর মধ্যে সহকারী পরিচালকের নামে ৬০% ও বাকী ৪০% টাকা সাধারণ স্টাফরা ভাগ করে নিচ্ছেন।
অফিস সহকারী আলপিন নাহার এই ঘুষ বানিজ্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তার সাথে আছেন সুপারভাইজার ইমরান, গৌতম কুমার সাহা, মাসুদ, হাসান, জয়নাল আবেদীন, কামরুজ্জামান ও সোহাগ। এরা স্টোর রুম ও বাথরুমে ঢুকে ঘুষ নিয়ে থাকেন। এদের মধ্যে ইমরান, সোহাগ, কামরুজ্জামান ও জয়নালের কোন সরকারী বেতন নেই। একটি প্রজেক্টে এই চারজনের বেতন হতো। প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পর ঘুষের টাকায় এদের বেতন দেওয়া হয়।
অফিস সহকারী আলপিন নাহার ঘুষ আদায় করে প্রতি সপ্তহে ইমরান, সোহাগ, কামরুজ্জামান ও জয়নালের বেতন প্রদান করেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক বজলুর রশীদ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আমি নতুন মানুষ। অফিসে কোন ঘুষ নেওয়া হয় কিনা তা আমার জানা নেই। কর্মচারী ইমরান, সোহাগ, কামরুজ্জামান ও জয়নালের কি ভাবে বেতন দেওয়া হয় তিনি বলতে পারেন নি। অফিস সহকারী আলপিন নাহার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, রবিবার অফিস টাইমে এসে সব কিছু শুনে যাবেন। আমি তো অফিসের প্রধান নই।