রবিবার ● ২৯ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » নিজের কিডনী দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারছেন না বিলকিছ
নিজের কিডনী দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারছেন না বিলকিছ
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: (১৬ মাঘ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৪৫মি.) সিলেটের বিশ্বনাথের এক গৃহবধু নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আপন স্বামীকে বাঁচাতে দিয়েছেন নিজের দেহ থেকে একটি কিডনী । বর্তমানে সেই কিডনীতে ভাইরাস জনিত কারনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় নতুন করে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু তাদের হাতে নেই একটি টাকা। অথচ মাত্র ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা হলে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বামীকে বেচে থাকার জন্য স্ত্রীর দেওয়া সেই কিডনীটি আবার সচল হবে। আর তাতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাবে একটি প্রাণ এবং হাসি আনন্দ ফিরে আসবে গোটা একটি পরিবারে। এমতাবস্থায় স্বামীর জন্য স্ত্রীর ভালবাসার এই দৃষ্টান্তকে একটু সহানুভূতি আর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা সমাজের সকল হৃদয়বানদের একান্ত কাম্য।
জানাগেছে বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের ঘাসিগাঁও গ্রামের মৃত আফরুজ আলীর পুত্র আতিকুর রহমান (৪৭) দীর্ঘদিন পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিআরব গিয়েছিলেন নিজের পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। দেশে স্ত্রী ও চার কন্যার ভরনপোষনের জন্য প্রবাস থেকে নিয়মিত টাকা পাঠালে বেশ ভালই ছিল তার পরিবার এবং অনেকটা সুখেই ছিল তারা। আর বছর তিনেক পূর্বে বড় মেয়েকে পাত্রস্থ করায় কিছুটা দুঃচিন্তা মুক্তও ছিলেন আতিকুর রহমান। কিন্তু সেই সুখ তার কপালে বেশী দিন স্থায়ী হতে না হতেই সৌদিআরবে অবস্থানকালে ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি রাতে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শরীরে প্রচন্ড জ্বর আসে। পরদিন তিনি সৌদি কিং আব্দুল আজিজ হাসপাতালে ভর্তি হলে তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানান এবং ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা প্রদান করা হলে তিনি কিডনী রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার দুটি কিডনীই বিকল হয়ে পড়লে তাকে ডায়ালাইসি দেওয়া হয়। ঐ হাসপাতালে তিনি ১ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দেশে চলে আসেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটের কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আলমগীর চৌধুরীর পরামর্শে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে ৩দিন থাকার পর ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম সেলিমের পরামর্শে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। ঐ সময় চিকিৎসাধিন অবস্থায় তাকে সপ্তাহে ৩ বার ডায়ালাইসি দেওয়া হতো। কিন্তু অবস্থার তেমন উন্নতি না ঘঠায় তাকে বাঁচাতে কিডনী সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । এসময় আতিকুর রহমানের স্ত্রী বিলকিছ বেগম (৩৭) নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বামীর জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনী হাসি মুখে উপহার দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ মাস ১৯ দিন চিকিৎসাধিন থাকার পর গত বছরের ৪ জুন ঐ হাসপাতালেই অপারেশনের মাধ্যমে তার একটি কিডনী ট্রান্সফার করা হয়। কিডনী ট্রান্সফারের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কে.টি আইসিইউ’তে আরো ২ মাস চিকিৎসাধিন ছিলেন। ৫ আগষ্ট তার স্টেন অপারেশন করা হয়। এরপর তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক হলে ২২ আগষ্ট হাসাপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে তিনি বাড়িতে চলে আসেন।
এ পর্যন্ত ডায়ালাইসিস ও কিডনী ট্রান্সফার সহ চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। অপারেশনের পর থকে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। এই বিশাল অংকের চিকিৎসা ব্যয় করতে তারা বাড়ীতে থাকা একটি ভিঠে ছাড়া সবই বিক্রি করে যখন প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান হয়নি তখন আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিবর্গ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। কিডনী ট্রান্সফারের পর তিনি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে উঠেন। সম্প্রতি তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গেলে গত ১৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছে যান। এসময় চিকিৎসক তাকে ‘সিএমভি ডিএনএ’ পরীক্ষা করলে ধরা পড়ে তার কিডনীতের ভাইরাস আক্রান্ত। আর এতে ধীরে ধীরে কিডনীর কার্যক্ষমতা কমে আসছে। কিডনীতে ইনফেকশন হয়ে শরীর ও কিডনী ফুলে যাচ্ছে। শ্বাসকষ্টও বেড়েছে। ‘সিএমভি ডিএনএ’ টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী একজন স্বাভাবিক মানুষের রেফারেঞ্জ ভেলু ০.৬০ থেকে ১.৫০ পর্যন্ত থাকার কথা। কিন্ত গত ২০ জানুয়ারী তারিখে তার টেস্ট রেজাল্টে রেফারেঞ্জ ভেলু রয়েছে ২.১০। যদি এই ভেলু ৪.০০ পয়েন্টে চলে যায় তাহলে কিডনী অকেজো হয়ে পড়বে এবং তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। একথা শুনার পর তার গোটা পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। যেখানে কলেজ ও স্কুলগামী তিন কন্যা যথাক্রমে কলছুমা আক্তার (১৯) ইভা আক্তার (৯) ও শুভা আক্তার (৬) এর লেখাপড়া কিংবা দু’বেলা দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে সেখানে এই মূহুর্তে ব্যয়বহুল চিকিৎসা আতিকুর রহমানের পরিবারের জন্য অনেকটাই বিশাল একটি কঠিন কাজ। চিকিৎসকের পরামর্শ যত দ্রুত সম্ভব তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে ‘সিএমভি ভাইরাস’ দূর করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তারা।
অথচ মাত্র ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা হলে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বামীকে বেচে থাকার জন্য স্ত্রীর দেওয়া সেই কিডনীটি আবার সচল হবে। আর তাতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাবে একটি প্রাণ এবং হাসি আনন্দ ফিরে আসবে গোটা একটি পরিবারে। এমতাবস্থায় স্বামীর জন্য স্ত্রীর ভালবাসার এই দৃষ্টান্তকে একটু সহানুভূতি আর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে সমাজের সকল হৃদয়বানদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন অসহায় পরিবারটি।