বুধবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » গাবতলীতে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন
গাবতলীতে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন
বগুড়া প্রতিনিধি :: ( ২৬ মাঘ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৫৫মি.) ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ব্যাপক উৎসব উদ্দিপনায় মধ্যে দিয়ে বগুড়া গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন হয়েছে। মেলাকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলসহ বগুড়া জেলা ও গাবতলী উপজেলা জুড়ে ছিল ব্যাপক উৎসবের আমেজ ও সবার ঘরে ঘরে ছিল আনন্দ হাসিখুশি’র বাৎসরিক ‘পোড়াদহ মেলা উৎসবের দিন’।
জানা যায়, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদী ঘেষে পোড়াদহ নামক স্থানে সন্ন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে ১দিনের জন্য ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলা চত্তরে এলাকায় আজ হবে বউ মেলা। এবছরে মাঘ মাসের শেষ বুধবার মেলাটি উদযাপিত হলো। মেলাকে ঘিরে উৎসব আমেজে মেতে উঠেছিল আশপাশের গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। ১দিনের মেলা হলেও উৎসব চলে সপ্তাহ জুড়ে। মেলায় লক্ষলক্ষ মানুষের সমাগম ঘটেছিল। এলাকাবাসী জানান, প্রায় ৪’শ বছর পূর্ব থেকে মেলাটি উদযাপিত হয়ে আসচ্ছে। ঈদ বা অন্য কোন উৎসবে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত না দিলেও পোড়াদহ মেলায় দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে খাওয়াতে হয় যা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এবারের মেলার মূল আকর্ষণ ছিল দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ, কুল (বরই), কাঁঠের তৈরি ফার্নিচার। বিক্রি হয়েছে হাজার হাজার মন হরেক রকমের ছোট-বড় মিষ্টি। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, কৃষি সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য হাট-বাজারের আগের মতই বেচা-কেনা হয়েছে। মেলায় শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও মটর সাইকেল খেলাসহ নানা রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। কাঁঠ-বাশঁ ও মাটির তৈরী পুতুল-খেলনা ও বেলুনসহ হরেক রকমের জিনিস বিক্রি হয়েছে বেশী। সবার সমাগমে জমে উঠেছিল পোড়াদহ মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। মেলা’য় হিজরা’দের সমাগম ছিল আগের মতই। ফলে উপস্থিত শতাধিক হিজরা’দের জন্য ছিল ‘পোড়াদহ উৎসব মেলা’। তবে এবছরে মেলায় প্রতিটি দোকানের টোল বেশী হওয়ায় মাছ’সহ প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে। রাজশাহী গোদাগাড়ী থেকে আসা মৎস্য ব্যবসায়ী দুখু, সোহাগ ও রঞ্জু এ মেলায় পদ্মা থেকে নিয়ে আসা ৮৫কেজী ওজনের বার্গার মাছের দাম চায় (১৫শত টাকা প্রতিকেজী দরে) ‘১লক্ষ ২৭হাজার ৫শ টাকা’। একই ভাবে মেলায় আসা শ্রীঃ বিপল চন্দ্র ৮০কেজী ওজনের একটি বার্গারের দাম চায় ১লক্ষ ২০হাজার টাকা। সে জানান, এবছরে মেলায় টোল বেশী চাওয়ায় মাছের দামও বেশী চাইতে হচ্ছে। একইভাবে বগুড়া থেকে আসা ঠান্ডু মৎস্য ভান্ডার ৭৫কেজী ওজনের বার্গার মাছের দাম চাওয়া হয় ১লক্ষ ১২হাজার ৫শ টাকা। এছাড়াও মেলায় প্রতিকেজী ছোট-বড় কাতলা ও রুই মাছ ৮শ থেকে ১হাজার টাকা’সহ অন্যান্য মাছের দাম গতবছরের তুলনায় এবছরে দাম বেড়েছে দ্বিগুন। মেলায় সকল প্রবেশপথে রাস্তাগুলোতে ব্যাপক জানজট ছিল। পাশাপাশি ভিক্ষুক ও পথ শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। মেলার প্রধান আয়োজক এনামুল হক ও মহিষাবান ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ফোনে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। মেলা বিষয়ে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান জানান, মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা ছিল। ফলে ব্যাপক উৎসহ উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে মেলাটি উদযাপিত হয়েছে। গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইর্নচাজ (ওসি) আ.ন.ম আব্দুল্লাহ আল হাসান জানান, পোড়াদহ মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ। মেলা ঘিরে কোন অপ্রতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।