শুক্রবার ● ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » সবখানে ত্রুটি থাকলেও শিক্ষকতায় ত্রুটি রাখা যাবে না
সবখানে ত্রুটি থাকলেও শিক্ষকতায় ত্রুটি রাখা যাবে না
পলাশ বড়য়া :: (৫ ফাল্গুন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময বিকাল ৫.২৫মি.) জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানই শিক্ষকতা পেশার মূল বিষয়। মানুষকে সামগ্রিক পর্যায়ে উন্নীত এবং অসভ্য থেকে সভ্যতার আলোয় আলোকিত করায় হচ্ছে এ পেশার মানুষের মূল কাজ। এ দিকে দিন বদলের পালায় শিক্ষকতা কিন্তু এখন স্মার্ট পেশা।
যদি কেউ জাতির ভাগ্য নির্মাণের কারিগর হতে চান। আদর্শ, ন্যায় ও কল্যাণের মাধ্যমে মানব সমাজকে উপকৃত করতে চান তাহলে তাকে শিক্ষকের পদ গ্রহণ করা উচিত।
কেননা তাঁর মধ্যে থাকতে হবে পঠন-পাঠন এবং অনুশীলন। বিত্তের চেয়ে চিত্তের বৈভবে পক্ষপাতিত্ব। সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যের মনোজগতের গুপ্তধন আবিষ্কারের নেশা। এছাড়া শিক্ষার্থীর প্রতি মমত্ববোধ, প্রখর ধৈর্য, বহির্মুখী স্বভাব এবং অনুসন্ধিৎসু মন থাকা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু একজন শিক্ষকই কিন্তু বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীদের সুপ্ত অধিকার ও প্রতিভা সম্পর্কে সচেতন করতে সক্ষম হয়।
থাকতে হবে পেশার প্রতি তার অগাধ প্রেম এবং শ্রদ্ধাবোধ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন শিক্ষকের সমসাময়িক সমাজের নানা বিষয়ে চোখ কান খোলা রাখা দরকার।
কিন্তু বর্তমানে দলবাজ প্রশাসনের হাতে অযুত-নিযুত শিক্ষক নামধারীর হাত থেকে শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার্থীদের বাঁচাবার আর কোনো বিকল্প পথ দেখছি না। কেননা, শিক্ষার্থীও প্রতিষ্ঠানের সাথে এবং শিক্ষকদের সম্পর্ক ক্রমশ মুক্ত হতে চলেছে।
শিক্ষার্থীরা উত্তরপত্র মূল্যায়নের নামে শিক্ষকের যে দেবতুল্য ক্ষমতার কাছে জিম্মি, এর প্রতিকার শুধু হিসেবে নয়, একেবারে অদক্ষ-অক্ষম-অযোগ্য শিক্ষকদের হাত থেকে রেহাই পাওয়াটা শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ বজায় রাখার প্রথম শর্ত।
শিক্ষক মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটি চালু থাকলে নানান রকম দলবাজি করে নিয়োগ পাওয়া অযোগ্যরা রেহাই পেতেন না। যদি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নেরও সম্মুখীন হতে হতো এসব শিক্ষকনামধারীদের। এই অসুবিধা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় একটাই শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক মূল্যায়নের বিষয়টি নিশ্চিতকরণ। কেননা, সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে অধিকাংশ শিক্ষকদেরই দেখেছি পরিস্থিতির সুযোগটিই তারা নেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখানে কোথায় ? কোথায় জ্ঞানজগতের নানান বিষয় নিয়ে তাদের অবারিত আলোচনা ?
প্রত্যক্ষদর্শীসুত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার আগে যাওয়ার চিন্তা। অনুপস্থিত থাকলেও কৌশলে উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করার কটু চিন্তা। মাস শেষ হতে না হতেই সরকারি টাকা আতœসাত ছাড়াও প্রতিষ্ঠান থেকে কিভাবে হাতিয়ে নেয়া যায় এ দু:চিন্তা থাকে কতিপয় শিক্ষকনামধারীদের। মহান এ পেশার যথার্থ মর্যাদা দিয়ে বেতন-ভাতা হালাল করাও জরুরী। নচেৎ নিজেদের অভিশপ্ত করার পাশাপাশি প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়ার দায় তো এড়ানো যাবে না। শুধু ভালো আইন দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা যায় না।
বহুগুণ কম বেতনের চাকরিখানা তারা ত্যাগও করেন না, কারণ এই মূলধনকে খাটিয়েই তারা তাদের পসার জমিয়ে রাখছেন। দিনের পর দিন ক্লাস না নিয়ে, গবেষণায় যুক্ত না থেকে, খাতা না দেখে, হেলাফেলা করে পাঠদান সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের এবং প্রতিষ্ঠানের ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করছেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মান ও দায়িত্বশীলতা মূল্যায়নের গণতান্ত্রিক এখতিয়ার পেলে এই বাণিজ্যের রাতারাতি অবসান ঘটত।
প্রভাবশালী শিক্ষকদের পেশাগত অসদাচরণ কিংবা শিক্ষকদের মাঝে বহুল প্রচলিত দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে শুধু শিক্ষার মানের দিক দিয়ে নয়, শিক্ষার্থীদের মনোজগত ক্রমদূষিত, অবক্ষয়িত, আত্মকেন্দ্রিক এবং সমাজ বিচ্ছিন্ন হতে উৎসাহিত করেছে।
সবখানে ত্রুটি থাকলেও শিক্ষকতায় ত্রুটি রাখা যাবে না। আপাতত এটা করা গেলেই পরিবর্তনটি ঘটবে।
লেখক : সম্পাদক, সিএসবি২৪ ডটকম