মঙ্গলবার ● ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » ৩৯ বছর ধরে গাছ লাগাচ্ছেন উমরা মিয়া
৩৯ বছর ধরে গাছ লাগাচ্ছেন উমরা মিয়া
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: (৯ ফাল্গুন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩৬মি.)প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকতে চান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আবদুল গফফার উমরা মিয়া (৭৩)। ৩৯ বছর ধরে গাছ লাগিয়ে ‘বৃক্ষ প্রেমিক’ খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। তার হাতের ছোঁয়ায় সবুজাভ হয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, সড়ক-মহাসড়ক।
উমরা মিয়ার জন্ম বিশ্বনাথ উপজেলার তাতিকোনা গ্রামে। তিনি ছিলেন আদর্শ ছাত্র। কৃতিত্বের সঙ্গে বি কম পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে ছিল তার গভীর সখ্য। গাছ রোপণ ও পরিচর্যা করতে পছন্দ করতেন তিনি। মরে যাওয়া গাছ গভীর দাগ কাটত তার মনে। ধীরে ধীরে এটি নেশায় পরিণত হয় তার।
১৯৭৮ থেকে আজ অবধি জীবনের পুরোটা সময় তিনি ব্যয় করেছেন নিজ খরচে উপজেলা জুড়ে বৃক্ষরোপণ করে। এ পর্যন্ত উপজেলার ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগিয়েছেন। এখনো ভ্যান ভর্তি চারা নিয়ে হাজির হন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সড়কে সড়কে নিজ হাতে রোপণ করেন চারা। রোপণের কিছুদিন পর পর দিনব্যাপী পথে পথে ঘুরে সন্তানের মতো পরিচর্যা করেন চারা গাছের। সাধ্যমতো অসহায়-গৃহহীন মানুষদেরও বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত।
স্বজনদের সহযোগিতা নিয়ে এলাকার দরিদ্র ৩১টি মুসলিম ও হিন্দু পরিবারকে ঘর করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। তৃণমূলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠাগার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। সালমান ফারসী জাবের ও সাফওয়ান মেহদী জাকি দুজনেই প্রবাসী। স্ত্রী সাবিহা গফফার তার কাজে প্রেরণা যুগিয়েছেন সব সময়। তাকে নিয়েই বাড়িতে তৈরি করেছেন শখের নার্সারি। এ বাড়ির প্রবেশ পথের দুই ধারে নান্দনিক গাছের সারি। বাড়ির উঠোন, বারান্দা ও ছাদ ভর্তি শত শত ফুল, ফল ও ঔষধি গাছে। তার বৈঠকখানা যেন দুর্লভ এক সংগ্রহশালা। যেখানে রযেছে বিচিত্র জিনিসের সমাহার।
জানা গেছে, এক সময় তার এ সংগ্রহশালা পরির্দশন করেছিলেন আমেরিকান মেডিকেল ডাইরেক্টর রায়মন্ড ফিলিপ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রতিনিধি ড. এন্টন ডালহুজ, বিট্রিশ সংসদীয় দলের নেতা নরম্যান ও মিস ক্যাম্পাবেশ, ব্রিটেনের রানীর পক্ষে এমবি ডিগ্রিপ্রাপ্ত এলিজা ও তার স্বামী এলেস্তসহ সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক আবদুল মালেক চৌধুরী।
উমরা মিয়া বলেন, ‘আমি যেমনটি পেয়েছি, সে ভাবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ রেখে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। আমি প্রকৃতি ও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল হক সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, তিনি শুধুই বৃক্ষ প্রেমিক নন, একজন খাটি দেশপ্রেমিকও বটে। কলেজের প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকান্ডে তার অবদান রয়েছে। তার রোপন করা গাছ ক্যাম্পাসে এনেছে নান্দনিকতা। হয়েছে আসবাবপত্রও। তার এ মহৎ কাজে সকলে সহযোগিতা করলে তিনি আমাদের জন্যে আরো অনেক কিছু করতে পারতেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, তাহার বিষয়ে জেনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। উমরা মিয়ার মতো সাদা মনের মানুষ সমাজে বৃদ্ধি পেলে দেশ ও দশের কল্যাণ নিশ্চিত হবে।