বুধবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » ঝিনাইদহ হাসপাতালে দুর্ভোগে ৪ হাজার রোগী: ৩ দিন ধরে নেই পানি বিদ্যুৎ
ঝিনাইদহ হাসপাতালে দুর্ভোগে ৪ হাজার রোগী: ৩ দিন ধরে নেই পানি বিদ্যুৎ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ১০ ফাল্গুন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.০৬মি.)
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে। তিন দপ্তরের মধ্যে রশি টানাটানির ফলে গেল সোমবার সকাল ১০ টা থেকে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের সব ধরনের সেবা কার্যক্রম। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে অপারেশন, শিশুদের নেবুলাইজিং, পানি সরবরাহ, ইসিজি সহ অন্যান্য কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময়ের মধ্যেই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার রোগী। হাসপাতালের আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে এ বিদ্যুৎ বিভ্রাট বলে। তিন দপ্তরের মধ্যে রশি টানাটানির ফলে গত তিন দিন ধরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই।
বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও ঝিনাইদহ ওজোপাডিকো, গনপুর্ত ও হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের মধ্যে রশি টানাটানির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মোমবাতি জ্বালিয়ে ডাক্তাররা রোগী দেখছেন। তবে এ বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলতে থাকলে ভোগান্তির মাত্রা চরম পর্যায়ে দাড়াবে।
হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকার কারনে ২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকাল থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে পানি সরবরাহ। এতে করে খাবার পানি এবং টয়লেটের জন্য বাইরে থেকে পানি আনতে হচ্ছে রুগী ও রুগীর স্বজনদেরকে। তবে সব থেকে ভোগান্তির মাত্রা চরমে পৌছেছে শিশু ওয়ার্ডে। বিদ্যুৎ না থাকার দরুন হাসপাতালে সোমবার থেকেই বন্ধ রয়েছে সব ধরনের অপারেশন কার্যক্রম। হাসপাতালে ইসিজি, এক্সরে সহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা না হওয়ায় বাইরের ক্লিনিক থেকে এ কাজ চালাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে জরূরী বিভাগে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসককে। বুধবার দুপুর ১২ টার পরে সদর হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি কয়েকজন রুগীর স্বজনের সাথে। তারা জানান, আমাদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে দাড়িয়েছে ইতোমধ্যেই। বিদ্যুত না থাকার কারনে আমরা পানি পাচ্ছি না। বাইরে থেকে পানি আনতে হচ্ছে।
শিশুরা পায়খানা করলেও তার পরিষ্কারের জন্য হাসপাতালের বাইরে থেকে আমাদেরকে পানি আনতে হচ্ছে। রাতের বেলায় অন্ধকারে মশার কামড়ে টেকা যায়না। তারা আরো জানান, শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য শিশুদেরকে নেবুলাইজিং করা যাচ্ছে না। শিশুদের শীতের কারনে হিট দেওয়া যাচ্ছে না। এতে করে শিশু রুগীরা আরো বেশী অস্বুস্থ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থার দ্রুত অবসান করা প্রয়োজন। অন্যথায় হাসপাতালের প্রতি আগ্রহ কমে যাবে রুগীদের।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি এক রুগীর স্বজন জানান, এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। কখনও ঠান্ডা আবার কখনও গরম পড়ছে। এসময় বিদ্যুৎ না থাকায় খুব কষ্ট হচ্ছে। ১০ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। কিন্তু গেল ৩ দিনে হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি একাধিকবার। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বধায়ক ও সিনিয়র গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা: ইমদাদুল হক জানান, বিদ্যুৎ না থাকার কারনে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি যেন অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ গনপুর্ত বিভাগের এসডি প্রকৌশলী রেজা তাইমুর মালিক জানান, আড়াইশ বেডের নির্মান কাজ শেষে আমাদের কাছে ভবন হস্তান্তর করার পর হাসপাতালের সব দায়িত্ব আমাদের হবে। এখন বিষয়টি হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট (হিড) দেখছেন।
তিনি আরো জানান, তবে চিঠি দিয়ে যদি হিড আমাদের দায়িত্ব দেয় সেক্ষেত্রে আমরা কাজ করতে পারবো। ঝিনাইদহ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, কাজটি আমাদের নয়, হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের। তারা আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন মেরামত করে দিলেই আমরা সংযোগ দেব।
তবে বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) আব্দুর রউফ মন্ডল জানান, হাসপাতালের মত জরুরী বিভাগে ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই এটা খুবই কষ্টের ব্যাপার। বিষয়টি আমরা দ্রুতই দেখছি কেন এমনটি হল।
তবে এ ব্যাপারে যদি কারো গাফিলতি থাকে তাহলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবো না। দোষী যদি কেউ থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তি মুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, তবে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ যেন দ্রুতই স্বাভাবিক হয় সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।