মঙ্গলবার ● ২১ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে হেরাবন আস্তানায় বন বিভাগের অভিযান, আটক ৬
গাজীপুরে হেরাবন আস্তানায় বন বিভাগের অভিযান, আটক ৬
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৬ চৈত্র ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৮মি.)গাজীপুরের শ্রীপুরে দীর্ঘদিন ধরে আধ্যাতিক সাধকের আস্তানা হেরাবনের অবৈধ দখলে থাকা ১ হেক্টর বনের জমি দখলে নিয়েছে বন বিভাগ।
২০ মার্চ সোমবার ভোরে শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ফুলানীরসীট গ্রামের ওই আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বনের জমি উদ্ধার করা হয়। এ সময় কর্তব্যে বাধা দেওয়ায় হেরাবনের ৬ ভক্তকে আটক করা হয়েছে।
শিমলাপাড়া বীট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, দীর্ঘদিন ওই জমিটি জয় গুরু মনির শাহ নামের এক সাধক দখল করে রেখেছিলেন। আস্তানা গড়তে তিনি ওই বনের বিপুল সংখ্যক গাছপালা কেটে স্থাপনা তোলেন। ২০ মার্চ ভোরে বন বিভাগের নির্দেশে আস্তানার দখলে থাকা বনের জমি উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেওয়ায় ৬ ভক্তকে আটক করে গাজীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, গহিন অরণ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধ্যাতিক সাধক পরিচয়ে জয় গুরু মনিরশাহ বনের জমি দখল করে ‘হেরাবন’ নামে আস্তানা গড়েছেন। সংরক্ষিত বনের ভেতর বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক গাছ কেটে জমি দখলে নিয়ে সেখানে অনৈতিক কর্মকান্ড চলাচ্ছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ উঠে। সেই প্রেক্ষিতে সোমবার বন বিভাগ ওই আস্তানায় অভিযান চালায়। এ সময় বনের জমিতে গড়ে তোলা কয়েকটি স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়।। পরবর্তিতে ওই স্থানে বনায়নের জন্য বৃক্ষ রোপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাড়তোপা গ্রামের আসাদুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ওই বনের গহিনে জয় গুরু মনির শাহ নামে এক ব্যক্তি গাছের নিচে অবস্থান নেন। তার আচরণ আধ্যাতিক হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে বিচ্ছিন্ন ভাবে সাহায্য করতে থাকেন। এক সময় ওই গ্রামের আবু তালেবের মা জমিলা খাতুন তার আশ্রয়ের জন্য ৭ শতাংশ জমি লিখে দেন। পরে জমিতে মনির শাহ আধ্যাতিক সাধনার আস্তানা ‘হেরাবন’ গড়ে তোলেন। কিছু দিনের মধ্যে স্থানীয় ও দূর দূরান্তের অসংখ্য ভক্ত জোটে তার। এ সময় তিনি লিখে দেওয়া জমির বাইরেও বনের প্রায় ১২ বিঘা জমি দখলে নিয়ে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে আস্তানার জন্য স্থাপনা গড়ে তোলেন। কিছু অংশে প্রায় ১ হাজার আমের চারা রোপন করেন। সম্প্রতি ওই আস্তানায় মাদক সেবন, মাদক বিক্রি ও বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোব্ধ হয় এলাকাবাসী। কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানান। চলতি মাসে উপজেলা আইশৃঙ্খলা সভায় হেরাবন আস্তানার অবৈধ দখল ও মাদকসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উত্থাপন করেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন।
আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়ার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে এমন আস্তানা কিভাবে গড়ে তোলেছিল তা রহস্যময়। এলাকার সাধারন মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে পুঁজি করে মনির শাহ আস্তানা গড়ে তোলেন। তিনি আরও জানান, বন বিভাগের এই উচ্ছেদ অভিযানের প্রশংসা করেছেন স্থানীয়রা।
হেরাবন আস্তানার প্রধান সাধক জয় গুরু মনির শাহ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, বন বিভাগের জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এখানে আমার নিজ নামে জমির বাইরে থাকা স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এসময় আমার ৬ ভক্তকে আটক করে নিয়ে গেছে। মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানান, এই আস্তানায় কোন মাদক সেবন হয় না। এলাকটি মাদক মুক্ত রাখতে আস্তানা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই সচেতন।